আজও কলকাতাই ‘মক্কা’, সুনীলদের পাশে থেকে প্রমাণ করবে ষাট হাজারি শব্দব্রহ্ম

ঘন্টা দেড়েক বাদেই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রি-ওয়ার্ল্ডকাপ কোয়ালিফায়ার পর্বের ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ। যা নিয়ে বাংলা তথা গোটা ভারতের ফুটবল সমর্থকদের উৎসাহ তুঙ্গে। কে জিতবে কে হারবে তা নিয়ে পাতার পর পাতা লেখা চলছে গত এক সপ্তাহ ধরে। সঙ্গত কারণেই সুনীল ছেত্রীকে নিয়ে খরচ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি নিউজপ্রিন্ট, পেছন পেছন আছেন দীর্ঘদেহী দুরন্ত গোলকিপার গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু। কাতার ম্যাচে গর্বের ইতিহাস রচনা সম্ভব হয়েছিল যাঁর সৌজন্য। এদিকে কোচ ইগর স্তিমাচ আবার মাঠের বাইরে সাংবাদিক সম্মেলনে চমকে দিয়েছেন বাংলা বলে। সব মিলিয়ে ভারতীয় ফুটবলকে এতখানি ঝলমলে শেষ কবে লেগেছিল তা মনে করতে পড়ছেন না বিশেষজ্ঞেরাও।

ঠিক এই বিষয়টাকে নিয়েই হয়তো এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ভাবা দরকার। মানে এই ঝলমলে ব্যাপারটা বজায় রাখতে হবে। কারা রাখবে? সে দায়িত্ব এদেশের ফুটবল প্রশাসকদের। আসলে ভারতীয় ফুটবলের এই উজ্জ্বল পর্বটাকে কাজে লাগাতে পারলে হয়তো এদেশের ফুটবল সংস্কৃতিতে প্রয়োজনীয় বদল আনা সম্ভব হবে! নচেত ভেবে দেখুন, সল্টলেকের সবুজ ঘাসে ভারতের আজকের প্রতিপক্ষ একেবারেই বড় টিম নয়। বর্তমানে ফিফা র‍্যাঙ্কিং-এ ভারতের থেকে ৮৭ ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ। যাদের সঙ্গে সাফ কাপে বছর ঘুরলেই দেখা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভারতই জেতে। যদিও শেষ দুই ম্যাচে ড্র হয়েছে ফলাফল। তথাপি যে যে যে কারণে এদেশের মাঠে ফুটবলে দর্শকের ভিড় হয় তার সঙ্গে আজকের অংক মিলছে না। কারণ আজ ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান দ্বৈরথ না, বিদেশি ফুটবলার ভর্তি টুর্নামেন্ট আইএসএল ম্যাচও নয় । জাপান, কোরিয়া, ইরান, ইরাকের মতো এশিয়ার সুপার পাওয়ার টিমের সঙ্গেও খেলা আছে, তাও না। তবু টিকিটের জন্য হাহাকার! সত্যি বলতে জাতীয় ফুটবল দলকে নিয়ে এমন উৎসাহ, উত্তেজনা বিরল। এতক্ষণে জানা, দমদম বিমানবন্দরে শুভাশিস বসু, প্রীতম কোটালরা যখন নামেন, তখন সেখানে তাঁদের স্বাগত জানাতে হাজির হ্ন হাজার খানেক সমর্থক। প্র্যাকটিস মাঠেও ভিড় জমান তাঁরা। বাংলাদেশ কোচ ও অধিনায়ক তো প্রথম থেকে বলেই আসছেন, দুটো ভয়, প্রথম ভয়—সুনীল ছেত্রী, আর দ্বিতীয় ভয়ের কারণ ৬০ হাজার দর্শক চিৎকার!

ভারতীয় হিসেবে তো বটেই, তদুপরি ফুটবল প্রিয় বাংলা তথা বাঙালির জন্যও কম গর্বের নয় মঙ্গলবারের মেগা ইভেন্টটি। যেমন ধরুন, কোচ ইগর এবং তাঁর খেলোয়াড়েরা প্রথম থেকে বলছেন, কলকাতার দর্শকের সামনে খেলতে মুখিয়ে আছে গোটা টিম। যেহেতু ভারতীয় ফুটবলের মক্কায় স্টেডিয়াম ভরবেই। সেই প্যাশানেট আবেগ, উন্মাদনাকে মাঠে নামার আগেই কুর্নিশ জানাচ্ছেন সুনীল থেকে গুরপ্রীত। অথচ কেন যেন আট বছর পর জাতীয় দলের খেলা হচ্ছে যুবভারতীতে! গত আট বছর যুবভারতীতে খেলা না দেওয়ার কারণ কী? এই জটিল প্রশ্ন নিয়ে এখনই তর্ক না তুলেও বলা যায়, কলকাতায় খেলা হলে ভারতীয় ফুটবলের পক্ষেই লাভজনক হবে। সবাই জানে, যে খেলার সমর্থক নেই, সে খেলা আদতে মৃত। আর এদেশে কলকাতা, গোয়া, কেরল, পাঞ্জাব ও উত্তরপূর্ব ভারত হল রাইট ডেস্টিনেশন ফর ফুটবল। অতএব, দেশের এই কেন্দ্রগুলিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলা দেওয়ার কথা ভাবা উচিত এআইএফএফ-এর। গোটা নয়ের দশেক জুড়ে যে কাজ করেছিল এদেশের ক্রিকেট প্রশাসকেরা, যেখানে ক্রিকেট দর্শক বেশি সেখানেই খেলা ফেলেছিল জগমোহন ডালমিয়ারা। সুদে আসলে আজ তার ফল পাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট।

আরেকটা কথা, যাঁরা পিকে-চুনিদের, সুধীর-সুরজিৎদের আমলের কথা টেনে বলেন আজকের ভারতীয় ফুটবলে বাঙালি কোথায়? তাদের বলি, বর্তমান ভারতীয় দলে কিন্তু তিনজন নিয়মিত বাঙালি রয়েছেন। তাঁরা হল প্রিতম কোটাল, শুভাশিস বসু ও প্রণয় হালাদার। প্রণয় চোটের কারণে টিমের বাইরে। অন্য দুজনকে নিয়ে উচ্ছসিত আগের স্টিভেন কনস্টাইনের মতোই এখনকার কোচ ইগর স্তিমাচ। ওদের কাছ থেকে আজও ভালো কিছুই আশা করছে বাংলা তথা গোটা দেশ। আর শুভাশিস, প্রিতমের একজন যদি গোল করে দেশকে জিতিয়ে দেয়…!


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.