‘ওয়ান ম্যান শো’! ঠিক একজনই কলকাতায় এসে কলকাতার মুখের থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেলেন। তিনি হ্যারি ব্রুক (Harry Brook)। ব্রিটিশ ব্যাটারের বিধ্বংসী ইনিংসই আর কলকাতাকে আপাতত জয়ের হ্যাটট্রিক করতে দিল না। এদিন ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens, Kolkat) মুখোমুখি হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (Kolkata Knight Riders vs Sunrisers Hyderabad)। ক্রিকেটের নন্দনকাননে নাইটদের লড়েও হারতে হল এদিন। পঞ্জাবকে আট উইকেট হারিয়ে কলকাতায় খেলতে আসা ‘অরেঞ্জ আর্মি’ এদিন জিতল ২৩ রানে।
নাইটরা এদিন টস জিতে ব্যাটিং করতে পাঠিয়েছিল সানরাইজার্সকে। ব্রুক ব্যাট করতে নেমে এদিন বুঝিয়ে দিলেন কেন নিজামের শহরের ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে ১৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে দলে নিয়েছে। এদিন ব্রুক ময়াঙ্ক আগরওয়ালের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে ৫৫ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস খেলেন। ১২টি চার ও ৩টি ছয়ে সাজান নিজের ইনিংস। ব্রুকের স্ট্রাইক রেট ছিল ১৮১.৩২। ব্রুকের ব্যাটে ভর করেই হায়দরাবাদ চার উইকেট হারিয়ে ২২৮ রান তোলে এদিন। ব্রুক ছাডাও রান পেলেন ক্যাপ্টেন এডেন মারক্রম। চারে ব্যাট করতে নেমে তিনি ২৬ বলে ৫০ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। পাঁচে নামা অভিষেক শর্মা ১৭ বলে ৩২ করেন। ছয়ে নেমে হেনরিক ক্লাসেন ৬ বলে অপরাজিত ১৬ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে যান। হায়দরাবাদের চার উইকেটের মধ্যে তিন উইকেটই আন্দ্রে রাসেলের। এক উইকেট স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীর।
২০ ওভারের ফরম্যাটে ২২৯ রানের টার্গেট কখনই সোজা নয়। রান তাডা় করতে নেমে শুরু থেকেই থাকে চাপ। কেকেআর এদিন শুরুর চাপটা নিতে পারেনি। ৩.৩ ওভারে মাত্র ২০ রান তুলতে গিয়ে কলকাতার তিন উইকেট চলে যায়। রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও নারায়ণ জগদিশন ওপেন করতে নেমেছিলেন। ভালো ফর্মে থাকা আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ এদিন কোনও রান না করেই ফিরে যান। ভুবনেশ্বর কুমারের বলে ক্যাচ তুলে দেন উমরান মালিকের হাতে। এরপর তিনে ব্যাট করতে আসা ভেঙ্কটেশ আইয়ার ১১ বলে ১০ রান করে আউট হয়ে যান। মার্কো জানসেনের বলে মারক্রমের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। এরপর সুনীল নারিন ফেরেন খালি হাতে। এবারও উইকেট নিলেন জানসেন। ক্যাচ সেই মারক্রমের হাতে। জগদিশন ২১ বলে ৩৬ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে ফিরে যান। জগদিশন যখন ফেরেন, তখন কেকেআরের স্কোর চার উইকেট হারিয়ে ৮২।
কেকেআরকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়বেন। এই মানসিকতা নিয়েই ব্যাট হাতে নেমেছিলেন নীতীশ রানা। পাঁচে নামা রানা ভেবেছিলেন, এদিন হয়তো তিনি পাশে পাবেন রাসেলকে। সানরাইজার্সের ইনিংসের সময়ে পায়ের চোটে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল রাসেলকে। তবে রাসেল নামেন ব্যাট করতে। কিন্তু এদিনও তিনি ব্যর্থ হলেন। ছ’টি বল খেললেন তিনি। ফিরলেন তিন রান করে। এরপর নীতীশ ও রিঙ্কুই হয়ে উঠছিলেন ত্রাতা। তবে নীতীশ ফিরতেই কার্যত কেকেআরের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। নাইট অধিপতি ৪১ বলে লড়াকু ৭৫ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন। টি নটরাজনের বলে তিনি ক্যাচ তুলে দেন ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে। কেকেআরের জয়ের জন্য যখন ২১ বলে ৪৫ রান বাকি ছিল, তখন নামেন শার্দূল ঠাকুর। ইদানি যিনি ফিনিশারের ভূমিকায় হয়ে উঠেছেন ‘লর্ড’। শেষ ওভারে কলকাতার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩২ রান। শার্দুল আর কামাল করতে পারলেন না। ৭ বলে ১২ রান করে ফিরলেন। অন্যদিকে কেকেআর ফ্যানরা ফের রিঙ্কুর ম্যাজিকের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু রোজ রোজ যে ম্যাজিক হয় না। রিঙ্কু এদিন অপরাজিত থাকলেন ৩১ বলে ৫৮ রান করে। তবে রিঙ্কুর ধারাবাহিকতা ও কেকেআরের নিয়মিত ২০০ প্লাস করে ফেলাটা, নিঃসন্দেহে হারের মধ্যে বাড়তি অক্সিজেন দেবে কলকাতাকে।