মণিপুর হিংসায় ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলেন অমিত শাহ। সংঘর্ষের নিহতদের পরিবার পিছু ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে এই ক্ষতিপূরণ দেবে। পাশাপাশি, নিহতদের পরিবারের একজনকে দেওয়া হবে চাকরিও। মুখ্য়মন্ত্রী এন বিরেন সিং ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মধ্যে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বলে রাখি, মণিপুরে চলা হিংসায় এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ৮০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, ৩ দিনের সফরে সোমবার থেকে মণিপুরে রয়েছেন শাহ। গ্রাউন্ড জিরোর পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতেই হিংসা দীর্ণ উত্তর-পূর্বের রাজ্যে সফরে শাহ। সোমবার গভীর রাতে মণিপুরের মুখ্য়মন্ত্রী এন বিরেন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই বৈঠকেই নিহতদের পরিবার পিছু ক্ষতিপূরণ ও চাকরি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কর্মকর্তারা জানান, গুজব ছড়ানোর বিষয়টি দূর করতে বিশেষ টেলিফোন লাইন স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, পেট্রোল, এলপিজি গ্যাস, চাল সহ অন্যান্য জরুরি পণ্যের যোগান যাতে সুনিশ্চিত থাকে ও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বৈঠকে। বৈঠকে শাহের সঙ্গে ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় কুমার ভাল্লা এবং আইবি-র ডিরেক্টর তপন কুমার ডেকাও। মঙ্গলবারও ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে শাহের। অমিত শাহ আজ মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবেন। সেইসঙ্গে চলতি মাসের গোড়ার দিকে হিংসায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চুরাচাঁদপুরও পরিদর্শন করবেন।
প্রসঙ্গত, শাহের সফরের আগেই রবিবার নতুন করে ফের হিংসা ছড়ায় মণিপুরের সেরাও ও সুগুনু এলাকায়। হিংসার জেরে এক পুলিসকর্মী সহ প্রাণ হারান ৫ জন। আহত হন কমপক্ষে ১২ জন। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র থেকে সেরাও ও সুগুনু এলাকায় একাধিক বাড়িকে লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করতে শুরু করে। তাতে আগুন ধরে যায় বাড়িগুলিতে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিং জানিয়েছেন, জঙ্গিরা নাগরিকদের বিরুদ্ধে এম-১৬, একে-৪৭ রাইফেল ও স্নিপার বন্দুক ব্যবহার করে। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে। এব্যাপারে সেনা ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
উত্তর-পূর্বের রাজ্যটিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে ভারতীয় সেনা ও অসম রাইফেলসের প্রায় ১৪০ কলাম সেনা অর্থাত্ ১০ হাজারেরও বেশি জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানদেরও মোতায়েন করা হয়েছে। গত মাস থেকেই উত্তপ্ত উত্তর-পূর্বে রাজ্যটি। মণিপুরের মেইতেই সম্প্রদায় তাদেরকে তফশিলি উপজাতি ভুক্ত করার দাবি জানালে, তার প্রতিবাদ করে কুকি উপজাতির মানুষরা।
কারণ মেইতেই সম্প্রদায়কে তফশিলি উপজাতিভুক্ত করলে, তারা সংরক্ষণের সুবিধা পাবে ও বনাঞ্চলে প্রবেশের অধিকার পেয়ে যাবে। ওদিকে কুকি গ্রামবাসীদের রিজার্ভ ফরেস্টের জমি থেকে উচ্ছেদ করা নিয়েই উত্তেজনার শুরু। যা থেকে একের পর এক হিংসার ঘটনা ঘটে আদিবাসী অধ্যুষিত উত্তর-পূর্বে রাজ্যটিতে। মণিপুরের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশই মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁরা বেশিরভাগই ইম্ফল উপত্যকায় বসবাস করেন। আর জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ আদিবাসী নাগা এবং কুকিরা। তারা মূলত পার্বত্য জেলাগুলিতে বাস করেন।