স্থায়ী আমানতে টাকা রেখে ভুল করছেন না তো?

ভারতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনও মানুষ সবার প্রথমে বেছে নেন স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট)-কে। বিশেষত ভারতীয় স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। আর তার মূল কারণ হল, স্থায়ী আমানতে ঝুঁকি নেই। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের মে মাসে সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে স্থায়ী আমানতের দিকেই ঝুঁকেছেন অধিকাংশ মানুষ।

বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী, স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগের দুর্দান্ত বিকল্প। তবে এমনটা নয় যে এটাই সেরা বিকল্প। ঝুঁকিহীন বিকল্প হলেও মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তুলনা করা গেলে এটি মোটেও ভাল বিকল্প নয়। স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগের আগে তাই কেন এটা সেরা বিকল্প নয়, সেটা জেনে নেওয়া দরকার। ভাবনাচিন্তা করে তবেই বিনিয়োগ করুন স্থায়ী আমানতে।

এ ছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৮ থেকে ২৪ মাসের জন্য স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করা যেতেই পারে। ব্যাঙ্ক হোক বা ক্ষুদ্র সঞ্চয় ব্যাঙ্ক বা কর্পোরেট স্থায়ী আমানতে— সুদের হার প্রায় ৯ শতাংশের ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। তবে অন্যান্য বিনিয়োগ বিকল্প যেমন শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের রিটার্ন স্থায়ী আমানতের তুলনায় বেশি। বাজারের সঙ্গে তালমিল রেখে শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে মেলে মোটা রিটার্ন। যদিও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ঝুঁকিহীন।

তবে মনে রাখবেন, স্থায়ী আমানতে কখনওই কাউকে ধনী করে তুলতে পারে না।

স্থায়ী আমানতে সুদের হার স্থির। ২০২১ সালে স্থায়ী আমানতে সুদের হার ছিল ৫ শতাংশ। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭ শতাংশেরও বেশি হয়েছে। কিন্তু ২০২১ সালে যাঁরা স্থায়ী আমানতে টাকা রেখেছেন, তাঁরা সেই পুরনো সুদেরই অন্তর্ভূক্ত হবেন। স্থায়ী আমানতে সুদের হার নির্দিষ্ট। যার অর্থ, মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত একই থাকে সুদের হার।

অন্য দিকে, মুদ্রাস্ফীতিতে টাকার দাম পড়ে। আমাদের দেশের অর্থনীতি মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি এখনও পর্যন্ত। এ বার অর্থনীতির দিক থেকে দেখলে এই মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে স্থায়ী আমানতে একটা প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। স্থায়ী আমানত সব সময়েই মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় কম টাকা আমাদের হাতে তুলে দেয়। যেমন, ২০১২-১৪ সালে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৯.৭৬ শতাংশ। এ বার স্থায়ী আমানতে সুদের হার আর কত হবে? বড় জোর ৮.৫ শতাংশ। এর অর্থ যাঁরা স্থায়ী আমানত করেছেন তাঁরা আসলে তুলনামূলক ভাবে কম টাকা পাচ্ছেন।

স্থায়ী আমানত নির্দিষ্ট মেয়াদের হয়। আর সেই কারণেই স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করলে তা আর তোলা যায় না। কোনও কাজে টাকার দরকার হলেও স্থায়ী আমানত সহজে ভাঙা যায় না। ভাঙতে গেলে দিতে হয় জরিমানা। ফলে লাভ হয় না। ১ থেকে ৩ শতাংশর জরিমানা দিতে হয়।

এ ছাড়াও, স্থায়ী আমানত থেকে আয় করলে দিতে হয় কর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থায়ী আমানতে প্রদেয় কর নির্ভর করে কোন আয়কর কাঠামোয় পড়ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। তাই ধনী হওয়ার জন্য নয়, বিনিয়োগের সুরক্ষিত মাধ্যম হিসেবে স্থায়ী আমানতের জুড়ি মেলা ভার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.