গত চার বছরে মে মাসে চারটি বড় মাপের ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। তার মধ্যে আমপান এবং ইয়াস আছড়ে পড়েছিল এ রাজ্যে। এ বারও কি সেই মে মাসে ফের তেমন কোনও বিপদ ঘনাবে?
এমন জল্পনা শুরু হওয়ার কারণ, আগামী কয়েক দিনে একটি নিম্নচাপ দানা বাঁধতে চলেছে বঙ্গোপসাগরে। সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম কী হবে, তা কোন দিকে যেতে পারে, এই সমস্ত কিছু নিয়ে সমাজমাধ্যমে বিস্তর আলোচনা। যদিও মৌসম ভবন জানাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবেই, এমন নিশ্চয়তা এখনও নেই। আগামী শনিবার নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে পারে। তৈরি হওয়ার পরের ৪৮ ঘণ্টায় সেটি শক্তি বৃদ্ধি করে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
তবে নিম্নচাপ থেকে ক্রমাগত শক্তি বাড়িয়ে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কি না কিংবা ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার পরে সেটি কোথায় আছড়ে পড়বে, তার উত্তর এখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। কিন্তু মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ের জেরে দুর্ভোগের স্মৃতি ফিকে না হওয়ায় সাধারণ মানুষের আশঙ্কা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন আবহবিদেরাও।
মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্রের বক্তব্য, ৫ থেকে ১১ মে-র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হবে, তা আগেই জানানো হয়েছিল। পরে নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে এবং সেটি শক্তি বৃদ্ধি করে যে গভীর নিম্নচাপের চেহারা নিতে পারে, তা-ও মৌসম ভবনের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছিল।
পূর্বাভাসের কয়েকটি পদ্ধতি (মডেল) দাবি করছে, গভীর নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। কিন্তু সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। নিশ্চিত হলে তবে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হবে।
আবহবিদদের অনেকে বলছেন, বর্ষার ঠিক আগে এবং বর্ষা বিদায়ের ঠিক পরে আবহাওয়া ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল থাকে। তাই মে এবং অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় অস্বাভাবিক নয়।
ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা এখনও জারি না হলেও, রাজ্য প্রশাসন আগেভাগে কোমর বাঁধছে। মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যসচিব। বন্যা মোকাবিলায় ডিভিসি-র জলাধার থেকে জল ছাড়ার আগে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। বর্ষা শুরুর আগে নদী-বাঁধের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে সেচ দফতর। ১ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত থাকবে বিশেষ কন্ট্রোল রুম। ত্রাণ মজুত আছে কি না এবং উপকূলবর্তী এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় শিবিরের কী পরিস্থিতি, তা-ও খতিয়ে দেখতে বলেছেন মুখ্যসচিব।