‘লাদা দোম্বা’????
সে আবার কী রে ভাই! কেমন যেন ‘হাম্বা’ ‘হাম্বা’ শুনতে লাগছে!
অনেকেই এই রেসিপির বিচিত্র নামটি শুনে এহেন ঠাট্টা করে থাকেন। কিন্তু, যাঁরা এই খাদ্যবস্তুটি একবার চেখে দেখেছেন তাঁদের মুখে শুধুই ‘বাহ্ বাহ্ আর বাহ্’।
ভারত স্বাধীন হয়েছে মাত্র ১০৭ দিন। ৩০ নভেম্বর, ১৯৪৭ সাল। এই দিনেই হেমন্তের সন্ধ্যায় কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে বেজে উঠেছিল সানাই। উপলক্ষ্য, মহারাজ সৌরিশচন্দ্র রায়ের শুভ আশীর্বাদ। আয়োজিত হয়েছিল একটি প্রীতিভোজ। প্রীতিভোজের তালিকায় ছিল ‘মাত্র’ দশ পাতার, ১৩৮টি পদ। দশ পাতার সেই মেনু কার্ডে নদিয়া রাজবাড়ির পাচকরা সারা বিশ্বের রান্নাকে ঠাঁই দিয়েছিলেন। যার অন্যতম উদাহরণ এই ‘লাদা দোম্বা’ (Lada Domba)। বলাই বাহুল্য, বিশ্বের রান্না এক জায়গায় আনলেও, বাইরের দেশের কোনও পাক-প্রণালী রাঁধতে সেদেশের সস, মশলা বা হার্ব আনানো সেসময় কঠিন ব্যাপার ছিল। প্রণালীটুকু সংগ্রহ করে, তার মূল উপাদানগুলি নিয়ে রাজবাড়ির পাচক ঠাকুররা নিজেদের মতো আদল দিতেন। এভাবেই ইন্দোনেশিয়ার ‘লাদা দোম্বা’ হয়ে ওঠে নদিয়া রাজবাড়ির নিজস্ব, দেশিয় পদ।
লাদা দোম্বা হল মাংস আর লঙ্কার রান্না। ইন্দোনেশিয়ার ভাষায় ‘লাদা’ কথার অর্থ হল- ‘মরিচ’ বা লঙ্কা। সে লাল মরিচও হতে পারে আবার, গোলমরিচও হতে পারে। ‘দোম্বা’ হল- দুম্বা, অর্থাৎ এক শ্রেণীর ভেঁড়া। তবে, ভেড়ার মাংসের বদলে এই রান্নায় পাঁঠার মাংসও ব্যবহার করা যেতে পারে।
যা যা লাগবে-
পাঁঠার মাংস ১ কেজি
লাল লঙ্কা ৮টা
বীজ ছাড়া লাল লঙ্কা ৮-১০টা
চিনি দেড় চা-চামচ
২টো মাঝারি সাইজের পেঁইয়াজ কুচানো
নুন স্বাদ মতো
১৫-২০টা রসুনের কোয়া
ধনেপাতা ১ আঁটি
আদা বাটা এক চা চামচ
লেবুর রস ২ চা চামচ
১০-১২টা গোলমরিচ
ঘি ২ টেবিল চামচ
সর্ষের তেল পরিমাণ মতো
প্রণালীঃ
দেশজ পদ্ধতিতে লাদা দোম্বা তৈরির জন্য প্রথমেই তৈরি করে নিতে হবে একটা মিশ্রণ। এর জন্য মিক্সচার মেশিনে একে একে দিতে হবে ১ আঁটি ধনেপাতা, ১৫-২০টা রসুনের কোয়া, লাল লঙ্কা ৮টা, আদা বাটা এক চা চামচ, ১০-১২টা গোলমরিচ, একচামচ নুন, ২-৩ চামচ সঃ তেল এবং আধ কাপ জল। এই সব উপকরণ একসঙ্গে বেটে একটা মিহি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। এবার এই মিশ্রণটা মাংসে ঢেলে, ভালো করে মেখে নিন।
এবার কড়াই আঁচে বসিয়ে, তাতে দিয়ে দিন তেল আর ঘি। তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে রঙ না ধরা অবধি ভাজতে হবে। এবার এর মধ্যে দিয়ে দিন মেখে রাখা মাংস। মাংস বেশ কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে এতে মিশিয়ে দিন দেড় কাপ গরম জল, আরও একটু নুন এবং আগে থেকে বীজ বের করে রাখা লাল কাঁচালঙ্কাগুলো। রান্নাটাকে ভালো ভাবে নেড়ে, আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। মাংস নিজে থেকে জল ছাড়বে এবং সেই জলেই রান্না হবে। এই সময় ১/২ ঘণ্টা বাদে বাদে ঢাকনা খুলে মাংস নাড়াচাড়া করে নেবেন। দিয়ে আবার সেদ্ধ হতে দেবেন। মাংস সেদ্ধ করার সময় জল যদি শুকিয়ে যায়, এক কাপ করে গরম জল মেশাতে পারেন। রান্না শেষ হয়ে এলে যোগ করুন দেড় চা-চামচ চিনি। সব শেষে দুচামচ লেবুর রস দিয়ে অল্প নেড়ে আঁচ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রাখুন।
প্রেশার কুকার ব্যবহার না করলে এই রান্নায় সময় লাগবে দেড় থেকে পৌনে দু’ঘণ্টা। আর একটা কথা, এই রান্না কিন্তু বেশ ঝাল ঝাল। যাঁরা ঝাল খেতে পারেন না, স্বচ্ছন্দ্যে কমিয়ে নিয়ে পারেন লঙ্কার পরিমান। রুটি, ভাত বা পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করুন গরম গরম লাদা দোম্বা।