ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-র প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সেভাবেই বিরোধিতায় মুখর হয়ে সোমবার পশ্চিমবঙ্গে ছবিটি নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘দ্য কেরলা স্টোরি’ নিয়ে গোটা দেশে ব্যাপক বিতর্কের ঝড় উঠেছে। ট্রেলারে দেখা গিয়েছে, কেরলে ৩২ হাজার মহিলা নিখোঁজ। আর তাঁরা যোগ দিয়েছেন আইএসআইএস-এ।
ফিল্মটি নিয়ে বিজেপির ভোট প্রচার মঞ্চ থেকে বক্তব্য রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কর্ণাটকে ভোট প্রচারে গিয়ে তিনি বলেন,’ দ্য কেরলা স্টোরি ফিল্মটি সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্রের ওপর আধারিত। এতে সন্ত্রাসের নোংরা সত্যিটি প্রকাশিত হয়েছে। আর তা ফাঁস করেছে সন্ত্রাসের নক্সা।’ এই ফিল্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, বাম শাসিত কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর টুইটে দাবি করেছেন, ‘এ আপনাদের কেরলের স্টোরি হতে পারে, আমাদের নয়’।
ইতিমধ্যেই তামিলনাড়ুর সিনেমাহল থেকেও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এই ছবি। সে রাজ্যের প্রযোজক, পরিবেশকদের তরফে দাবি করা হয়েছে নিরাপত্তাজনিত কারণে ছবিটি সোমবার থেকে সরিয়ে নেওয়া হল। তবে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি। সব বিতর্ককে পিছনে ফেলে প্রথম তিনদিনে ৩৫ কোটি টাকার ব্যাবসা করল ‘দ্য কেরালা স্টোরি।’ এর মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন আদা শর্মা, সিদ্ধি ইদনানি, যোগিতা বিহানি, সোনিয়া বালানি।
গোটা দেশে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক। আসুন, দেখা যাক কে, কী বললেন!
***
নরেন্দ্র মোদি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী
সন্ত্রাসের জঘন্য সত্য সকলের সামনে তুলে ধরেছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’, এবং ওদের পরিকল্পনা ফাঁস করে দিয়েছে। ছবিটি সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি সন্ত্রাসবাদের কুৎসিত সত্যকে দেখায় এবং সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা ফাঁস করে।
***
“বিকৃত তথ্যে ভরা ছবি”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী
এটি কেরলের মানুষদের অসম্মান করেছে। এই কেরালা স্টোরি, কাশ্মীর ফাইলস কিছু মানুষকে অসম্মান করার জন্যই তৈরি হয়। আমি সিপিআইএমকে সমর্থন করছি না। আমি মানুষের কথা বলছি। আমি সিপিএমকে সমর্থন করি না। কিন্তু আমার বদলে তাদের এই কেরালা স্টোরির সমালোচনা করা উচিত। কিন্তু তারা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছে।
আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে খুবই দুঃখিত যে আপনাদের দল (সিপিএম) বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। আমি সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, তাঁর পার্টি বিজেপিকে সাহায্য করছে। আর সেই কারণেই কেরালা স্টোরি তৈরি হচ্ছে বিকৃত তথ্য নিয়ে।
