কেশপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছে শিক্ষামূলক বিনোদন

 একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামীন এলাকায় অবস্থিত প্রাইমারি বিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছে শিক্ষামূলক বিনোদন। কেশপুর ব্লকের ১ নম্বর অঞ্চলের অন্তর্গত ইন্দকুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার পোড়ার উদ্যোগে তাঁর নিজের খরচে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বিদ্যালয়টিকে। একদিকে যেমন দেওয়ালে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বর্ণমালার পরিচয় দিয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা, ঠিক অপরদিকে স্কুলের ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে শজনে গাছ থেকে আম গাছের বাগান। আধুনিক পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে মাটিকে সংরক্ষণ করে কিভাবে কৃত্রিম সার ব্যবহার না করে, জৈব সারের ব্যবহার করে বাগান গড়ে তোলা যায় তারও ছোট্ট একটি প্রকল্পও করেছেন। বিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ছোট্ট শিশুদের দোলনা। কাজ শুরু হয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্ররও।

প্রধান শিক্ষক জানান, অনেক বিনোদনের পার্ক রয়েছে, তবে শিক্ষামূলক বিনোদন পার্ক নেই বললেই চলে। তাই তিনি নিজের বিদ্যালয়ে যৎসামান্য জায়গার উপরেই গড়ে তুলতে চলেছেন শিক্ষামূলক বিনোদন পার্ক। তিনি আরও বলেন, ছাত্র ছাত্রীরা কিভাবে গাছের ডাল-পালাকে কাজে লাগিয়ে চাষযোগ্য জমিকেও আর উর্বর করে তোলা যায় সে শিক্ষাও দিতে চান। তবে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বাকি শিক্ষকরাও হাতে হাত মিলিয়ে এই কাজ করে চলেছেন। এখনো পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক টাকার উপর খরচ হয়ে গেছে, সকারের কাছে সাহায্য চেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বিকেলের পাঠশালা নামে একটি বইয়ের উদ্বোধন করেন, যেই বইটি পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটি প্রাইমারি স্কুলে পড়ানোর জন্য আবেদন করেন তিনি। তবে এই ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকার সকলেই।

এক অভিভাবক তথা ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র প্রদীপ মহাপাত্র জানান, মাস্টার মশাইয়ের পাশে অবশ্যই রয়েছি। আমাদের খুব ভালো লাগছে যে প্রত্যন্ত গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এত সুন্দর ভাবে সেজে উঠেছে। টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য না করতে পারলেও পারিশ্রম দিয়ে পাশে থেকে সাহায্য করবেন।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী পায়েল পান জানান, সত্যি খুব ভালো লাগছে, যে আমিও এই বিদ্যালয়ে একদিন পড়াশোনা করেছি। আজ হয়তো প্রাক্তন, তবুও কখনো সময় হলে বিকেলের সময় ঘুরতে আসি বিদ্যালয়ের মনোরম পরিবেশে। শিক্ষক মহাশয়রা খুব ভালো পড়াশোনাও করান। সেই সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীরা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা সকলে মিলে এত সুন্দর ভাবে বিদ্যালয়কে গড়ে তুলেছেন তার জন্য আমি অত্যন্ত ধন্যবাদ জানাই। আমি চাইবো আরও ভালোভাবে সেজে উঠুক বিদ্যালয়, পাশাপাশি পড়াশোনা ভালো হোক।

তবে শিক্ষক-শিক্ষিকা বা এলাকার মানুষ নয়, বিদ্যালয়ের পাঠরত ছোট্ট ছোট্ট ছাত্র-ছাত্রীরা খুশি। তারা বলেন, শিক্ষকরা তাদেরকেও পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ শেখায়। এই সুন্দর শিক্ষামূলক বিনোদনের কাজে তারাও সহযোগিতা করেন শিক্ষকদের। তবে এই গ্রাম্য এলাকায় এই ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ গড়ে ওঠায় খুশি এলাকার মানুষ। ইতিমধ্যেই কাজের প্রশংসা করেছে মন্ত্রী শিউলি সাহা। এলাকার বিধায়ক হিসেবে তিনি প্রধান শিক্ষককে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মন্ত্রী জানান, এই ধরনের মহতী উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। তার কাছে আবেদন করলে এলাকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য সাহায্য করবেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.