রাজ্যের বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যুতে মিলিতভাবে এবার পথে নামতে চলেছে আরএসএস পরিচালিত বিভিন্ন সংগঠনের মিলিত ফোরাম। আগামী ৫ই মে শুক্রবার বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন মিছিল ও সমাবেশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সিটিজেন এমপাওয়ারমেন্ট ফোরামের উদ্যোগে। ফোরামের তরফে এই মিছিল সমাবেশকে অরাজনৈতিক বলে দাবি করা হয়েছে।
“বুদ্ধ দিবসে মহাপরি নির্বাণ পদযাত্রা” নাম দেওয়া দিয়েছে এই কর্মসূচির। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এই কর্মসূচিতে বিজেপি সমর্থকদের উপস্থিতি চাইলেও নেতৃত্বকে ফোরাম সেভাবে চাইছে না, কারণ তাদের দাবি, এটা অরাজনৈতিক কর্মসূচি।
এর আগে রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে অশান্তি কিংবা হনুমান জয়ন্তীতেও টুকরো টাকরা অশান্তি ঘিরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে মৌখিক সংঘাতে জড়িয়েছেন সংঘ পরিবারের একাধিক নেতা। কিন্তু সরাসরি তৃণমূলের বিরুদ্ধে কখনও পথে নামেননি তাঁরা। কোনও মিছিল কিংবা সভা করতে দেখা যায়নি তাদের।
এই ফোরামের অন্যতম উদ্যোক্তা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় নেতা শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, এখন যা পরিস্থিতি তাতে বাংলা সর্বস্তরের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের পথে নামা উচিত। হিংসা নির্যাতনের রাজ্য হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ, এত খারাপ অবস্থা অতীতে দেখা যায়নি। নারী নির্যাতন থেকে বিরোধী রাজনীতির লোকেদের খুন করা প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে গোটা রাজ্য। চাকরি বিক্রি করে জেলে গেছেন মন্ত্রী নেতারা। পঞ্চায়েত প্রধানের স্ত্রী সধবা হলেও বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। তাই সকলের পথে নামা উচিত। তিনি জানান তাঁরা অরাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি করে সকলকে পাশে নিতে চাইছেন।
তবে শুধু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নয় এ ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে ও সরব হয়েছেন শচীন্দ্রনাথ। তিনি বলেছেন তৃতীয় বার তৃণমূল ক্ষমতায় আসার দু’বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে যে সন্ত্রাস শুরু হয়েছে তা এখনো শেষ হয়নি। বাংলার বহু মানুষ এখনো ঘরছাড়া। হয় অন্য জেলা না হলে অন্য রাজ্যে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে তাদের। কাশ্মীরে আশির দশকে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তারই লক্ষণ এখানেও দেখা যাচ্ছে। সামনে হয়তো এমনও একটা দিন আসতে পারে যখন বাংলার মানুষকে ১৯৪৭ কিংবা ১৯৭১ সালের মতো উদ্বাস্তু হতে হবে।
আগামী শুক্রবার এই মিছিল হবে। প্রথমে জমায়েত উত্তর কলকাতার স্বামী বিবেকানন্দের পৈত্রিক বাসভবনের সামনে। সেখান থেকে মিছিল শুরু হয়ে যাবে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে। মেট্রোরেলের এক নম্বর গেটের সামনে সমাবেশের মঞ্চ বাধা হবে। জানা গেছে ইতিমধ্যে পুলিশের অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। সে আবেদন মঞ্জুর না হলে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতিও রেখেছে ফোরাম।
২৩ জানুয়ারি এই প্রথম আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত কলকাতা এসে নেতাজির জন্মদিন পালন করেন। শহীদ মিনার ময়দানে সমাবেশ হয়। এবার রাজনৈতিক ইস্যুতেও পথে নামছে সংঘ পরিবারের একাধিক সংগঠন। তাহলে কি সবকিছুর লক্ষ্য আগামী লোকসভা নির্বাচন? যদিও শচীন্দ্রনাথ বলেছেন, “এর সাথে রাজনীতিকে মিলিয়ে ফেলার কোনও অর্থ নেই। আমরা রাজনীতির কথা বলছি না। বাংলায় যা চলছে তা সামাজিক বিপদ, সাংস্কৃতিক অবক্ষয়, তার বিরুদ্ধে আমরা পথে নামছি। বাংলায় যা চলছে তা নিয়ে আমরা বেঙ্গল ফাইলস বানাতে চাই। রাজ্যবাসীকে দেখাতে চাই বর্তমান সরকারের আমলে বাংলায় কী কী অন্যায় হয়েছে এবং হয়ে চলেছে।”