বিজেপি আগুন নিয়ে খেলছে। তারা বর্ণ এবং জাতিগত বৈষম্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করে চলেছে। কেরালা স্টোরি বানানো হয়েছে এক শ্রেণির মানুষকে কটাক্ষ করার জন্যই। এই ছবিতে যে সমস্ত দৃশ্য দেখানো হয়েছে, সেই দৃশ্যগুলি রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। সেই জন্যই কলকাতা সহ সব জেলাতে এই ছবির প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বিজেপির দ্বারা মনোনীত হওয়া কিছু তারকা বাংলায় এসেছিল কিছু বিকৃত গল্প নিয়ে। তাঁরা নাকি একটি সিনেমা তৈরি করছে ‘বেঙ্গল ফাইলস’ নামে। তাঁরা তো কাশ্মীরী মানুষকে অসম্মান করার জন্য ‘কাশ্মীর ফাইলস’ তৈরি করেছিল। সাধারণ মানুষদের দোষ কোথায়? এখন তাঁরা কেরালাকে অসম্মান করছে। এবার তাঁরা নিজেদের ন্যারেটিভ দিয়ে বাংলাকে অসম্মান করবে। কানে এসেছে তাঁরা নাকি কিছু পোস্টার তৈরি করেছে বাংলাকে বাঁচাও লিখে। কী হয়েছে বাংলার? শান্তিপূর্ণ একটা রাজ্য এই বাংলা। বিজেপি কেন এই ধর্মীয় ভেদাভেদ তৈরি করছে! আগে তো এসব কোনওদিনই ঘটেনি এই বাংলাতে। আমরা তো সবাই একসঙ্গেই সুন্দরভাবে রয়েছি। এখানে কোনও ঘৃণা চলবে না। কোনও রাজনৈতিক, জাতিগত ঘৃণাকে আমরা প্রোমোট করব না। কোর্ট যদি বলে তবে দেখা যাবে।
***
পিনারাই বিজয়ন, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী
ছবির মাধ্যমে সঙ্ঘ পরিবার, রাজনৈতিক লক্ষ্য প্রচারে কেরলের ধর্ম নিরপেক্ষ পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’
***
কঙ্গনা রানাউত, অভিনেত্রী
দেখুন, আমি সিনেমাটি দেখিনি কিন্তু অনেকেই এই ছবিটি নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। আমি আজ পড়লাম, ভুল হলে শুধরে দেবেন, হাইকোর্ট বলেছে যে সিনেমাটিকে নিষিদ্ধ করা যাবে না। আমার মনে হয় সিনেমাটি আইসিস ছাড়া আর কাউকে খারাপ হিসেবে দেখাচ্ছে না, তাই না? যদি হাইকোর্ট, দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান একথা বলে, তাহলে তারা অবশ্যই সঠিক। ISIS একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। ব্যাপারটা তো এমন না যে আমি ওদের সন্ত্রাসবাদী বলছি, আমাদের দেশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এমনকী বাকি দেশও ওদের তাইই বলে।’ তাঁর কথায়, ‘আমি সেই সকল মানুষের কথা বলছি যাঁদের মনে হচ্ছে এই ছবি ISIS নয়, তাঁদের আক্রমণ করছে। যদি আপনার মনে হয় এটা আপনাকে আক্রমণ করছে তাহলে আপনি সন্ত্রাসবাদী। আমি কিছু বলছি না ভাই, এটা সহজ অঙ্ক।’
***
“আইনি পদক্ষেপ নেব“
সুদীপ্ত সেন, ছবিটির পরিচালক
নিষিদ্ধ শব্দটাই ভুল। এই ছবি সেন্সর বোর্ডে পাশ হয়েছে, আর সেন্সর বোর্ডের সাংবিধানিক স্বীকৃতি রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই ছবি দেখানো বন্ধ করা যাবে না। নিষিদ্ধ করার বিষয়টা ওর ব্যক্তিগত পছন্দের হতে পারে। আমরা এর বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নেব।
***
জে পি নাড্ডা, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি
এক নতুন ধরনের সন্ত্রাসের সৃষ্টি হচ্ছে যেখানে গোলাবারুদের ব্যবহার নেই, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সেই বিষাক্ত সন্ত্রাসবাদকেই প্রকাশ্যে এনেছে। এই ধরনের সন্ত্রাস কোনও রাজ্য বা ধর্মের সঙ্গে জড়িত নয়…।’
***
“এই ধরনের সন্ত্রাসীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে আপনি কী পাচ্ছেন?“
অনুরাগ ঠাকুর, কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী
তাঁদের (বিরোধীদের) মুখ উন্মোচিত হচ্ছে। তাঁরা তুষ্টি ও ভোটব্যাংকের রাজনীতি করছেন। ফিল্ম (দ্য কেরালা স্টোরি) নিষিদ্ধ করে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি শুধুমাত্র বাংলায় একটি মেয়েকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে… এই ধরনের সন্ত্রাসীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে আপনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কী পাচ্ছেন.?
