সুনীল তখন স্কুলে পড়েন। ক্রিকেট ব্যাটের সঙ্গে ফেভিকলের মতো সম্পর্ক পাতিয়ে নিয়েছেন তখনই! মাধব আঙ্কেলের বাড়িতে গেলেই ঢুকে পড়েন তাঁর খেলার সামগ্রীর রুমে। তন্ময় হয়ে নাড়াচাড়া করেন ব্যবহৃত ইন্ডিয়ান ক্যাপ নিয়ে, ইন্ডিয়ান পুলওভারে হাত বুলিয়ে তৃপ্তি পান। একদিন বায়নাটা করেই বসেন মাধব মন্ত্রীর কাছে!
— আঙ্কেল, তোমার কাছে তো অনেকগুলো ইন্ডিয়ান ক্যাপ আর পুলওভার আছে। আমাকে একটা দেবে?
উনি উত্তর দেন, “এগুলো উপহারের সামগ্রী নয়। অর্জনের জিনিস…. চেষ্টা করো এগুলো অর্জনের , তুমিও পারবে…. হয়ত বেশিই…”
মাধব আঙ্কেল সেদিন যদি আব্দার মিটিয়ে দিতেন ; ভারত তথা বিশ্ব সর্বকালের সেরা টেস্ট ওপেনারকে হয়ত পেতই না…. অবসর গ্রহণের পঁয়ত্রিশ বছরের পরও সুনীলের সম্মান, ক্রিকেটপ্রজ্ঞা অটুট। হেলমেট ছাড়া যিনি বিশ্বত্রাস মার্শাল,হোল্ডিং,রবার্টস,গার্নারদের শাসন করে দেখিয়েছিলেন সেই মানুষটা তো একটু অন্য ধাতুতে গড়া! এই অন্য ধাতু বলেই সুনীল সবসময় প্রতিকূল পরিবেশেও অনুকূল সিদ্ধান্ত বা পারদর্শীতা দেখাতে পেরেছেন — সেটা আগুনে পেস বোলিং হোক আর বিবাহ বন্ধন ই হোক !
কুখ্যাত “সামার অফ ফর্টি টু” মানে, চুয়াত্তরের সেই ঐতিহাসিক লজ্জা — ওয়াদেকারের ভারত বিয়াল্লিশে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে । সিরিজের সব কটি ম্যাচেই ধরাশয়ী হওয়া ভারতের জন্য দেশে ফিরে যে কোন ফুলেল অভ্যর্ত্থনা ছিল না সেটা বলাই বাহুল্য! সমালোচনায় কচুকাটা হওয়া অধিনায়ক ওয়াদেকার অবসর নিতে বাধ্য হন। আর, একাত্তরের স্মরণীয় জয়ের ( ও: ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে – সুনীলের অভিষেকের বছরে ) যে বিজয়-স্মারক তৈরি করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড, জনগণের যত আক্রোশ ওটার ওপর আছড়ে পড়ে : আলকাতরা মাখিয়ে,ভেঙে ধিক্কার জানানো হয় ।
যাই হোক, ঐ অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে গাভাস্কার বিয়েটা সেরে ফেললেন!
কোর্টশিপ চলছিল একবছর ধরেই — উঠতি সুপারস্টার সুনীল গাভাস্কারের কাছে অটোগ্রাফ নিতে গিয়েছিলেন মারশেনিল …. ঐ যাকে বলে “লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট” , ওটাই হয়েছিল দুজনের ! সামার অফ ফর্টি টু কে পিছনে ফেলে শুরু করেন নতুন ইনিংসের গোড়াপত্তন – জুটি : সুনীল-মারশেনিল……
“সুনীল ৭৪”
©সুদীপ্ত চ্যাটার্জী
Sudipta Chatterjee
Dolanchampa Dasgupta