ভুল শুধরে নেওয়ার আর কোনও সুযোগ নেই। তবে তাই বলে বিতর্ক থামে! বিশ্ব টেস্ট ফাইনালের (ICC World Test Championship Final 2023) শুরুতেই মারাত্মক ভুল করেছিলেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ও রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। টসের সময় রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে (Ravichandran Ashwin) বাদ দিতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল ক্রিকেট দুনিয়া। সুনীল গাভাসকর (Sunil Gavaskar) থেকে সচিন তেনডুলকর (Sachin Tendulkar)। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) থেকে রবি শাস্ত্রী (Ravi Shastri)। এমনকি রিকি পন্টিং (Ricky Ponting) থেকে স্টিভ ওয়া (Steve Waugh), ম্যাথু হেডেন (Matthew Hayden) পর্যন্ত টিম ইন্ডিয়ার (Team India) অধিনায়ক ও কোচের অদ্ভুত সিদ্ধান্তে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্বের এক নম্বর বোলারকে ওভালের পিচে ছেঁটে ফেলা যে ঐতিহাসিক ভুল, সেটা নতুন ভাবে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এবার মেগা ফাইনাল থেকে বাদ যাওয়া অশ্বিন মুখ খুললেন। মেগা ফাইনালে বাদ যাওয়া নিয়ে মনের মধ্যে তীব্র জ্বালা থাকলেও, জনসমক্ষে অবশ্য টিম ম্যানেজমেন্টকে আর কচুকাটা করলেন না।
টুইটারে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন এই অভিজ্ঞ অফ স্পিনার। অশ্বিন সেখানে লিখেছেন, ‘বিশ্ব টেস্ট ফাইনাল জেতার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে অভিনন্দন। অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য বিপক্ষকে দলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। ফাইনালে উঠেও আমরা জিততে পারলাম না। সেই আক্ষেপ থেকেই যাবে। কারণ ফাইনাল খেলার জন্য গত দুই বছর আমরা অনেক কঠিন লড়াই করেছি। শীর্ষে থাকা কিন্তু মোটেও জলভাত নয়।’
কিন্তু কেন বাদ পড়েছিলেন অশ্বিন? টসের পর রোহিতকে সেই প্রশ্ন করা হলে ভারতীয় দলের অধিনায়ক বলেছিলেন, “খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। তবে টিম কম্বিনেশনের স্বার্থেই অশ্বিনকে বাদ দিতে হল।” অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন অশ্বিন সম্ভবত ক্ষোভ উগরে দেবেন। তবে সেই পথে না হেঁটে টিম ম্যানেজমেন্টের পাশেই দাঁড়ালেন ব্রাত্য অফ স্পিনার। তিনি ফের লিখেছেন, ‘যাবতীয় বিশৃঙ্খলা এবং অহেতুক মূল্যায়নকে আমি মোটেও পাত্তা দিতে রাজি নই। কারণ এমন কঠিন সময় সব সতীর্থদের লড়াইকে কুর্নিশ জানাই। একইসঙ্গে দলের কোচিং এবং সাপোর্ট স্টাফদেরও পাশে আছি। একেবারে পাহাড়ের মতো ওদের সঙ্গে পাশে আছি।’
অশ্বিনের বদলি হিসেবে যাঁকে খেলানো হয়েছে সেই উমেশ যাদব, তিনি ওভালে চরম ব্যর্থ। প্রথম ইনিংসে একটি উইকেটও পান নি। ২৩ ওভারে অকাতরে ৭৭ রান বিলিয়েছিলেন। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসেও তেমন দাপট দেখাতে পারেননি উমেশ। ৫৪ রানে ২ উইকেট নিলেও, দাপট দেখাতে ব্যর্থ হন। অশ্বিন মাঠে থাকলে বোলিং-এর পাশাপাশি ব্যাটিং-এ তাঁর কাছ থেকে কিছু মূল্যবান রানও পেতে পারত দল। ওভালের পিচ যে কেবল পেস সহায়ক নয়, বরং স্পিনাররা যে সেখানে সফল হতে পারেন, সে কথা ম্যাচ শুরুর আগেই জানিয়েছিলেন বহু বিশেষজ্ঞ। এমনকি চতুর্থ, পঞ্চম দিনে স্পিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেও জানিয়েছিলেন অনেকে। সেসবে কর্ণপাত করেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। ফলে সাজঘরেই জায়গা হয়েছে অশ্বিনের।
অস্ট্রেলিয়ার নাথান লিয়ঁ যেভাবে টার্ন আদায় করে নিয়ে রবীন্দ্র জাদেজাকে আউট করলেন সেটা দেখে ধারাভাষ্যের মাইক হাতে সৌরভকে বলতে শোনা গিয়েছিল অশ্বিনকে বসিয়ে ভুল করেছিল ভারতীয় দল। একই কথা শোনা গিয়েছিল বাকিদের মুখেও।
মাত্র ৯২টি টেস্টে ৪৭৪টি উইকেট। বাঁহাতি ব্যাটারদের বিরুদ্ধে অশ্বিনের রেকর্ড দারুণ। সেটা কীভাবে ভুলে গেল ভারতীয় দল? তবে অশ্বিনকে ছাঁটাই করার পর্ব কিন্তু নতুন নয়। এর আগে সেটা হল ২০১১ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালের প্রথম একাদশে অশ্বিন জায়গা পাননি। ২ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেই ফাইনালে খেলেছিলেন হরভজন সিং। এরপর বিরাট কোহলির জমানায় বিদেশে একাধিক টেস্টে অশ্বিন সাজঘরে বসেছিলেন। এবারও তাঁকে রোহিত ও রাহুল দ্রাবিড়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হল। বিশ্বের এক নম্বর বোলারকে সাইডলাইনের বাইরে থেকেই মেগা ফাইনাল দেখতে হল। আর তাই ২০৯ রানে হেরে সেই সিদ্ধান্তের মাশুল দিলেন রোহিত-রাহুল জুটি।