“বহিরাগতরা চলে গেছে। এখন সবাই এইদেশীয়” – মোহন ভাগবত
মোহন ভাগবত নাগপুরে আরএসএস সদর দফতরে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এর সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত বৃহস্পতিবার
নাগপুরে আরএসএস সদর দফতরে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময় বলেন যে ভারত শতশত বছর ধরে মুসলিম ঐতিহ্য এবং উপাসনা পদ্ধতিকে ধরে রেখেছে এবং কিছু জন বিচ্ছিন্নতার উপর জোর দেওয়া সত্ত্বেও সম্প্রদায়ট সদস্যদের অনন্য পরিচয় কয়েক দশক ধরে দেশে নিরাপদ ছিল। .
তিনি বলেছিন যে অতীতের বিষয়বস্তু‚ কারও কারও ক্ষেত্রে তার সাথে জুড়ে থাকা অহংকার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়কে তাদের ঐক্যতে বাঁধা দিচ্ছে। তিনি বিচ্ছিন্নতার উপর জোর না দিতে এবং জাতীয় পরিচয়কেই একক পরিচয় হিসাবে গ্রহণ করতে বলেন। তাঁর মত্র দেশে একতা তখনই আসবে যখন সবাই বুঝবে যে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও শতাব্দী ধরে এক রয়েছি।
তিনি বলেন‚ “এমন কিছু সম্প্রদায় ছিল যারা অন্য জায়গা থেকে এখানে এসেছিল। আমরা তখন তাদের সাথে যুদ্ধ করেছি, কিন্তু তারা এখন চলে গেছে। বাহারওয়ালে সব চালে গে, আব সব আন্দরওয়ালে হ্যায়। (এখন শুধু ভিতরের লোক আছে), তাই আমাদের অবশ্যই তাদের বহিরাগত বলে ভুলে যেতে হবে। এখানে সবাই আমাদের অংশ। তাদের চিন্তাধারায় কোনো পার্থক্য থাকলে আমাদের অবশ্যই তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ভারতের ঐক্য সর্বাগ্রে এবং প্রত্যেকেরই সেদিকে কাজ করা উচিত। …এবং কে পৃথক পরিচয় চায়? …আমরা তো চাই না। আমাদের দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক লেনদেনের নয়। আমরা বৈচিত্র্য উদযাপন করি, এবং একসাথে থাকার উপায় আমরা খুঁজে বের করব।”
তাঁর মতে‚ “সম্প্রীতির জন্য আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ, এবং এক হতে হলে সবাইকে সমাজের জন্য কিছু রেখে যেতে হবে। সম্প্রীতির জন্য একতরফা প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে না। সবাইকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, এবং এটি অভ্যাস, এবং সংস্কার এর মাধ্যমে আসে।”
সরসঙ্ঘচালক বলেছিলেন যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে কারণ মানুষ ভুলে যায় যে তারা এক। এটি আমাদের মাতৃভূমি। আমাদের উপাসনার পদ্ধতি ভিন্ন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাইরে থেকে এসেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের পূর্বপুরুষরা এদেশীয়ই ছিলেন। কিছু হানাদার এসেছিল এবং চলে গেছে, এবং অনেকে থেকে গেছে। কেউ কেউ মনে করেন যদি মাতৃভূমির সাথে তাদের পরিচয় যুক্ত হয় তা ধ্বংস হয়ে যাবে। তা সত্য নয়। তিনি বলেন, স্পেন থেকে মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত ইসলাম একবার শাসন করেছিল, কিন্তু সেখানে বসবাসকারী লোকেরা শীঘ্রই হানাদারদের সাথে লড়াই শুরু করে।
শ্রী ভাগবত আরও বলেন যে ভারতীয় সমাজে বর্ণ বৈষম্যের কুফলের কোনও স্থান থাকা উচিত নয় এবং দাবি করেন যে হিন্দু সমাজ তার নিজস্ব মূল্যবোধ এবং আদর্শ ভুলে গেছে। ফলে তারা “আগ্রাসনের” শিকার হয়েছে। “আমরা জাতপাতের অত্যাচারের অন্যায় দেখেছি। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে কৃতজ্ঞ, তবে আমরা তাদের ঋণও শোধ করব”।
আরএসএস প্রধান বলেন যে জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে রাজনীতির সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত এবং মনে রাখা উচিত যে এমন লোক রয়েছে যারা গোষ্ঠীদের মধ্যে সংঘর্ষ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করে।
তিনি বলেন‚ এটি একটি গণতন্ত্র। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা সবসময়ই থাকবে। কিন্তু রাজনীতির একটা সীমা থাকতে হবে। তারা একে অপরের যত খুশি সমালোচনা করতেই পারে কিন্তু তাদের বিচক্ষণতা থাকা উচিত।জনগণ এই জাতীয় রাজনীতির মাধ্যমে দেখতে পারে এবং ভারতে বিভাজন চায় এমন শক্তি সম্পর্কে সচেতন।”
মারাঠা সম্রাট শিবাজীর “হিন্দু স্বরাজ” এর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, শিবাজী এবং সম্ভাজি উভয়েই এবং শত শত সাধারণ মানুষ স্বশাসনের জন্য তাদের সারাজীবন আত্মত্যাগ ও লড়াই করেছে। “আমাদের প্রাচীন মূল্যবোধগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা গুরুত্বপূর্ণ। শাসন ব্যবস্থা হোক বা তিনি যে নৌবাহিনী তৈরি করুক – এটি তার স্বশাসনের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করেছিল। আওরঙ্গজেব যখন কাশী মন্দির ধ্বংস করেছিলেন, তখন তিনি তাকে তার কর্তব্যের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন এমনকি তাকে সতর্কও করেছিলেন। হিন্দু রাজ সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গিই আমরা হিন্দু রাষ্ট্র বলি বলে তিনি ঘোষণা করেন।
souvik dutta