***
“কারও অতিরিক্ত সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ হওয়ার অধিকার নেই”
শাবানা আজমি, বামপন্থী অভিনেত্রী
যাঁরা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ করার কথা বলেন, তাঁরা ততটাই ভুল যাঁরা আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডা’ নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন একবার একটি ফিল্ম পাশ হয়ে গেলে কারও অতিরিক্ত সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ হওয়ার অধিকার নেই।
***
“তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল”
ডঃ সুকান্ত মজুমদার, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপি সভাপতি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারিভাবে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সিনেমাটিকে নিষিদ্ধ করেছেন। অবাক হওয়ার কিছু নেই, এটি তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল।
এটি সত্য গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। দেখানো হয়েছে কিভাবে ইসলামপন্থীরা হিন্দু মেয়েদেরকে লাভ জিহাদে আটকে ফেলে এবং পরে আইএসআইএস সন্ত্রাসী হতে পাঠায়। দিদি চোখ বন্ধ করে বাস্তবতা দেখতে চাযন। তিনি এই রূঢ় বাস্তবতা থেকে পশ্চিমবঙ্গের জনগণকে, বিশেষ করে নারীদের বঞ্চিত করতে চান। পশ্চিমবঙ্গে লাভ জিহাদের ঘটনা সাধারণ। যখনই প্রয়োজন দেখা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ দেশের পথ দেখিয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত তার বিপরীত। নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে, তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন যে পশ্চিমবঙ্গে বাধা দেওয়ার কেউ নেই।”
***
“মুখ্যমন্ত্রী কি জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসআইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল?”
শুভেন্দু অধিকারী, পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা
আমি যত দূর জানি, কেরলে কী ভাবে মহিলাদের মগজধোলাই করেন কট্টরপন্থী ধর্মগুরুরা, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে দ্য কেরালা স্টোরি ছবিটি। ছবিতে দেখানো হয়েছে, কী ভাবে কেরলে মহিলাদের ধর্মান্তরিত করে আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সিরিয়ায় আইএসআইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়। আইএসআইএস এবং তাদের কার্যপদ্ধতির বিরুদ্ধাচারণ করে তৈরি হয়েছে ছবিটি। তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি আইএসআইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল?
এই ছবি দেখানো হলে কেন আইনশৃঙ্খনা বিঘ্নিত হবে? এই ছবি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত। আর যদি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে না পারেন, তা হলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।
***
‘একলা চলো রে’
বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রী, পরিচালক- ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’
এতে, আমি অনুমান করি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিদি আমার কথা বলছেন। হ্যাঁ, খিলাফত কর্তৃক প্ররোচিত ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিতে আমি বাংলায় এসেছি। আর গোপাল পাঁঠার ভূমিকায়। কেন আপনার ভয় হয়?
‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছিল গণহত্যা এবং সন্ত্রাস নিয়ে। কিসের ভিত্তিতে কাশ্মীরি জনগণকে অপমান করা হয়েছে বলে আপনি মনে করেন? কোন রাজনৈতিক দলের অর্থায়নে আপনি এত বিদ্বেষপূর্ণভাবে বলছেন? আমি কেন আপনার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা এবং গণহত্যা অস্বীকারের মামলা করব না? এ ছাড়াও, ছবিটির নাম ‘দ্য দিল্লি ফাইলস‘, ‘বেঙ্গল ফাইল’ নয়। এবং কেউ আমাকে চুপ করতে পারে না।
