ময়মনশিংহ শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হচ্ছে শশী লজ। এটি মুক্তাগাছা জমিদারদের শহুরে আবাসস্থল যেখানে বসবাস ও চিত্ত বিনোদনের সকল ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। এই রাজবাড়িটি ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে কোর্ট কাচারি এলাকায় অবস্থিত।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে মুক্তাগাছার স্বনামধন্য জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী তাঁর দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য এর নামে নয় একর ভূমির ওপর শশী লজ নামে একটি দ্বিতল রাজ প্রাসাদ তৈরি করেন। কথিত আছে যে, দ্বিতল মহলটি এর সৌন্দর্যের কারনে ক্রিস্টাল হাউজ নামে সমাদৃত ছিল। পরম যত্নে তৈরিকৃত ঐ রাজ প্রাসাদটি ১৮৯৭ সনে ঘটে যাওয়া গ্রেট ইন্ডিয়ান ভুমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায়। এরপরে সূর্যকান্তের পুত্র শশীভূষণ আচার্য ১৯০৫ সনে একই স্থানে বর্তমান সুরম্য ও দৃষ্টি নন্দন ভবনটি তৈরি করেন। ১৯১১ সালে শশী লজের সৌন্দর্য বর্ধনে আরও কিছু সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়। নবীন জমিদারের প্রচেষ্টায় শশী লজ হয়ে ওঠে আভিজাত্যপূর্ণ, দৃষ্টিনন্দন রাজমহল।
বৃহৎ ভবনটি ১৯৫২ সনে অধিগ্রহন করে সরকার এখানে মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে ১৯১৫ সনে বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শশী লজটির ছয় একর জায়গা অধিগ্রহণ করে এবং মূল ভবনটিকে জাদুঘর হিসেবে রূপান্তরিত করে ১৯১৯ সনে সন সাধারনের জন্য উন্মুক্ত করেন।
পূর্ব পশ্চিমে বিস্তৃত শশী লজে আঠারোটি বিশাল বিশাল কামরা রয়েছে। প্রায় প্রতিটি কক্ষেই ঝাড়বাতি আছে। ভবনের ভেতরে রয়েছে নাচঘর, শয়ন কক্ষ ও অন্যান্ন কক্ষ। রাজ বাড়ির সম্মুখেই রয়েছে রোমান পুরানের প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবি ভেনাসের শুভ্র সুন্দর মর্মর প্রতিমূর্তি। বৃত্তাকার নান্দনিক ফোয়ারার মাঝে স্থাপিত ভেনাসের এই ভাস্কর্যটি রাজা শশী ভূষণ ইতালি থেকে তৈরি করিয়ে এনেছিলেন।
রাজবাড়ির পেছনে প্রশস্ত দিঘির পাড়ে রয়েছে অপূর্ব সুন্দর জলঘর নামক একটি দ্বিতল স্নান ঘর। স্নান ঘরটি থেকে মর্মর পাথরের সিঁড়ি নেমে গেছে দিঘির জলে। সিঁড়ির দুই পাশে দুটি পদ্ম ফুল সাদৃশ্য ঘাটলার দিকে তাকালে মনে হয় যেন পদ্ম ফুটে আছে।
জল ঘরের সন্নিকটেই একটি সুরঙ্গ পথ বর্তমানে পরিত্যাক্ত হিসেবে এখনো বিদ্যমান। জন শ্রুত আছে যে এই সুরঙ্গ পথ দিয়ে মুক্তা গাছা থেকে জমিদারগন ময়মনসিংহের এই রাজবাড়িতে যাতায়াত করতেন।
রাজবাড়ির আঙ্গিনা জুড়ে রয়েছে নানা প্রাচীন বৃক্ষ রাজি ও নানা ফুলের সমারোহ। সবুজ মায়াময় এই রাজবাড়িটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের এক অনন্য প্রত্ন নিদর্শন।