সিগন্যালের ত্রুটিই কাড়ল ২৮৮টি প্রাণ, করমণ্ডল দুর্ঘটনায় এমনই ইঙ্গিত রেলের প্রাথমিক তদন্তে

ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে উঠে এল সিগন্যালের ত্রুটি। রেলের তরফে একটি যৌথ পরিদর্শন রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ওই যৌথ রিপোর্টে সিগন্যালের ত্রুটির কথাই বলছেন রেল আধিকারিকেরা। তবে এটি প্রাথমিক রিপোর্ট। বিস্তারিত তদন্তের পর দুর্ঘটনার কারণ আরও স্পষ্ট হবে।

যৌথ পরিদর্শন রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘আপ মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ট্রেনটি সেই লাইনে ঢোকেইনি। ট্রেন ঢুকেছিল লুপ লাইনে। সেখানে আগে থেকে একটি মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। তার সঙ্গে সংঘর্ষে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়।’’

রিপোর্টে আরও দাবি, ‘‘এর মাঝে ডাউন লাইন দিয়ে বালেশ্বরের দিকে যাচ্ছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনের দু’টি বগি লাইনচ্যুত হয়।’’

কিন্তু মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল পাওয়া সত্ত্বেও করমণ্ডল এক্সপ্রেস কী ভাবে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে সিগন্যাল দেওয়ায় কোনও গোলমাল হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

শুক্রবার সন্ধ্যার এই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল। তাদের তথ্য অনুযায়ী, আহতের সংখ্যা ৮০০-এর বেশি। উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয়েছে বলেই দাবি রেল সূত্রে। এখন জোরকদমে চলছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ। আহতদের দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানেই তাঁদের চিকিৎসা চলছে। ইতিমধ্যে রেলের তরফে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারবর্গকে এককালীন ১০ লক্ষ টাকা, গুরুতর আহতদের ২ লক্ষ টাকা এবং অল্প আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

করমণ্ডল এক্সপ্রেসটি ছিল ২৩ কামরার ট্রেন। তার অন্তত ১৫টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনার অভিঘাত এতটাই ছিল যে, মালগাড়ির উপরে উঠে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন। একাধিক কামরা দুমড়ে মুচড়ে যায়।

তুবড়ে যাওয়া ট্রেনের বগি সরিয়ে, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া রেললাইন সারিয়ে আবার কবে পরিষেবা স্বাভাবিক হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। দক্ষিণ ভারতগামী বহু ট্রেন এই দুর্ঘটনার জেরে বাতিল করতে হয়েছে।

ঘটনাস্থলে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বালেশ্বরে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। সকাল থেকে সেখানে আছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.