প্রসঙ্গত, এর আগে বিবেক অগ্নিহোত্রী
‘দ্য কেরালা স্টোরি’র নায়িকা অদা শর্মা ও পরিচালক সুদীপ্ত সেনকে যুক্ত করে টুইটারে লেখেন, “আপনাদের অভিনন্দন এমন এক সাহসী প্রচেষ্টার জন্য। একই সঙ্গে আপনাদের খারাপ খবরটি জানিয়ে রাখি, এখন থেকে আপনাদের জীবন আর আগের মতো থাকবে না। ভাবতে পারবেন না, এত ঘৃণা পাবেন সকলের কাছ থেকে। দমবন্ধ হয়ে আসবে। মাঝেমধ্যে ভাবনাচিন্তার শক্তি হারিয়ে যাবে, ভেঙে পড়বেন। কিন্তু মনে রাখবেন, যাঁরা ভার বহন করার ক্ষমতা রাখেন, ইশ্বর তাঁদেরই পরীক্ষা নেন।” সব শেষে পরিচালক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘একলা চলো রে…’ গানটির উল্লেখ করেন।”
***
“ধিক্কার জানাই এই তোষণ-নীতিকে“
অচিন্ত্য বিশ্বাস, শিক্ষাবিদ, প্রাক্তন উপাচার্য
‘কেরালা স্টোরি’ প্রদর্শন বন্ধ করে বোঝানো হল “পশ্চিম বঙ্গের স্টোরি”-ও তাই।
ধিক্কার জানাই এই তোষণ-নীতিকে।
***
“ছবি নিষিদ্ধ করাটা একটা স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত“
বিকাশ ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট আইনজীবী, সাংসদ
কোনও শিল্প তা যতই বিকৃত হোক না কেন তাকে ব্যান করে প্রকৃত পক্ষে প্রচার পাইয়ে দেওয়া। বরং যেটা দেখানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে পালটা তথ্য রাখাই ভালো। কেরল সরকার এই ছবি নিষিদ্ধ করেনি। কেরলের মানুষ তথ্য দিয়ে এই ছবির বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে পালটা আলোচনা তুলছেন। পালটা বিতর্কের পরিসর তৈরি না করে নিষিদ্ধ করে দেওয়াটা আরএসএস-এর অভ্যাস। মমতা সেপথেই গেলেন। এর মধ্যে একটা বিপজ্জনক প্রবণতা আছে। আমি অন্তত এই ধরণের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করি না।
***
“শিল্পের উপর চরম আঘাত“
শমীক ভট্টাচার্য, রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র
আমরা রাজ্যের সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানাই। পরিচালক একটি সিনেমা করেছেন কিছু সত্যের ভিত্তিতে। বামপন্থীদের তৈরি করা শব্দ এই লাভ জিহাদ। দেশের সব মুসলিম আইসিস নয়। ভোটের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত। শিল্পের উপর চরম আঘাত। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। অতীতে লজ্জাকে কেন্দ্র করে যা হয়েছিল, আজকেও একই সিদ্ধান্ত।
***
“নিষিদ্ধ ঘোষণাকে আমি পূর্ণ সমর্থন করি”
কৌশিক সেন, বিশিষ্ট অভিনেতা
সামনে কর্নাটক নির্বাচন, ঠিক তার আগেই এই ছবি মুক্তি পাওয়া, এবং ছবিকে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলছেন। ফলে এটা নিয়ে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব খারাপ খারাপ মন্তব্য আসছে। বিশেষ করে গরিব মানুষ তাঁদের বিপদ বর্তমানে সব থেকে বেশি। কারণ তাঁরা সিনেমাহলে যান না, এ সব বিজ্ঞ আলোচনায় থাকেন না। দাঙ্গায় তাঁরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। সেই দায়টা কিন্তু সরকারের কাঁধে পড়বে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে, বাংলার কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া। এটা কেরালার সত্যিকারের ছবি নয় বলেই আমি বিশ্বাস করি। ফলে সেই নিষিদ্ধ ঘোষণাকে আমি পূর্ণ সমর্থন করি।
***
“বে-আইনকে কারা সমর্থন করছে?“
প্রতীম রঞ্জন বোস, গবেষক, কলম লেখক, প্রাক্তন ডেপুটি এডিটর ‘দি হিন্দু বিজনেস লাইন’
