হাওড়া স্টেশন চত্বরের পাইস হোটেল ও শরবতের স্টলগুলিতে গঙ্গার দূষিত জল ব্যবহার করা হচ্ছে, এমনই খবর সামনে এসেছে সম্প্রতি। এ বার কলকাতা পুরসভার ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সন্তোষ পাঠকের অভিযোগ, শহরের প্রাণকেন্দ্র, খাস ডালহৌসির ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের গঙ্গার বিষ-জল পান করাচ্ছেন।
হাওড়া স্টেশন লাগোয়া এলাকায় গঙ্গার বিষাক্ত জল মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে শরবত, তৈরি হচ্ছে পাইস হোটেলের খাবার। চলছে বাসন ধোয়ার কাজও। এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই অভিযোগ উঠেছে, কেবল হাওড়া স্টেশন এলাকাই নয়, কলকাতার ফুটপাতেও খাবারের দোকানগুলিতে অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে গঙ্গার জল। সেই জলেই তৈরি হচ্ছে রাস্তায় বিক্রি হওয়া নানা ধরনের নরম পানীয়, রান্না হচ্ছে খাবার, ধোয়া হচ্ছে বাসন। এমনকি, কোথাও কোথাও পানীয় জল হিসাবেও ব্যবহার করা হচ্ছে তা। সন্তোষের অভিযোগ, ‘‘ডালহৌসি এলাকায় পানীয় জলের কলের অভাব রয়েছে। ওই এলাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করেন। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবে বাধ্য হয়েই গঙ্গার জলে ফিটকিরি মিশিয়ে তা পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করেন। এই সমস্যার সুরাহা করতে পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।’’ যদিও পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের তরফে পাল্টা জানানো হয়েছে, সন্তোষের কাছ থেকে এমন অভিযোগ তারা পায়নি।
খাবারে ভেজাল প্রতিরোধে পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে রয়েছে ‘ফুড সেল’। সেই বিভাগ খাবারের দোকানে অভিযান চালায়। বিক্রেতাদের সচেতন করতে চালায় প্রচার। বিলি করে লিফলেটও। পুরসভার ফুড সেলের এক আধিকারিক বুধবার বলেন, ‘‘কলকাতায় ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা পানীয় জল হিসাবে গঙ্গার জল ব্যবহার করছেন, এমন অভিযোগ পাইনি। আমরা গঙ্গার জল কেবল পান করতেই নিষেধ করি না, তাতে থালাবাসন ধুতেও বারণ করি।’’ ওই আধিকারিক এ কথা বললেও মধ্য কলকাতায় ফুটপাতের বেশ কিছু হোটেলে থালাবাসন ধুতে এখনও গঙ্গার জল ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ। হাতমুখ ধোয়ার জন্যও আলাদা পাত্রে গঙ্গার জল রাখা থাকে।
যদিও এ প্রসঙ্গে ফুড সেলের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বিভাকর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ফুটপাতের হোটেলে গঙ্গার জল কেউ যাতে ব্যবহার না করেন, সে বিষয়ে আমরা নিয়মিত প্রচার চালাই।’’ কিন্তু ফুটপাতের হোটেলের ক্ষেত্রে পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে করণীয় বিশেষ কিছু নেই। ফুড সেলের আধিকারিকেরা জানান, ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স না থাকায় তাঁদের জরিমানা করা যায় না। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমরা বড়জোর গঙ্গার জল যে পাত্রে রাখা হয়েছে, সেটি বাজেয়াপ্ত করতে পারি। কিন্তু কম লোকবল নিয়ে বার বার তো অভিযানে যাওয়া সম্ভব নয়।’’
মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘শহরের পানীয় জলে কোথাও সংক্রমণ থাকলে তা পরীক্ষার জন্য জল সরবরাহ বিভাগ স্বাস্থ্য বিভাগকে জানায়। তবেই আমরা সেখানকার জল পরীক্ষা করি।’’