উৎকর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিরোপা পাচ্ছে না যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রের চিঠি রাজ্যকে

বছরের পর বছর দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির তালিকায় থাকা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে উৎকর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (ইনস্টিটিউট অব এমিনেন্স) শিরোপা দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, এর জন্য রাজ্যের পক্ষ থেকে যে বাজেটের কথা বলা হয়েছে, তাতে বিষয়টি বাস্তবায়িত হবে না। সম্প্রতি রাজ্যের উচ্চশিক্ষা সচিবকে এমনই চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। চিঠি পৌঁছেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও।

চলতি বছরের এনআইআরএফ র‍্যাঙ্কিংয়েও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে চতুর্থ যাদবপুর। প্রথম তিনটিই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তাই প্রাদেশিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যেও যাদবপুরের স্থান প্রথমে। দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সার্বিক ভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান ত্রয়োদশে। এর সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দশম স্থান, ফার্মাসি বিভাগে অষ্টাদশ স্থান এবং গবেষণা ক্ষেত্রে ১৯তম স্থানে যাদবপুর। বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগে যাদবপুরের আগে রয়েছে তিনটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু জাতীয় স্তরে এত সাফল্য সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের ওই চিঠির পরে আর উৎকর্ষ কেন্দ্র হওয়ার সম্ভাবনা রইল না বলেই মনে করছে শিক্ষা মহলের একাংশ।

২০১৮ সালে কেন্দ্র দেশের অন্য কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরসঙ্গে যাদবপুরকে উৎকর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে বেছে নেওয়ার পরেও সেই মর্যাদা দেয়নি। বলা হয়েছিল, এই শিরোপার সঙ্গে এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তাও যাদবপুর পাবে। তবে শর্ত ছিল, রাজ্যসরকারকে ওই টাকার ২৫ শতাংশ দিতে হবে। কিন্তু পূর্বতন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রকে জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারের যা আর্থিক অবস্থা, তাতে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।অর্থের পরিমাণ কমিয়ে ৬০৬ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হোক। যার ২৫ শতাংশ যাদবপুর নিজেই দেবে। রাজ্যও কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে একই প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু যাদবপুরকে সেই তালিকাথেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইউজিসি। এর পরে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর ২০২১ সালের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক এবংইউজিসি-কে চিঠি দিয়ে যাদবপুরকে তালিকা থেকে বাদ না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। এত দিন পরে শিক্ষা মন্ত্রক জানাল, যাদবপুরকে উৎকর্ষ কেন্দ্রের শিরোপা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যাদবপুর এমনিতেই চরমঅর্থকষ্টে ভুগছে। তবে পূর্বতন উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের আবেদনের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন প্রাক্তনীদের অনেকেই।

যাদবপুরকে উৎকর্ষ কেন্দ্রের শিরোপা না দেওয়ার বিষয়ে সেখানকার অস্থায়ী উপাচার্য অমিতাভ দত্ত বুধবার বলেন, ‘‘পর পর দু’বছর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে আমরা চতুর্থ স্থানে রয়েছি।গবেষণা ক্ষেত্রেও আমাদের স্থান উপরের দিকে। তার পরেও আমাদের এই শিরোপা জুটছে না। এটা আমাদের কাছে খুবই খারাপ খবর।’’ তবে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার যাদবপুরকে ‘ইনস্টিটিউট অব এমিনেন্স’-এর তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য কুযুক্তিসাজিয়েছে। এক দিকে তৈরি না হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এই খেতাব দিচ্ছে। অন্য দিকে ‘অ্যাকাডেমিক এক্সেলেন্স’ থাকা সত্ত্বেও যাদবপুরের অর্জিত সম্মান দিচ্ছে না।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.