শনিবার অর্থাৎ ১৭ জুন বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ক্যানিং পৌঁছলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ক্যানিংয়ে পৌঁছেই সেচ দফতরের একটি ভবনে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। সেই বৈঠকে পুলিস এবং প্রশাসনের আধিকারিকেরা ছিলেন। বৈঠকের পর বিডিও অফিসে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। একইসঙ্গে হিংসা ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলোতেও।
রাজভবন সূত্রে খবর, শনিবারই তাঁর রাজ্যের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করে ক্যানিংয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শনিবার দুপুরে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন বিজেপি সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। পরে রাজভবনের বাইরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিজেপি সভাপতি। সেখানে তিনি বলেন :পঞ্চায়েত নির্বাচন অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ করতে বদ্ধপরিকর রাজ্যপাল। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, যে ভাবে সন্ত্রাস আটকানো সম্ভব, তা তিনি করবেন।”
শুক্রবার রাজনৈতিক হিংসায় উত্তপ্ত ভাঙড়ে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সেখানকার বিজয়গঞ্জ বাজার ঘুরে দেখেন তিনি। তার পর যান ভাঙড় ১ এবং ২ নম্বর ব্লক অফিসে। সেখানে কথা বলেন আধিকারিকদের সঙ্গে। তার আগে স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ভাঙড়ে দাঁড়িয়েই হিংসার বিরুদ্ধে বার্তা দিয়ে রাজ্যপাল বলেন, “গণতন্ত্রের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে হবে। সাংবিধানিক ভাবে হিংসাকে নির্মূল করতে হবে। হিংসা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।”
গত বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং। বাসন্তী হাইওয়েতে তৃণমূলের দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি এবং গুলি চলার অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে সুনীল হালদার নামে এক তৃণমূল কর্মী গুলিবিদ্ধ হন বলে ক্যানিংয়ের জোড়াফুল শিবিরের একটি অংশের তরফে দাবি করা হয়। তবে পুলিস জানায়, দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সংঘর্ষে। ক্যানিংয়ের এসডিপিও-সহ কয়েক জন পুলিসকর্মীও সংঘর্ষে জখম হন। এর প্রতিবাদে বাসন্তী হাইওয়ে অবরোধ করা হয়। ক্যানিং তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা যায়, এলাকার ব্লক সভাপতি এবং স্থানীয় বিধায়কের গোষ্ঠীর মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে বিবাদের জেরে বুধবার ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এই আবহে ক্যানিং শহরে সিপিএমের একটা অফিসেও হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হওয়ার পরেই পরিস্থিতি তেতে ওঠে ক্যানিংয়ে। গোটা মনোনয়ন পর্বে প্রায় প্রতিদিন বোমাবাজিতে ঘুম উড়েছে এলাকার মানুষের। চলে গুলির লড়াইও। দোকান ও বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগের ঘটনায় রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। বিরোধীদের দাবি, ক্যানিং ১ নম্বর ব্লকে শাসকদলের বাধায় মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি তাঁরা। একই অভিযোগ ওঠে ক্যানিং ২ ব্লকেও। শাসক-বিরোধী লড়াইয়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় বারবার। শুধু রাজনৈতিক দলের কর্মীরাই নন, আক্রান্ত হন সাধারণ মানুষও। অশান্তির দায়ে পুলিস এখনও পর্যন্ত ২৬ জনকে গ্রেফতার করে।