অভিষেক টেস্টে টুপিটি যশস্বী জয়সওয়াল পেয়েছিলেন রোহিত শর্মার হাতে। বুধবার টুপি পেয়েছিলেন রোহিতের হাত থেকে। বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধে শতরান করলেন যশস্বী। অভিষেক টেস্টে শতরান। এর আগে রোহিতও অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন। ৩৬ বছরের রোহিত দেখলেন ২১ বছরের তরুণ ওপেনার অভিষেক টেস্টে শতরান করছেন। আর তিনি উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে বাহবা দিচ্ছেন। তাঁদের দু’জনের শতরানেই ভারত লিড নিয়ে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারত এগিয়ে ১৬২ রানে।
এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দলের পক্ষে ভারতকে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলা তো দূর কোনও প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব বলেও মনে হচ্ছে না। ক্যারিবিয়ান দলের ন’জন ক্রিকেটার বল করেছেন। ওপেনার ত্যাগনারাইন চন্দ্রপল এবং উইকেটরক্ষক জসুয়া দ্য সিলভা শুধু বল করেননি। ন’জন মিলেও ভারতের ব্যাটারদের কোনও রকম সমস্যা তৈরি করতে পারেননি। দুই ওপেনার শুভমন এবং রোহিত ২২৯ রানের জুটি গড়েন। ২০০২ সালের পর এটাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মাটিতে ভারতের সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি। আগেরটি ছিল সঞ্জয় বাঙ্গার এবং বীরেন্দ্র সহবাগের (২০২)। রোহিতদের জুটিতেই ভারত ৭৯ রানের লিড পেয়ে যায়।
রোহিত এর মধ্যে টেস্টে ৩৫০০ রানের গণ্ডি পার করেন। দশম শতরান করেন। কিন্তু তার পরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা অ্যালিক আথানেজের নির্বিষ বলে রক্ষণ করতে গিয়ে গ্লাভসে লাগান। সেই বল একটু উঠে পাশেই পড়ছিল। কিন্তু উইকেটের পিছন জসুয়া লাফিয়ে এসে ক্যাচ ধরে নেন। ১০৩ রান করে ফিরতে হয় রোহিতকে।
অন্য ওপেনার যশস্বী যদিও কোনও ভুল করার দিকে পা দিচ্ছেন না। তিনি ১৭তম ভারতীয় ব্যাটার যিনি অভিষেক টেস্টে শতরান করলেন। ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম এই কীর্তি গড়েছিলেন লালা অমরনাথ। ১৯৩৩ সালে তিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজের প্রথম ম্যাচে শতরান করেছিলেন। এর পর একাধিক ক্রিকেটার নিজের প্রথম টেস্টে শতরান করেছেন। তাঁদের মধ্যে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র সহবাগ, সুরেশ রায়না, শিখর ধাওয়ানেরা রয়েছেন। ২০২১ সালে অভিষেক হয় শ্রেয়স আয়ারের। তিনিই শেষ ভারতীয় যিনি অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন। তার আগে ২০১৮ সালে পৃথ্বী শ অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নজর কেড়েছিলেন যশস্বী। এর পর ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আইপিএলে ভাল খেলে ভারতীয় দলে নিজের জায়গা করেছেন। চেতেশ্বর পুজারা ফর্ম হারিয়েছেন। রান পাচ্ছেন না। তাঁকে বাদ দিয়ে যশস্বীকে দলে নিয়েছে ভারত। তবে পুজারার মতো তিন নম্বরে নয়, যশস্বীকে ওপেন করতে পাঠানো হয়েছে। নিজের পছন্দের জায়গা পেয়েছেন ২১ বছরের ওপেনার। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। সহজে নিজের উইকেট দিয়ে আসার মতো কোনও লক্ষণ তাঁর মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। কঠিন পরিশ্রম করে ভারতীয় দলে জায়গা পেয়েছেন যশস্বী। ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া তাঁর কাছে ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্নপূরণ করে শতরানও করে ফেলেছেন। এখন আরও বড় লক্ষ্য হয়তো ঠিক করে ফেলেছেন নিজের জন্য।
যশস্বীর জন্য নিজের ওপেনিং জায়গাটি ছেড়ে দিয়েছিলেন শুভমন গিল। টেস্ট শুরুর দিন তিনি বলেন, “ভারত এ দলের হয়ে আমি তিন এবং চার নম্বরে ব্যাট করতাম। আমি ওই জায়গাতেই ব্যাট করতে চাই। ওপেনার হিসাবে নতুন বলে খেলার অভ্যেস রয়েছে। সেটা তিন নম্বরে ব্যাট করার সময় কাজে লাগবে। ওপেনিং এবং তিন নম্বরে ব্যাট করা এক নয় জানি, তবে খুব একটা আলাদাও নয়।” কিন্তু বৃহস্পতিবার রোহিত আউট হওয়ার পর মাঠে নেমে মাত্র ১১টি বল খেলেই আউট হয়ে যান শুভমন। ছ’রান করলেন তিনি। জমেল ওয়ারিকানের বলে ক্যাচ তুলে দেন সেকন্ড স্লিপে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দলের বোলার ক্লান্ত। তাঁদের হাতে কোনও রিভিউ আর বাকি নেই। সেটার খেসারৎও দিতে হয়েছে বৃহস্পতিবার। কেমার রোচের বলে এলবিডব্লিউ-র আবেদন করেছিল ক্যারিবিয়ান শিবির। সেই সময় ব্যাট করছিলেন যশস্বী। আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউ তত ক্ষণে শেষ করে ফেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেল যশস্বী আউট ছিলেন। মাঠের বড় স্ক্রিনে সেই রিপ্লে দেখে গোটা ক্যারিবিয়ান দলটি আরও ভেঙে পড়ে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের খেলা দেখে মনে হচ্ছে না এই ম্যাচে তাদের পক্ষে আর ফেরা সম্ভব। ক্রমে ম্যাচ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তারা। ভারত বড় রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে ব্যাট করতে পাঠাবে। সেই রান তুললেও ভারতের কাছে শেষ ইনিংসে রান তুলে নেওয়ার সুযোগ থাকছে। কিন্তু পিচে দ্বিতীয় দিন থেকেই ধুলো উড়তে দেখা যাচ্ছে। সাজঘরে বসে থাকা রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাডেজাও সেটা দেখছেন। বল করতে নেমে তাঁরা যদি ধুলোর ঝড় তোলেন, তাহলে অবাক হওয়ার থাকবে না। সেই ঝড় ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ব্যাটারেরা সামলাতে পারবে তো?