ভারতের উন্নতি হলে উন্নতি হবে সমগ্র বিশ্বের। বৃহস্পতিবার আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে মন্তব্য দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তিন দিনের আমেরিকা সফরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার সকালে দিল্লি থেকে তাঁর বিমান আমেরিকার উদ্দেশে পাড়ি দেয়। আমেরিকান কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বাইডেন সরকার। বৃহস্পতিবার সেই মঞ্চেই ভাষণ দিতে দেখা গেল তাঁকে। গাইতে শোনা গেল ভারতের উন্নতি এবং আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের জয়গান। যৌথ অধিবেশনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মোদী গণতন্ত্র নিয়েও কথা বলেন। জানান, মনুষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যায় গণতন্ত্রের চেতনা থেকে। গণতন্ত্রের ধারণা বিশ্বের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।
আমেরিকার কংগ্রেসে বক্তৃতা করার সময় মোদী বলেন, ‘‘সাত বছর আগেও আমি এখানে দাঁড়িয়েছিলাম। গত সাত বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমরা যুগের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। নতুন সময়ের বিষয়টি মাথায় রেখে ভারতের হয়ে কথা বলতে এসেছি।’’
মোদী যোগ করেন, ‘‘আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ভারত বন্ধুত্বের পরীক্ষায় সফল হয়েছে। আরও গভীর হয়েছে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে বন্ধুত্ব। এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম মেধা)-এর যুগে, এটি আরেকটি এআই (আমেরিকা-ইন্ডিয়া)। ২০১৬ সালে আমি বলে গিয়েছিলাম, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে দু’দেশের সম্পর্ক ঠিক রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সেই ভবিষ্যৎ আমাদের সামনে রয়েছে।’’
ভারতীয় অর্থনীতির উন্নতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম আমেরিকা এসেছিলাম, তখন বিশ্বে দরবারে ভারতের অর্থনীতি ছিল দশম স্থানে। আজ ভারত পঞ্চম স্থানে দাঁড়িয়ে। খুব শীঘ্রই ভারত তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। ভারতের যখন উন্নতি হয়, তখন সারা বিশ্বের উন্নতি হয়।’’ তবে মোদী স্পষ্ট করেছেন, পরিবেশ এবং বিশ্বের প্রতি দায়িত্বশীল থেকেই ভারতের অগ্রগতি হচ্ছে। কোনও ভাবেই পরিবেশের ক্ষতির বিনিময়ে উন্নতির সমর্থন করে না ভারত। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত বিশ্বের প্রতি দায়িত্বশীল। ভারতীয় সংস্কৃতি গভীরভাবে পরিবেশ এবং আমাদের গ্রহকে সম্মান করে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সমগ্র গ্রহের উন্নতি এবং সমৃদ্ধির পক্ষে।’’
এর পাশাপাশি আমেরিকা কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘৯/১১ হামলার দুই দশক এবং মুম্বইয়ে ২৬/১১ হামলার এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু উগ্রপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদ এখনও বিশ্বের কাছে বড় সমস্যা। সন্ত্রাসবাদী মতাদর্শ নতুন নতুন পরিচয় নিতে থাকে এবং তাদের উদ্দেশ্য একই থাকে। সন্ত্রাসবাদ মানবতার শত্রু এবং এর সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে কোনও ‘কিন্তু’ থাকতে পারে না।’’
যুদ্ধবিরোধী নীতির কথাও উঠে এসেছে মোদীর বক্তৃতায়। তিনি জানান, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সঙ্ঘাতের কারণে ইউরোপের মাটিতে আবার যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এতে বহু মানুষ চরম দুর্ভোগ এবং যন্ত্রণার মুখোমুখি হচ্ছেন। যেহেতু বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলি এর সঙ্গে জড়িত, তাই এর পরিণতি ভয়ঙ্কর বলেও মন্তব্য করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এই যুগ যুদ্ধের নয়। এটা সংলাপ ও কূটনীতির যুগ।’’
বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্তরে ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। ভারত, আমেরিকা থেকে শুরু করে চিন— সকলেরই নজর রয়েছে এই অঞ্চলে। এই অঞ্চলে কৌশলগত ক্ষমতা দখলে রাখার প্রধান কারণ—বিশ্বের আটটি প্রধান তেল এবং গ্যাসের ভান্ডারের মধ্যে তিনটি এই অঞ্চলে রয়েছে। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার এই অঞ্চলের কথাও উঠে এল মোদীর বক্তৃতায়। তিনি বলেন, ‘‘স্বার্থ এবং সংঘর্ষের কালো মেঘ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ছেয়ে ফেলেছে। এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ভারত এবং আমেরিকার অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হয়ে উঠেছে।’’
প্রসঙ্গত, আমেরিকার কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে এটি ছিল মোদীর দ্বিতীয় ভাষণ। সাত বছর আগে ২০১৬ সালের জুনে আমেরিকা গিয়ে যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘‘আমেরিকার কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়া বিশেষ সম্মানের এবং দু’বার এই মঞ্চে কথা বলার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত।’’
এই দিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্য একটি নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন।