বামফ্রন্ট রাজত্বে ক্যাডাররাজ একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল। বাড়িওয়ালা ভাড়াটে সমস্যা, পার্টি অফিসে দৌড়াও, বাড়িতে চুরি হয়েছে পুলিশে ডায়েরি করতে হবে – এল সি এস এর চিঠি লাগবে, জমাদার রাস্তা পরিস্কার করছে না, পাড়ার ব্র্যাঞ্চ সেক্রেটারিকে জানাও । আর এই সবের সঙ্গে বাড়তি সংযোজন ছিল লেভি। লেভিটা আসলে আপনার নজরানা , বাম গণতান্ত্রিক রাজ্যে বসবাসের । প্রতি রবিবার সন্ধ্যেবেলা নিয়ম করে বাড়িতে টোকা, কাস্তে হাতুড়ি আঁকা ৫/- লেখা দু চারটে স্লিপ হাতে । দিতেই হবে! তারপর ছিল বুর্জোয়া মিথ্যে খবরের কাগজ পড়ে যদি আপনার চিত্তবৈকল্য ঘটে , যদি জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের পথ থেকে সরে যান — তা আটকাতে জোর করে গণশক্তি গছিয়ে দেওয়া ।
এইটুকুর ওপর দিয়ে যন্ত্রণা চলে গেলে হত, কিন্তু না , এর পরের এপিসোডগুলো আরো ভয়াল । বাড়ি করবেন বলে মনস্থির করেছেন ! পার্টি অফিসে যেতে হবে। কে ইঁট দেবে কে বালি দেবে সব কমরেডরাই ঠিক করে দেবে, আপনার পছন্দমতো জিনিসপত্র কিছুই কিনতে পারবেন না। বাড়ীতে কেবল কানেকশন নেবেন , তাতেও আপনার নিয়ন্ত্রন নেই । ঠিক করবে পার্টি অফিস ।
এতেই শেষ নয় । এরপরেও অনুদান পাঠাতে হত পার্টি অফিসে। সেই অনুদানের টাকায় কত শত কর্মসংস্থান হত তার ইয়ত্তা নেই । এবার ধরুন আপনি জমি ফাঁকা রেখেছেন? হাতে টাকা নেই, পরে বাড়ি করবেন? ক্যাডারে জমি বেহাত করবে, তারপরে মেজ নেতা বড় নেতা ধরেও লাভ নেই। এতো গেলো শিক্ষিত শহুরে সমাজে ভূমি সংস্কারের বাস্তব প্রয়োগ ।
গ্রামের অল্পশিক্ষিত সমাজের অবস্থা ছিল আরো করুন । ভূমি সংস্কার হয়েছে, অতএব পাট্টা বিলি করা হবে পার্টি অফিস থেকে । গফুর মিঞা কিংবা রামধন মাঝি জমি পাবে কি না তা ঠিক হবে দলের প্রতি আনুগত্য থেকে ।
কলকারখানার মজুর যারা তারা মিছিল মিটিং বিক্ষোভ সবই করছেন, কারন ইউনিয়নের দাদারা বলেছেন মেহনতি মানুষের হাতে ক্ষমতা চাই । এরপর শুরু লাগাতার হরতাল। তারপরে কারখানা লকআউট। বেচারা শ্রমিক জানলোই না যে বাম নেতাদের পকেটে কয়েক কোটি টাকা ঢুকে গিয়ে কারখানাটি চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল । এবার ঐ পরিবারের দারিদ্রতাকে মূলধন করে আবার বাম সংগ্রাম শুরু ।
এই সমাজ ব্যবস্থা সিপিএম তৃণমূল কে দিয়ে গিয়েছে । মমতার তো আর বাংলাকে গড়ে তোলার দূরদৃষ্টি ছিল না ফলে সিপিএম তাড়ানো ছাড়া তৃনমূলের আর কোনো এজেন্ডা ছিল না , ছিল না আর কোন প্রতিশ্রুতিও । তাই তৃণমূলও একই জিনিস করবে , এটাই স্বাভাবিক । মমতার সিপিএমকে উৎখাত করার স্বপ্ন ছিল। করেছেন। আর সেটি যথেষ্ট পারদর্শিতার সঙ্গেই করেছেন । বামেদের মত নরকের কীটগুলোর জন্য মমতা ব্যানার্জী ছিলেন সবচেয়ে বড় অ্যান্টিডোট । মনে রাখবেন সিপিএম কিন্তু আপনার সমাজ সংস্কৃতি সব কিছুই ধ্বংস করে দেয় । তৃণমূল কিন্তু কখনো সেটা করার প্রয়াস করবে না ।
তৃনমূল দলটার কোন Vision নেই । ন্যুনতম সরকার চালানোর পারদর্শিতা নেই । একটা পরীক্ষা ঠিকঠাক নেওয়ার দক্ষতা নেই । এরা হচ্ছে basically bunch of hoodlums যারা গর্ভনেন্সই বোঝে না , বোঝার দরকারই পড়ে না । এদের পক্ষে গঠনমূলক কিছু করাই সম্ভব নয় । একটা জিনিস বুঝতে হবে যে তৃণমূল দলটা কিন্তু কেউ করে না — এখনো লোক কে চিহ্নিত করে বলা যায় যে এই লোকটি বামপন্থী দল করে বা করত কিংবা এই লোকটি বিজেপি করে বা করত । ……. অন্যদিকে তৃণমূল দলটা হচ্ছে সমস্ত ধান্দাবাজ দুর্নীতিগ্রস্তের মিলনস্থল । ক্ষমতা আছে বলে ও নিজেদের স্বার্থের জন্য সবাই এক জায়গায় হয়েছে । কেউ কারোর নয় । কোন মতাদর্শের জন্য নয় । এখন শুধু লক্ষ্য রাখার যে এই অরাজকতার গর্ভ যন্ত্রনা রাজ্যবাসীকে কতদিন সহ্য করতে হয় ।
দুঃখের এটাই যখন সারা ভারতবর্ষ থেকে Totalitarianism দূরে সরে যাচ্ছে তখন আশ্চর্যজনকভাবে পশ্চিমবঙ্গে তা আরও জাঁকিয়ে বসছে ।
লিখেছেন
সৌভিক রাতুল বসু