অবশেষে দেখা গেল বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীকে। মঙ্গলবার রথযাত্রার দিনে বিজেপি পরিষদীয় দলের পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের কর্মসূচিতে যোগদান করতে কলকাতার রাজপথে হাঁটতেও দেখা গেল তাঁকে। তা-ও আবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। ৭ জুন স্ত্রী স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরী তিলজলা থানায় এফআইআর দায়ের করার পর থেকে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বার বার মুকুটমণির মোবাইলে ফোন করা সত্ত্বেও তাঁকে ধরা যায়নি। কিন্তু শেষমেশ দলীয় কর্মসূচিতে যোগদানের কারণে প্রকাশ্যে এলেন এই চিকিৎসক রাজনীতিক।
মঙ্গলবার সকালে বিধানসভা থেকে রেড রোড পর্যন্ত মিছিল করেন বিজেপির প্রায় ১৯ জন বিধায়ক। বিরোধী দলনেতার নেতৃত্বে আয়োজিত এই মিছিলে হিরণ চট্টোপাধ্যায়, অসীম সরকার, শঙ্কর ঘোষ, বঙ্কিম ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ মাইতি, অশোক কীর্তনিয়ার মতো বিধায়কদের সঙ্গে মিছিলে পা মেলাতে দেখা গেল মুকুটমণিকেও। কখনও প্রথম সারিতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ দিবসের সপক্ষে তৈরি ফ্লেক্স হাতে নিয়ে হাঁটলেন, কখনও আবার পিছনের সারিতে গিয়ে দিলেন স্লোগান। তবে নিজের সতীর্থ ছাড়া আর কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি মুকুটমণিকে। মিছিল শেষে যখন শুভেন্দু সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনও পিছনের সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন এই মতুয়া বিধায়ক। তার কিছু পরেই রওনা দেন তিনি। তবে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি তাঁকে।
তবে জামিন না পাওয়া পর্যন্ত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন না বিজেপি বিধায়ক, এমনটাই তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। চলতি মাসের ৭ তারিখে তাঁর বিরুদ্ধে স্ত্রী স্বস্তিকা কলকাতার তিলজলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বিয়ের মাত্র ১১ দিনের মাথায় অভিযুক্ত হন রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক। তার পর থেকে মুকুটমণি এবং তাঁর বাবা ও ভাই নিখোঁজ হয়ে যান। ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশ বিজেপি বিধায়ককে ডেকে জেরার প্রস্তুতি শুরু করেছে বলেই সূত্রের খবর। জেরার জন্য তাঁকে নোটিস পাঠানো হতে পারে। তাই মুকুটমণির বিয়ের খবর বিজেপি নেতৃত্বের অজানা থাকলেও, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে কয়েক জন রাজ্য নেতা কথা বলেছেন। জানতে চেয়েছেন, কেন তিনি এ বিষয়ে প্রকাশ্যে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন না? সূত্রের খবর, তার পরেই মুকুটমণি নিজের অবস্থান দলের নেতাদের জানিয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, আদালত জামিন মঞ্জুর করলেই প্রকাশ্যে এসে স্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন বিজেপির এই চিকিৎসক বিধায়ক। আপাতত সাংসদ বিধায়কদের আদালতে নিজের জামিনের আবেদন জানিয়েছেন মুকুটমণি। পাশাপাশি পৃথক ভাবে আদালতে জামিনের আবেদন জানিয়েছেন তাঁর পিতা ও ভাই।
মুকুটমণির সঙ্গে তাঁর পিতা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের পাশাপাশি, তোলাবাজি, বিশ্বাসভঙ্গ, আটকে রাখা ও হুমকি দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। মোট ছ’টি ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর স্ত্রী। উল্লেখ্য, গত মে মাসের ২৮ তারিখেই রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেছেন মুকুটমণি-স্বস্তিকা। সূত্রের খবর, মুকুটমণি ও তাঁর স্ত্রীর দীর্ঘ দিনের পরিচয়। ১৩ মার্চ তাঁরা একসঙ্গে রেজিস্ট্রির আবেদন করেন। ২৮ মে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে তাঁদের। কিন্তু বিয়ে হওয়ার কয়েক দিনেই এমন ঘটনা ঘটায় অস্বস্তিতে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি। তবে এই ঘটনা প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতে নারাজ বিজেপি নেতারা। তাঁদের কথায়, যে হেতু ব্যক্তিগত ভাবে মুকুটমণির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাই তিনি এই অভিযোগের জবাব দেবেন।
প্রসঙ্গত, মুকুটমণিকে বিশেষ ভাবে পছন্দ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর পছন্দের ভিত্তিতেই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রথমে তাঁকে রানাঘাট থেকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। কিন্তু, স্বাস্থ্যভবন চাকরি থেকে তাঁর ইস্তফা গ্রহণ না করায় ভোটে দাঁড়ানো হয়নি মুকুটমণির। পরে জগন্নাথ সরকারকে ওই আসনের প্রার্থী করে বিজেপি। তার পর অবশ্য বেশি দিন চাকরি করেননি এই চিকিৎসক বিধায়ক। মতুয়া সমাজ থেকে উঠে আসা এই যুবক রাজনীতিক ২০২১ সালে রানাঘাট দক্ষিণ থেকে বিজেপির টিকিটে বিধায়ক হয়েছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সকলেই পছন্দ করেন মুকুটমণিকে। তাই তাঁর বিরুদ্ধে স্ত্রী স্বস্তিকা অভিযোগ দায়ের করলেও, বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর পাশেই রয়েছে বলে মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। যে কারণে তিনি পরিষদীয় দলের কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে দলকেও বার্তা দিতে চেয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।