কৌশিক সেন বামপন্থী পরিবারের সন্তান। কড়া বিজেপি বিরোধী। এই অবধি ঠিক আছে। কার টক ভালো লাগে,কার ঝাল, সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এই পরিচয়গুলোর আসল মানে বেরিয়ে আসে যখন এই কৌশিক সেন আরএসএসের মত সংগঠনের নামে ভুয়ো সাম্প্রদায়িক কথা বলেন; “বাক-স্বাধীনতা,” “আইন” নিয়ে লম্বা বক্তৃতা দেন আবার সেই একই লোক ‘দি কেরালা স্টোরি’ ব্যান করার সপক্ষে বলেন। শুধু তাই নয়, এই ভদ্রলোক জানেন যে কেরালা হাইকোর্ট এই ‘ব্যান’-এর পক্ষে কোন রায় দেয় নি। উল্টে সিনেমা দেখার পক্ষেই আছে, অন্তত আজ পর্যন্ত। অর্থাৎ মমতা ব্যানার্জি বেআইনি ভাবে গায়ের জোরে সিনেমা দেখা বন্ধ করছেন। আর সেই বে-আইনকে কারা সমর্থন করছে? কড়া বামপন্থী। তাহলে বামপন্থী মানে কি? যারা শুধু গায়ের জোর বোঝে, নিজেদের কথা অন্যের ওপর চাপাতে চায়। যারা মনে করে বাক-স্বাধীনতা মানে হল শুধু নিজেদের বক্তব্যের স্বাধীনতা। অন্য মতকে তাদের কাছে পরাধীন থাকতে হবে। এটাই বামপন্থা। ইরফান হাবিব যত বড় ইতিহাসবিদ ঠিক ততটাই গুন্ডা। ইউটিউব খুলে দেখে নেবেন কেরালার গভর্নর এবং যথেষ্ট পন্ডিত আরিফ মহম্মদ খানের মাইক কেড়ে নেবার চেষ্টার দৃশ্য। এদের এতটুকু জায়গা দেওয়া আর গনতন্ত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা একই ব্যাপার।
***
রুদ্রনীল ঘোষ, অভিনেতা, আহ্বায়ক বিজেপি রাজ্য সাংস্কৃতিক সেল
ওনার নেতা কর্মীদের দিয়ে চুরি করিয়েছেন, উনি বাংলার হিন্দু-মুসলিম প্রত্যেক নাগরিকের জীবন জীবিকা অধিকার চুরি করিয়েছেন… এবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, মুসলিম সম্প্রদায় তাঁর পাশ থেকে সরে গিয়েছেন। আমি তোমাদের ভাল চাই, আমি তোমাদের কোনও ক্ষতি হতে দেব না, এই মিথ্যে অযুহাতে তিনি নাটকটা করলেন। চিত্রনাট্যে ওনার এত সমস্যা হচ্ছে কেন? ধোপে টিকবে না, প্রযোজক পরিচালক যদি কোর্টে যান, রাজ্যসরকারের মুখ পুরবে।
***
“এখন বাঙালি পরিচালক কবে ফতোয়ার নামে দেশছাড়া হন, সেটাই দেখার“
ডঃ রঞ্জন বন্দোপাধ্যায়, জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সংঘের প্রাক্তন প্রদেশ কার্যনির্বাহী সদস্য ।
বহু চর্চিত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ যে পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ হবে – তা এক প্রকার নিশ্চিত ছিল। এখন বাঙালি পরিচালক কবে ফতোয়ার নামে দেশছাড়া হন, সেটাই দেখার।
ইস্কুল জীবনে একটি সিনেমা (অরবিন্দ স্বামী ও মনীষা কৈরালা অভিনীত) মালদা জেলার বেশ কয়েকটি সিনেমা হলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে শুনেছিলাম। তিন দশকের মধ্যে মালদার সেই ছোট্ট জায়গাটার হাওয়া গোটা রাজ্যটিকে গ্রাস করেছে, সেটাও অজানা ছিল না। বামপন্থী তথা বুদ্ধিজীবীরা যে এবারও নিশ্চুপ থাকবেন— সেটাও অজানা নয়। তবে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়া একটি সিনেমা গোটা দেশের জনগণ দেখবেন— এটুকু গণতান্ত্রিক অধিকার এ রাজ্যের মানুষেরও আছে।
সামান্য আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে ধরে নিয়ে সেই অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য সোচ্চারে ধিক্কার জানাই। আমরা কিন্তু আইনের আশ্রয় নেবো।
***
“আমার খুব খারাপ লেগেছে শুনে“
মানসী সিনহা, অভিনেত্রী
এ রাজ্যে তো অনেক রকমই খারাপ কাজ হচ্ছে। ছবিটি রাজ্যে নিষিদ্ধ করে দেওয়াটাও তার মধ্যে অন্যতম। এই ছবি শুধুমাত্র ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলছে বলে? এই ছবি তো ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলছে না, ধর্মকে কাজে লাগিয়ে যারা খারাপ কাজ করে, সেই লোকগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলছে এই ছবি। ধর্মকে অপব্যবহার করে বাইরের দেশে কি হচ্ছে, সেই বিষয়টা তো পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের জানা প্রয়োজন।
***
“এটা তো শিল্পের উপর বল প্রয়োগ“
জয়জিৎ বন্দোপাধ্যায়, অভিনেতা
সেন্সর বোর্ড যদি ছবিটাকে রিলিজ করে দেয়, তবে ছবিটা আটকানোর মানেটা কী, তা বুঝতে পারলাম না। ছবি মুক্তির পর যখন তখন, যে কোনও জায়গা থেকে যদি ছবি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়, এটা তো শিল্পের উপর বল প্রয়োগ। এরপর থেকে তো তাহলে সেন্সর বোর্ডের কোনও ভ্যালু থাকবে না। প্রতিটি রাজ্য যদি আলাদা ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের রাজ্যে ছবিটি দেখানো হবে কিনা।