রাজ্যে ৩৫৫ বা ৩৫৬ ধারা জারি করার মতো পরিস্থিতি আছে কি? মন্তব্য এড়ালেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস

রাজ্যে ৩৫৫ বা ৩৫৬ ধারা জারি করার মতো পরিস্থিতি আছে কি না, সেই বিষয়ে সরাসরি কোনও মতামত দিলেন না রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। এই প্রশ্নে তাঁর বক্তব্য, সংবাদমাধ্যমের কাছে এই নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চান না। সরাসরি জবাব এড়িয়ে ৩৫৫ বা ৩৫৬ ধারার প্রশ্নে রাজ্যপাল আসলে কৌশলী অবস্থান নিচ্ছেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ধারণা। একই সঙ্গে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, রাজ্যে হিংসা বা সন্ত্রাসের অভিযোগের ক্ষেত্রে ‘ছাঁকনিতে ফেলা’ তথ্য তিনি চান না। তিনি চান নিজে সরেজমিনে পরিস্থিতির খবর নিতে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে মানুষের অভিযোগ শোনার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে রাজভবনে। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পিস রুম’ (শান্তিকক্ষ)। রাজ্যপালের বক্তব্য, সাধারণ মানুষ ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সেতুর কাজ করবে এই ‘পিস রুম’। তাঁর আরও মন্তব্য, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ‘পিস রুম’ যত দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে, তিনি খুশি হবেন। রাজ্যপালের এমন ভূমিকা একেবারেই ‘এক্তিয়ার বহির্ভূত’ বলে কড়া সমালোচনা করেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের পাশাপাশি বিরোধী দল সিপিএমও রাজ্যপালের এই পদক্ষেপকে ‘নাটক’ বলে কটাক্ষ করেছে। তবে তাঁর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি।

এক দিনেই ‘পিস রুমে’ তিনশোর বেশি অভিযোগ এসেছে বলে রাজভবন সূত্রের দাবি। ওই রুমের কাজ তদারকি করতে গিয়ে সোমবার রাজ্যপাল বোস দাবি করেছেন, ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন। যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশন-সহ ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’কে জানানো হচ্ছে। তাঁর মতে, বাংলায় হিংসা বা সন্ত্রাস শুধু অভিযোগ অথবা কল্পনা নয়। সাধারণ মানুষের বয়ান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, হিংসা বাস্তবে ঘটছে। এই সূত্রেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘ছাঁকনিতে ফেলা (ফিলটার্ড) সরেজমিনে তথ্য আমি চাই না। প্রত্যক্ষ ভাবে খবর নেব। তার জন্য যেখানে প্রয়োজন হবে, যাব।’’

কেন এমন ‘পিস রুম’ খুলতে হল? রাজভবনে এ দিন এবিপি আনন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রাজ্যপাল বোস বলেছেন, ‘‘বাংলার কিছু জায়গায় দুষ্কৃতীরা ওয়ার রুম খুলেছে! তাই পিস রুম খোলা হয়েছে এখানে। সাধারণ মানুষ শান্তিতে থাকবেন, নির্ভয়ে ভোট দিতে যাবেন— এমনটাই হওয়া উচিত। সাধারণ মানুষ ও সরকারের সেতু হবে এই পিস রুম।’’ কত দিন চলবে এই পিস রুম? রাজ্যপালের জবাব, ‘‘এক দিনেই বন্ধ হয়ে যাক, আমি চাইব! পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকলে, অভিযোগ না থাকলে পিস রুমেরও দরকার থাকবে না।’’ রাজভবনের তরফে অভিযোগ পাঠানো হলে রাজ্য প্রশাসন ও কমিশন তার প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং তথ্য জানাচ্ছে বলেও অবশ্য উল্লেখ করেছেন রাজ্যপাল।

রাজ্যপালের ভূমিকাকে স্বাগত জানাচ্ছে বিজেপি আর ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলছে তৃণমূল। এই প্রসঙ্গে বোসের মত, ‘‘রাজ্যপাল শপথ নেন সংবিধান বাঁচানো এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য। মানুষের পক্ষেই সব সময় থাকব। যত দিন দায়িত্বে আছি, সাধারণ মানুষ ও আইনের শাসনের প্রতিই আমার পক্ষপাত থাকবে।’’

রাজ্যপালের ভূমিকার সমালোচনা করে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘রাজ্য রাজনীতিতে বামফ্রন্টের এক জন চেয়ারম্যান আছে জানতাম। এখন দেখছি, রামফ্রন্টের এক জন চেয়ারম্যান হয়েছেন! রাজ্যপাল পুরোপুরি এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করছেন। কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে রাজ্য প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। এই নাটক অর্থহীন।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘রাজ্যপাল চাইলে মুখ্যমন্ত্রী বা সচিবদের ডেকে কথা বলতে পারেন। পিস রুম খুলে যেটা করছেন, সেটা নাটক। আমাদের এখানে সৎকারের আগে প্রয়োজন হলে ‘পিস হাভেন’, পিস ওয়ার্ল্ড’-এ দেহ রাখা যায়। রাজ্যে তৃণমূল গণতন্ত্রকে খুন করছে আর রাজ্যপাল পিস রুম খুলে গণতন্ত্রের দেহ রেখে সৎকারে পাঠাচ্ছেন!’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপালের কথায় তো আর পুলিশ পরিচালিত হবে না। রাজ্যপালকে নিয়ম মেনে বলতে হলে মুখ্যসচিবকে বা নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় হলে নির্বাচন কমিশনারকে বলতে হবে। রাজ্যপাল চাইলেও বেশি কিছু করতে পারবেন বলে মনে হয় না।’’ তবে বোসের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব রাজ্যপালের উপরেও বর্তায়। তিনি যে-রাজ্যের দায়িত্বে, সেই রাজ্যে যদি রাজ্য সরকার গণতন্ত্রকে খুন করে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সাংবিধানিক পদে থেকে তৃণমূলের দখলদারির রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেন, তা হলে রাজ্যপাল সীমাবদ্ধ ক্ষমতার মধ্যে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন। রাজ্যপাল সীমার মধ্যে অসীমের সন্ধান করছেন। তাঁর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.