WB Panchayat Election 2023: ফের ভোটের বলি, সাতসকালে মহম্মদবাজারে রাস্তায় মিলল বিজেপি কর্মীর মৃতদেহ

পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারের আজ শেষ দিন। এরমধ্যেই ফের ভোটের বলি আরও একজন। বীরভূমের মহম্মদবাজারের সেরেন্ডা গ্রামে মিলল বিজেপির বুথ সহ-সভাপতির মৃতদেহ। নিহত বিজেপি কর্মীর স্ত্রী বিজেপির হয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। কিন্তু তিনি প্রতীক পাননি ও মনোনয়ন প্রত্যাহারও করেননি। ফলে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। আজ সকালে দিলীপ মাহারা নামে ওই বিজেপি কর্মীর মৃতদেহ রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখেন এলাকার মানুষজন। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ তৃণমূলের লোকজনই দিলীপ মাহারাকে খুন করেছে।

গতকাল রাত থেকেই নিখোঁজ ছিলেন দিলীপ মাহারা। সকালে মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার পর দেখা যায় দিলীপের দেহের একাধিক জায়গায় আঘাত রয়েছে। গলায় দাগ রয়েছে। একইসঙ্গে মৃতদেহের পাশে একটি গুলির খোলও পড়ে থাকতে দেখা যায়। মাথায় কোনও ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে কারণ মৃতের কান দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। প্রাথমিক অনুমান শ্বাসরোধ করেই মারা হয়েছে দিলীপকে। এনিয়ে ঘটনাস্থলে জড়ো হয়েছে প্রচুর লোকজন। পরিবারের দাবি, মনোনয়ন মা দেওয়ার পর থেকেই তাদের প্রচুর হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।

ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া এক গ্রামবাসী বলেন, মহম্মদবাজারের ২২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী ছবি মাহারা। তাঁর স্বামী দিলীপ মাহারা ছিলে বুথ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাকে চক্রান্ত করে মেরেছে তৃণমূল। মহম্মদবাজার থানার মেজোবাবু সকালে সিভিল ড্রেসে এসে পড়ে থাকা গুলির খোলটি পকেটে পুরে নেন প্রমাণ লোপাটের জন্য। দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য নিহতের স্ত্রীর কাছ থেকে চিপ সই নেওয়ারও চেষ্টা করছিলেন। এরা সব তৃণণূলের পা চাটা লোক। গতকাল দিলীপ মাহারা ২২৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার করতে গিয়েছিল। সেই রাগেই দিলীপকে খুন করা হয়েছে। ভোট আসলেই তৃণমূল মার্ডার করে, আতঙ্ক ছড়িয়ে ভোট করে। এই খুনের তদন্তে হোক। সিবিআই তদন্ত হলে ভালো হয়। তা না হলে তৃণমূল সব প্রমাণ লোপাট করে দেবে। 

নিহতের স্ত্রী ছবি মাহারা বলেন, গতকাল বিকেল সাড়ে চারটের সময়ে ও বাড়িতে ছিল। তার পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি। রাত আটটার সময় যখন ফোন করছি তখন আর ওকে পাচ্ছিলাম না। সকালে খবর পড়লাম রাস্তার উপরে পড়ে রয়েছে ওর লাশ। আমাদের সন্দেহ বিজেপি করি বলেই তৃণমূলের লোকজন এই কাজ করেছে।

মৃতের ছেলে বলেন, বাবা একটু বেরিয়েছিল। রাত নটা পর্যন্ত না ফেরায় ওঁর খোঁজ শুরু করি। কিন্তু কোনও খোঁজ পাইনি। কালীর লোকেরাই ওকে মার্ডার করিয়ে দিয়েছে। আমার মা বিজেপির প্রার্থী। নমিনেশন তুলে নেওয়ার কথা ছিল। আমরা তুলিনি। তাই বাবাকে খুন করা হয়েছে। সকালে ওর দেহ খুঁজে পেয়েছি। 

বিজেপির মহম্মদবাজার মণ্ডলের সভাপতি পিনাকী মণ্ডল বলেন, সকালে খবর পেলাম দিলীপ মাহারা মারা গিয়েছে। ও ছিল বুথের ভাইস প্রেসিডেন্ট । গোটা দেহে আঘাতের দাগ রয়েছে, কান দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। দেহের পাশে গুলির খোল পড়ে রয়েছে। মেজবাবু গুলিটা প্রথম নিয়ে নিয়েছিল। গ্রামবাসীদের চাপে পরে গুলি ফেরত দিয়ে দেন। খবর পাচ্ছি রাতে ওই ঘচনা ঘটেছে। এনিয়ে আমরা কেন্দ্রীয় তদন্ত চাই।

ওই ঘটনা নিয়ে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ঠিক কী হয়েছে জানি না। আম জলপাইগুড়িতে রয়েছি। কিন্তু জলপাইগুড়িতে আমাদের জেলা প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে। হাসপাতালে ছিলেন। আজ সকালেই বাড়ি ফিরেছেন। আমি আগেই বলেছিলাম সময় যত এগোবে রাজ্যের পরিস্থিতি ততই অশান্ত হবে। পুলিস বা নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কোনও উদ্যোগ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।

অন্যদিকে, ওই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, নির্বাচনের দিন ঘোষণা থেকে এখনওপর্যন্ত যদি আক্রান্ত ও নিহতের সংখ্যা দেখেন তাহলে দেখবেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের সংখ্যাটাই সবচেয়ে বেশি। কারণ তৃণমূল কংগ্রেস শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। রাজ্যের ৫-৬ ব্লক ছাড়া হিংসার তেমন কোনও ঘটনা নেই। এরকম অবস্থায় বিরোধীরা হিংসার আশ্রয় নিচ্ছে। আজ যা ঘটেছে তার সঙ্গে নির্বাচনকে জুড়ে দেওয়াটা ঠিক নয়। আজ জানতে হবে ওখানে কী হচ্ছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.