উইকেটরক্ষকের পর জোরে বোলার, স্থপতি থেকে অভিনেতা! কেকেআরের বরুণ নিজেই এক রহস্য

কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং আক্রমণের অন্যতম ভরসা বরুণ চক্রবর্তী। এ বারের আইপিএলে এখনও পর্যন্ত ১৩টি ম্যাচে নিয়েছেন ১৯টি উইকেট। স্পিনার হিসাবে আইপিএলে সাফল্যে পেলেও, দীনেশ কার্তিককে আদর্শ করে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলেন তিনি।

আইপিএলের সঙ্গে বরুণের পরিচয় চেন্নাই সুপার কিংসের হাত ধরে। নেট বোলার হিসাবে এক মরসুম কাটিয়েছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের সঙ্গে। তাই তাঁকে ধরে রাখতে না পারা নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে চেন্নাই কোচ স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের।

১১ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলেন বরুণ। তখন তিনি বোলার ছিলেন না। স্বপ্ন দেখতেন কার্তিকের মতো উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হবেন। সেই লক্ষ্য সফল হয়নি বরুণের। তামিলনাড়ুর বয়স ভিত্তিক দলেও সুযোগ পেতেন না উইকেটরক্ষক বরুণ।

কয়েক বার সুযোগ না পাওয়ার পর হতাশায় খেলাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। মন দিয়েছিলেন পড়াশোনায়। চেন্নাইয়ের এসআরএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক হন। ২০১৭ সালে তৈরি করেন নিজের নির্মাণ সংস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বরুণ জীবনের এক অন্য লক্ষ্য স্থির করেছিলেন। চেয়েছিলেন সিনেমার সহকারী পরিচালক হতে। ২০১৪ সালে ‘জিভা’ নামে একটি তামিল সিনেমায় অভিনয় করেন কেকেআরের স্পিনার। ক্রিকেটারের চরিত্রেই করেছিলেন অভিনয়। কিছু দিনের মধ্যে বুঝতে পারেন সিমেনা তাঁর জন্য নয়। আবার ফেরেন ক্রিকেট মাঠে।

এ বার আর উইকেটরক্ষক হিসাবে নয়। ২২ গজে বরুণের প্রত্যাবর্তন জোরে বোলার হিসাবে। আবারও হতাশ হতে হয়েছিল তাঁকে। জোরে বোলার হিসাবে দু’টি ম্যাচ খেলে চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছিলেন ক্রিকেট থেকে। কিন্তু খেলা থেকে দূরে থাকতে পারছিলেন না। আবারও মাঠে ফেরেন। জোরে বোলিং ছেড়ে শুরু করেন স্পিন বোলিং। এই পরিবর্তনই বদলে দিয়েছে তাঁর ক্রিকেটজীবন। ২০১৮ সালে চেন্নাইয়ের চতুর্থ ডিভিশনের জুবিলি ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন। ক্লাব ক্রিকেটে প্রথম মরসুমে পান ৩১টি উইকেট। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

ক্লাব ক্রিকেটে ভাল পারফরম্যান্সের সুবাদে তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে সুযোগ পান। ২০১৯ সালের নিলামে বরুণকে ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকায় কিনেছিল পঞ্জাব কিংস। আইপিএলে অভিষেক ম্যাচের প্রথম ওভারে দিয়েছিলেন ২৫ রান। সে বছর আর পঞ্জাবের হয়ে খেলার সুযোগ পাননি তিনি। পরে তাঁকে কেনে কেকেআর। কলকাতার হয়ে ভাল পারফরম্যান্স করার পুরস্কার পান বরুণ। ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে সুযোগ পান তিনি। বিশ্বকাপে তেমন উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স করতে পারেননি। এ বছর আইপিএলে আবার ছন্দে ফিরেছেন বরুণ। প্রায় প্রতি ম্যাচেই উইকেট পাচ্ছেন কেকেআরের স্পিনার।

ক্রিকেটজীবনে খারাপ এবং ভাল সময় দুই-ই দেখেছেন বরুণ। তাই ছন্দ হারালেও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন না। তাঁর সহজ যুক্তি, ‘‘জীবনে সবারই খারাপ সময় আসে। কিন্তু ফিরে আসাটাই আসল।’’ এই বিশ্বাসে ভরসা রেখেই বার বার ফিরে এসেছেন বরুণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.