ট্রায়াল ছাড়াই এশিয়ান গেমসের ছাড়পত্র পেয়েছেন কুস্তিগির বিনেশ ফোগট। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার অ্যাডহক কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ, গত এক বছর কোনও প্রতিযোগিতাতেই নামেননি বিনেশ। অনুশীলনও করেননি। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। সেই বিনেশকে সরাসরি সুযোগ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ আর এক কুস্তিগির অন্তিম পাঙ্ঘাল। সরাসরি অ্যাডহক কমিটির উপরে তোপ দেগেছেন তিনি। স্বচ্ছ ট্রায়ালের দাবি করেছেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অন্তিম বলেন, ‘‘গত এক বছর ধরে অনুশীলন না করার পরেও এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেয়েছে বিনেশ। আমি ২০২২ সালের জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছি। তার পরেও আমাকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে কমিটি কী চাইছে? ভারতের কুস্তি নিয়ে তারা কতটা ভাবছে?’’ গত কমনওয়েলথ গেমসের ট্রায়ালেও তাঁর প্রতি অন্যায় হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন অন্তিম। চলতি বছর সিনিয়র এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে রুপোজয়ী কুস্তিগির বলেন, ‘‘কমনওয়েলথ গেমসের ট্রায়ালেও বিনেশ আর আমার খেলা ৩-৩ শেষ হয়েছিল। কিন্তু কমনওয়েলথে বিনেশকে সুযোগ দেওয়া হল। তখনও আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছিল। তা হলে আমি কী করব? কুস্তি ছেড়ে দেব? আমি শুধু স্বচ্ছ ট্রায়াল চাই। কারণ, শুধু আমি নয়, আরও অনেকেই বিনেশকে হারাতে পারবে।’’
বিনেশ ছাড়াও বজরং পুনিয়াকে এশিয়ান গেমসের ছাড়পত্র দিয়েছে অ্যাডহক কমিটি। তবে বাকি কুস্তিগিরদের ট্রায়ালে অংশ নিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক চলছে। কুস্তিগিরদের একটি অংশের মতে, পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, জাতীয় কোচদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একক ভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। অ্যাডহক কমিটি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারতীয় কুস্তি সংস্থার নিয়ম মেনে এশিয়ান গেমসে পুরুষদের ৬৫ কেজি ও মহিলাদের ৫৩ কেজি বিভাগে দুই কুস্তিগিরকে নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু এই বিভাগে ট্রায়াল হবে। সেখানে যাঁরা জিতবেন তাঁরা স্ট্যান্ড বাই হিসাবে থাকবেন। কোন দুই কুস্তিগিরকে নির্বাচন করা হয়েছে সেই নাম বিবৃতিতে না জানালেও কমিটির সদস্য অশোক গর্গ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বজরং ও বিনেশের নাম জানিয়েছেন।
২২ ও ২৩ জুলাই দিল্লিতে এশিয়ান গেমসের জন্য কুস্তির ট্রায়াল হওয়ার কথা। তার ঠিক চার দিন আগে দুই কুস্তিগিরের নাম জানিয়েছে কমিটি। তার পরেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন দু’জনকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে? যেখানে বাকিদের ট্রায়ালে অংশ নিতে হবে সেখানে কী হিসাবে সরাসরি খেলবেন বজরং ও বিনেশ?
এশিয়ান গেমসের ট্রায়াল নিয়ে আগেই সংশয় ছিল অনেক কুস্তিগিরের। ট্রায়াল যাতে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে হয় তার জন্য সর্বভারতীয় অলিম্পিক্স সংস্থা (আইওএ), স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সাই), কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরকে চিঠি দিয়েছিলেন কয়েক জন মহিলা কুস্তিগির। তাঁদের আশঙ্কা ছিল কুস্তিকর্তা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল দেশের প্রথম সারির ছয় কুস্তিগিরকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হতে পারে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র এবং ক্রীড়ামন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘‘তিন অলিম্পিয়ান কুস্তিগিরকে বাড়তি ট্রায়ালে ছাড় দেওয়া হলে তরুণ খেলোয়াড়দের প্রতি অবিচার হবে। আমাদের মতে, দুই পর্বে ট্রায়ালের যে প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, তা যুক্তিসঙ্গত নয়। উঠতি কুস্তিগিরদের সঙ্গে তাতে অবিচার হবে। সকলকে চার থেকে পাঁচটি ম্যাচ খেলতে হবে। আর ছ’জন কেন একটি করে ম্যাচ খেলেই ছাড়পত্র পাওয়ার সুযোগ পাবে? যোগ্যতা যাচাইয়ের নিয়ম কেন এক হবে না?’’
গত ১৬ জুন এই প্রেক্ষিতে কুস্তি সংস্থার তরফে ভূপেন্দ্র সিংহ বাজওয়া জানিয়েছিলেন, দুই পর্বে ট্রায়াল হবে। প্রথম পর্বে সব কুস্তিগির ট্রায়াল দেবেন। দ্বিতীয় পর্বে নামবেন প্রতিবাদী ছয় কুস্তিগির। ছ’জনের বিভাগ আলাদা। প্রতিটি বিভাগে প্রথম পর্বের বিজয়ীর সঙ্গে ছয় কুস্তিগিরের এক জনের (যিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিযোগী) লড়াই হবে। যিনি জিতবেন তিনি এশিয়ান গেমসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। ট্রায়ালের এই পদ্ধতি মেনে নিতে পারেননি দেশের কুস্তিগিরদের একটা বড় অংশ। কেন ছ’জনকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। তার পরেও দুই কুস্তিগিরের নাম ঘোষণা করে অ্যাডহক কমিটি।