Rath yatra: কেন রথযাত্রার দিনে জিলিপি আর পাঁপড়ভাজা খেতেই হয় জানেন?

রথযাত্রায় মেলা এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর মেলার হরেক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অতি পরিচিত বা প্রায় মাস্ট আইটেম হল পাঁপড় আর জিলিপি। যাঁরা রথযাত্রার দিনে রথ টানেন না, বা কোনও রথের মেলায় যেতে পারেন না, তাঁরাও আর কিছু না হোক, একটু জিলিপি ও পাঁপড়ের আস্বাদ নেনই এদিন। কিন্তু কীভাবে রথের সঙ্গে জড়িয়ে গেল এই দুটি খাবার? 

এ দুটির কোনওটিই সেই অর্থে এলিট খাবার নয়। বরং একটু লোকায়তই। খুব সহজে সামান্য  উপকরণে তৈরি করে ফেলা যায়। দামও কম বলে গরিবগুর্বো সকলেই নির্দ্বিধায় কিনতে পারেন। তাই রথ দেখতে গিয়ে, রথের মেলায় গিয়ে কেউ যদি আর কিছু কিনতে না-ও পারেন, তিনি মেলাপ্রাঙ্গণ ত্যাগ করার আগে অন্তত একটু পাঁপড় বা জিলিপি কেনেন। সবচেয়ে বড় কথা, এ দুটি খাবারের স্বল্পমূল্য পাশাপাশি দারুণ লোকপ্রিয়তা।

রথের মেলাগুলি প্রত্যন্ত এলাকায় হত। সেখানে নাগরিক সুযোগসুবিধা পাওয়া কঠিন ছিল। চাইলেই দামি মিষ্টি মণ্ডা-মিঠাই পাওয়া সহজ ছিল না। এই সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে জিলিপি ও পাঁপড় দারুণ মানিয়ে যায়।      

পাঁপড় মূলত উত্তর ভারত ঘেঁষা খাবার। পঞ্জাব আর গুজরাতের প্রাচীন খাবারগুলির একটি পাঁপড়। এদিকে রামায়ণে এর উল্লেখ রয়েছে বলে মনে করেন পণ্ডিতেরা। ভরদ্বাজ মুনি নাকি রাম ও তাঁর সেনার জন্য যে ভোজনের আয়োজন করেছিলেন সেখানে পাঁপড়ের উল্লেখ রয়েছে!

সংস্কৃত পুঁথিতেও জিলিপির কথা রয়েছে। তবে মূলত মোগল বাদশার আমলেই মিষ্টিটি স্থায়ী জায়গা করে নেয়। সরাসরি রথের সঙ্গে এর কোনও যোগ পাওয়া যায়নি। তবে বর্ধমানের মহারাজ মহতাবচন্দ্র বাহাদুর তাঁর পাচকদের দিয়ে মানকচুর জিলিপি তৈরি করে তা ইফতারের দিন বিলি করতেন। তা দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। পরে জনপ্রিয়তার নিরিখে গ্রামবাংলার মেলা-মোচ্ছবে জিলিপি ঠাঁই পেয়ে যেতেই পারে। আর তাই রথের মেলায় তৈরি গরম গরম জিলিপি ক্রমশ লোকের হাতে-হাতে ফিরেছে।

তবে পাঁপড় বা জিলিপির সঙ্গে জগন্নাথদেবের তেমন সরাসরি কোনও যোগ নেই। শোনা যায়, স্নানযাত্রায় একশো আট ঘড়া জলে স্নান করে প্রতি বছরেই জ্বর বাঁধান জগন্নাথ। পরে পাচন খেয়ে জ্বর সারিয়ে খানিক সুস্থ হন। তখন হাওয়া বদল করতে গুন্ডিচায় মাসীর বাড়ি যান। সেই সময়ে মুখের স্বাদ ফেরাতে তাঁর খানিক মুখরোচক খাবার খেতে সাধ হয়। তখনই নাকি তিনি এই নোনাত খাবারটি খান। যদিও অন্য এক মহল বলে থাকে, জগন্নাথের মেনুতে কোনও দিনই ঠাঁই হয়নি জিলিপি বা পাঁপড়ের। তা না-ই হোক, জগন্নাথের রথের মেলায় তা দিব্যি ঠাঁই পেয়ে গিয়েছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.