একদা সহযোদ্ধা বর্তমানে যুযুধান দুই প্রবীন রাজনীতিকের লড়াইয়ে জমে উঠেছে বাঁকুড়া জেলার মেজিয়া শিল্পাঞ্চলে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের ৭ নং আসনের এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী একসময় ছিলেন দুই মেরুর রাজনৈতিক দলের নেতা। মাঝখানে ছিলেন একই রাজনৈতিক দলের সহযোদ্ধা। বর্তমানে ফের দুই মেরুতে অবস্থান।
একজন হলেন ভারতীয় জনতা পার্টির অশতিপর নেতা অরুণ বাজপাই, অন্যজন হলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা তথা দলের জেলা সহ-সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী। রাজনৈতিক ভাবে তাদের সম্পর্ক অহি- নকুলের হলেও অরুণ বাজপাইয়ের অত্যন্ত স্নেহভাজন হলেন তার চাইতে রাজনৈতিক ও বয়স দুই ক্ষেত্রেই কিছুটা ছোটো প্রদীপ চক্রবর্তী। অন্যদিকে অরুণ বাজপাইয়ের প্রতি আদ্যন্ত শ্রদ্ধাশীল প্রদীপবাবুও। কিন্তু নির্বাচনের ময়দানে “বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্ৰ মেদিনী” মনোভাব দুজনের। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ। তাদের নির্বাচনী প্রচারেও বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুকে তুলে ধরছেন দুই প্রতিপক্ষ।
বিজেপি প্রার্থী অরুন বাজপাই তৃণমূল সরকার ও তার নেতাদের দুর্নীতির পাশাপাশি জেলার হাতি সমস্যাকে তুলে ধরছেন। তিনি বলেন, তার জ্ঞান হবার পর থেকে কংগ্রেস রাজনীতির প্রতি বিদ্বেষ জন্ম নেয়। তাই ১৯৬৬ সালে অজয় মুখার্জির হাত ধরে বাংলা কংগ্রেসে যোগ দিয়ে রাজনীতে হাতেখড়ি নেন। তার উপলব্ধি হয় কংগ্রেস ও বাংলা কংগ্রেস একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। ১৯৬৮ সালে সিপিআইএম দলের সদস্য পদ নেন। সত্তরের দশকে তিনি জেলার সংগঠনের দায়িত্ব নিয়ে সারা জেলা চষে বেড়ান। জরুরি অবস্থার সময় তিনি মিসা আইনে কারারুদ্ধ হন। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে তিনি মুক্তি পান। ১৯৭৮ সালে প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্টের হয়ে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি জেলার কমিউনিস্ট রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। বামফ্রন্টের মধ্য গগনে এ হেন অরুণবাবুকে দল বহিস্কার করলে তিনি সিপিআই দলে যোগ দেন। সেখান থেকে তিনি বিতাড়িত হয়ে কংগ্রেসে যোগদান করেন। তারপর তিনি প্রদীপ চক্রবর্তীর দলে যোগ দিয়ে বেশ কিছুদিন তার সহকর্মী হিসাবে কাজ করে ২০১৬ বিধানসভার টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে যোগ দেন।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না দিলেও এই প্রবীন নেতাকে ৭ নং আসনে জেলা পরিষদের টিকিট দেয় বিজেপি। অরুণবাবু বলেন, তিনি ৬ দশক ধরে রাজনীতির সাথে ঘর করছেন। গোটা জেলার মানচিত্র তার মুখস্থ। ভোটে লড়ে জয়ী হবার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। সেইসঙ্গে তৃনমূলের দুর্নীতি ও জেলার হাতি সমস্যা নিয়ে তার এলাকার ভোটাররা জেরবার ।এর থেকে নিস্তার পেতে তাকেই ভোট দেবেন মানুষ। তিনি জয়ের ব্যপারে ১০০ শতাংশ আশাবাদী।
অন্যদিকে সত্তর দশকের উত্তাল সময়ের ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা তৃনমূলের বর্ষীয়ান নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী কংগ্রেসের ছাত্র নেতা ছিলেন। পরবর্তী কালে তৎকালীন জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রয়াত শুধাংসুশেখর তেওয়ারি ও শিক্ষক নেতা প্রয়াত দীপক কুমার অগ্নিহোত্রীর হাতে গড়া রাজনীতিবিদ তিনি। তিনি বলেন মোদী দেশের জাতীয় সম্পদ বিক্রির চক্রান্ত ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৬৮টি জনমুখি প্রকল্পই তার প্রচারের হাতিয়ার। তিনি তার প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলেন উনার মত দল বদলুকে জেলার মানুষ ওনাকে গিরগিটির সঙ্গে তুলনা করেন। আমি কংগ্রেসে ছিলাম। শুধাংসুশেখর তেওয়ারির হাতধরে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে তৃণমূলে এসেছি। ওনার মত দল পাল্টানোর কথা ভাবিনি। দীর্ঘদিন জেলা তৃণমূলের ব্লক সভাপতির দায়িত্ব সামলে ২০২১ সালে দলের জেলা সহ-সভাপতি। ৫০ বছরের বেশি তিনিও রাজনীতির হোলটাইমার। সারা বছর মানুষের সঙ্গে আছেন দাবি করেনপ্রদীপবাবু। এই আসনে বিজেপি ও সিপিএমের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।