লোকসভায় বঙ্গ বিজেপিকে ৩৫টির বেশি আসনের টার্গেট ঠিক করে গেলেন মোদীর সেনাপতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা। সেই সঙ্গে ২০২৫ সালের আগেই পিসি ভাইপোর সরকার পড়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। দেশের সুরক্ষার জন্য মোদীকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে বলে সাওয়াল করেন অমিত শা।
এদিন দুপুরে সিউড়ির বেণিমাধব স্কুল সংলগ্ন মাঠে সভায় বক্তব্য রাখেন অমিত শা। শুরুতেই শুভ নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানান বাংলার মানুষকে। এরপরেই বগটুই কাণ্ডে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং প্রণাম জানান। বীরভূমের বাউল, কবিয়াল, কীর্তন সহ সমস্ত শিল্পীদের প্রণাম জানান। তিনি বলেন, “এরাজ্যে যখন আদিবাসীরা অত্যাচারিত হচ্ছে তখন ভারতবর্ষে প্রথম আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসিয়ে সম্মান জানিয়েছেন মোদী”।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ বিজেপিকে ৭৭টি আসনে জিতিয়ে দায়িত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, “আমাদের ৭৭ আসনে জিতিয়ে দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমাদের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একাই দিদির দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন। দুর্নীতিগ্রস্থদের জেলের ভিতর যেতে হবে”। বক্তব্য রাখতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, “২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৩৫টির বেশি আসন বিজেপিকে দিয়ে মোদীকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী বানান। ‘দিদি ভাতিজা’র জুলুম হঠাতে, বাংলাকে সন্ত্রাস মুক্ত করতে, অনুপ্রবেশ রুখতে একমাত্র প্রয়োজন বিজেপি। অসমে অনুপ্রবেশ রুখে গিয়েছে। কারণ সেখানে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। আপনারা ৩৫টির বেশি লোকসভায় আসন দিলে ২৫ সালের আগেই মমতার সরকার পড়ে যাবে। একবার বাংলায় বিজেপিকে আনুন এখানে রামনবমীর মিছিলে হামলা হবে না। এখানে মমতার তুষ্টিকরণের জন্য মিছিলে হামলা হচ্ছে। রামনবমীতে হাওড়া, রিষড়ায় ঝামেলা হয়েছে। তৃণমূলের তুষ্টিকরণের কারণে এসব হচ্ছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে রামনবমীর মিছিলে হামলা করার ক্ষমতা কারও থাকবে না, অনুপ্রবেশ ঘটবে না”।
সন্ত্রাস প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে এদিন অমিত শাহ বলেন, “বীরভূম থেকে ৮০ হাজার ডিটোনেটর, ২৭ হাজার কিলোগ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার হয়েছে। এনআইএ তদন্তে নেমে এসব উদ্ধার করেছে। দুষ্কৃতীদের একে একে গ্রেফতার করছে। তা না হলে বীরভূমের বহু মানুষের ক্ষতি হত”। অমিত শা বলেন, “দিদি গরিবের জন্য কাজ করছে না। দিদির একমাত্র লক্ষ্য ভাতিজাকে মুখ্যমন্ত্রী বানানো। দিদির সরকার এতো দুর্নীতি করেছে বেকার যুবকদের চাকরির নামে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছে। ইডিকে ২ ট্রাক টাকা নিয়ে যেতে হয়েছে। বাংলায় বেকারদের চাকরি না দিয়ে এখানকার নেতা মন্ত্রীরা অট্টালিকা বানাচ্ছে”। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “যার বাড়ি থেকে ২১ কোটি টাকা উদ্ধার হচ্ছে তাকে গ্রেফতার করে কোনো ভুল করা হয়েছে”? এই জেলার এক দুর্নীতিগ্রস্থ এখন জেলে। ভারত সরকার যাকে গরু পাচারের মামলায় জেলে ভরছে দিদি তাকে এখনও জেলা সভাপতি পদে রেখে দিয়েছে। কেন?বিভিন্ন প্রকল্পের নাম বদল প্রসঙ্গে অমিত শাহ বলেন, “করোনা অতিমারির সময় থেকে এখনও মোদী ৫ কেজি করে চাল দিচ্ছে। আর মমতা নিজের মুখের ছবি লাগাচ্ছে। ছবি না লাগিয়ে আপনিও ৫ কেজি চাল দিন। তাহলে মানুষ দশ কেজি করে চাল পাবে”।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর অভিযোগ, “আয়ুষ্মান ভারত এখানে চালু করতে দিচ্ছে না দিদির সরকার। বিজেপিকে নিয়ে আসুন আমরা ৫ লক্ষ টাকার আয়ুষ্মান বীমা দেব প্রতিটি পরিবারে। আমরা মমতার হিটলাররি শাসন চলতে দেব না। আগামী মুখ্যমন্ত্রী হবে বিজেপির। এখন ট্রেলার চলছে। ২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর দিদির সরকার পড়ে যাবে”।
বাংলার মানুষের উদ্দেশ্যে অমিত শাহ বলেন, “দেশের সুরক্ষা একমাত্র দিতে পারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানকে জবাব মমতা দিতে পারবে, কাশ্মীরকে ঠাণ্ডা মমতা করতে পারবে না, কিন্তু মোদী পারবে। রাম মন্দির মোদী শিলান্যাস করে দিয়েছেন। সেই কাজ শেষের দিকে। দেশকে সুরক্ষিত দিতে, সমৃদ্ধ করতে, দুর্নীতিমুক্ত করতে এবং ভাই ভাতিজাকে তাড়াতে গেলে মোদীকেই প্রধানমন্ত্রী করতে হবে”।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “দেশে দুই রাজ্যে পরিবারবাদ চলছে। একটি তেলেঙ্গনা, অন্যটি পশ্চিমবঙ্গ। এখানে তোষণের রাজনীতি চলছে। দুর্নীতি করে বীরভূমের তৃণমূল নেতা এখন জেলে রয়েছে। এরপরেও কেউ যদি বিজেপির কর্মীদের উপর আক্রমণ করেন তাহলে তাদের জায়গা হবে জেলের ভিতর”।
সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এখনও তৃণমূল নেতারা দুর্নীতি করে চলেছেন। এখানে টুলু মণ্ডল পাথর শিল্পাঞ্চলে সিন্ডিকেট রাজ চালাচ্ছে। এই সমস্ত গুন্ডারা জেলের ভিতরে যাবে। ইতিমধ্যে হাইকোর্ট কুন্তল এবং ভাইপোকে সামনা সামনি বসিয়ে জেরা করার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে এবার খোকনের ডাক এসে গিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের জেলা বীরভূম এখন লাশের জেলা তৈরি হয়েছে”।