প্রথম গুরু নানক, জন্ম ১৫ এপ্রিল ১৪৬৯, মৃত্যু ২২ সেপ্টেম্বর ১৫৩৯, আয়ুষ্কাল প্রায় ৭০ বৎসর। গুরু গ্রন্থ সাহিবের জন্য ৯৭৪ টি দোহা রচনা করেন। তিনি নিজ-পুত্র শ্রীচান্দকে ছাপিয়ে প্রিয় শিষ্য লেহনা-কে (নতুন নাম অঙ্গদ) পরবর্তী গুরু মনোনীত করেন।

দ্বিতীয় গুরু অঙ্গদ, জন্ম ৩১ মার্চ ১৫০৪, গুরুপদে আসীন ৭ সেপ্টেম্বর ১৫৩৯, মৃত্যু ২৯ মার্চ ১৫৫২, আয়ুষ্কাল ৪৮ বৎসর। গুরু নানক তাঁকে নিজের ‘অঙ্গ’ মনে করতেন, তাই তাঁর নতুন নাম দিয়েছিলেন ‘অঙ্গদ’। তিনি ৬৩ টি দোহা রচনা করেছিলেন।শিখদের একটি পৃথক সম্প্রদায় রূপে বিন্যস্ত করা এবং গুরুমুখী লিপির প্রবর্তন করা তাঁরই অবদান। তিনি নিজের পুত্রকে বাদ দিয়ে পরবর্তী গুরুপদে তাঁর শিষ্যকে মনোনীত করেন।

তৃতীয় গুরু অমরদাস, জন্ম ৫ মে ১৪৭৯, গুরুপদে আসীন ২৬ মার্চ ১৫৫২ (৭৩ বছর বয়সে), মৃত্যু ১ সেপ্টেম্বর ১৫৭৪, আয়ুষ্কাল ৯৫ বৎসর। ৮৬৯ টি দোহা রচনা করেন। শিখগুরুদের মধ্যে সব চাইতে বেশি বয়সে (৬০ বছর) শিখ মতাবলম্বী হন এবং বেশি বয়সে (৭৩ বছর) গুরু পদে আসীন হন। তিনি তাঁর পুত্রকে বাদ দিয়ে জামাতাকে গুরুপদে আসীন করেন।

চতুর্থ গুরু রামদাস, জন্ম ২৪ সেপ্টেম্বর ১৫৩৪, গুরুপদে আসীন ১ সেপ্টেম্বর ১৫৭৪, মৃত্যু ১ সেপ্টেম্বর ১৫৮১, আয়ুষ্কাল ৪৬ বৎসর। তিনি ৬৩৮ টি দোহা রচনা করেন। নিজ পুত্রকে পরবর্তী গুরুপদে মনোনীত করেন। এরপর গুরু রামদাসের বংশাধারা থেকেই গুরু গোবিন্দ সিং পর্যন্ত গুরু মনোনীত হয়েছেন।

পঞ্চম গুরু অর্জুন , জন্ম ১৫ এপ্রিল ১৫৬৩, গুরুপদে আসীন ১ সেপ্টেম্বর ১৫৮১ , মৃত্যু ৩০ মে ১৬০৬, আয়ুষ্কাল ৪৩ বৎসর। তিনি গুরু গ্রন্থ সাহিব সম্পাদনা করেছিলেন। তিনি মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের দ্বারা বন্দী হন এবং ইসলাম কবুল না করবার জন্য অত্যাচারিত হন। তিনিই প্রথম হুতাত্মা শিখ গুরু যিনি ধর্মের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু তিথি শহীদি দিবস রূপে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিরোমণি গুরুদোয়ারা প্রবন্ধক সমিতি।

ষষ্ঠ গুরু হর গোবিন্দ, জন্ম ১৯ জুন ১৫৯৫ , গুরুপদে আসীন ২৫ মে ১৬০৬ , মৃত্যু ৩ মার্চ ১৬৪৪ , আয়ুষ্কাল ৪৮ বৎসর। তিনি সবথেকে বেশি সময়ব্যাপী শিখ গুরু ছিলেন : ৩৭ বৎসর, ৯ মাস, ৩ দিন। মানবতাকে রক্ষার জন্য এবং আগ্রাসন রোধ করার জন্য তিনি শিখজাতিকে যোদ্ধা হিসাবে পরিগণিত করার সূচনা করেন। তিনি অকাল তখত প্রতিষ্ঠা করেন। গুরুপদে আসীন অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে মুঘল আক্রমণাত্মক অমৃতসরের যুদ্ধ ঘটে (১৬৩৪) এবং শিখ-মুঘল সংঘর্ষমূলক উত্তেজনা বাড়ে।

সপ্তম গুরু হর রাই, জন্ম ১৬ জানুয়ারি ১৬৩০, গুরুপদে আসীন ৩ মার্চ ১৬৪৪, মৃত্যু ৬ অক্টোবর ১৬৬১, আয়ুষ্কাল ৩১ বৎসর। তিনি সুফিবাদে বিশ্বাসী দারা শিকোকে ঔরাঙ্গজেবের বিরুদ্ধে আশ্রয় দেন।

অষ্টম গুরু হর কিষান , জন্ম ৭ জুলাই ১৬৫৬, গুরুপদে আসীন ৬ অক্টোবর ১৬৬১, মৃত্যু ৩০ মার্চ ১৬৬৪, আয়ুষ্কাল ৭ বৎসর। গুটিবসন্তে তাঁর মৃত্যু হয়, সর্বাপ্রেক্ষা কম সময় ব্যাপী তাঁর গুরুগিরি, মাত্র ২ বছর ৫ মাস ২৪ দিন।

নবম গুরু তেগ বাহাদুর, জন্ম ১ এপ্রিল ১৬২১, গুরুপদে আসীন ২০ মার্চ ১৬৬৫, মৃত্যু ২৪ নভেম্বর ১৬৭৫, আয়ুষ্কাল ৫৪ বৎসর। তিনি হিন্দু কাশ্মীরি এবং অ-মুসলিমদের ইসলামীকরণের বিরোধিতা করে ঔরঙ্গজেবের চক্ষুশূল হয়েছিলেন এবং তার নির্দেশে সর্বসমক্ষে শিরশ্ছেদনে মৃত্যুবরণ করেন। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত তিনি শিখ ছিলেন।

দশম গুরু গোবিন্দ সিং, জন্ম ২২ ডিসেম্বর ১৬৬৬, গুরুপদে আসীন ১১ নভেম্বর ১৬৭৫, মৃত্যু ৭ অক্টোবর ১৭০৮, আয়ুষ্কাল ৪১ বৎসর। তিনি ছিলেন আদর্শ পৌরুষের প্রতীক, নেতা, যোদ্ধা আবার পাশাপাশি কবি ও দার্শনিক। শিখ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় খালসা প্রবর্তন হয় তাঁর গুরুপদে আসীন অবস্থায়। মুঘল আর মুঘল সহায়ক রাজশক্তির বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে ২০ টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শিখ শক্তি। তিনিই শেষ মানব শিখগুরু, তারপর গুরু হলেন পবিত্র শিখ ধর্মগ্রন্থ যাতে শিখপন্থার যাবতীয় দর্শন ও নির্দেশ সন্নিবেশিত হয়েছে।

একাদশ গুরু গ্রন্থ সাহিব, গুরুপদে আসীন ৭ অক্টোবর ১৭০৮।

ড. কল্যাণ চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.