গরমের ছুটি পড়তে এখনও বাকি দু’সপ্তাহ, প্রবল দাবদাহে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবেন কী ভাবে?

রাজ্য জুড়ে চড়ছে পারদ। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে যাচ্ছে। ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ ছোট থেকে বড় সকলেই।শুক্রবার থেকে আরও তীব্র হচ্ছে গরমের দাপট। তার প্রভাব পড়বে পুরো দক্ষিণবঙ্গে। তার মধ্যেই দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহ আরও এক দিন বেশি চলার কথা ঘোষণা করল হাওয়া অফিস। হাওয়া অফিসের শুক্রবারের বুলেটিন অনুযায়ী, তাপপ্রবাহ চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করল হাওয়া অফিস। প্রাপ্তবয়স্করা শরীরের বিষয় খানিকটা সচেতন হলেও ছোটরা এই সময় চট করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাজ্য সরকার গরমের কারণে স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি এগিয়ে আনলেও, এখনও কয়েক দিন স্কুল খোলা। গরমে অত্যধিক ঘাম, বমি বা ডায়েরিয়ার মতো রোগ হলে শরীর থেকে বেশি পরিমাণে জল বেরিয়ে যায়। তখন নানা ভাবে শরীর জানান দেয় যে, ডিহাইড্রেশনে ভুগছেন আপনি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমরা সেগুলি বুঝতে পারি না। শিশুদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সমস্যা বাড়ে। গরমে শিশুদের খাবার হজম করতে অসুবিধা হয়, তারা নানা প্রকার পেটের সংক্রমণে ভোগে। আর তাতেই হয় বিপত্তি। পেটের সংক্রমণ থেকে বমি ও ডায়েরিয়া শুরু হয়। ফলস্বরূপ শরীরে জল এবং প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট, যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইডের ঘাটতি হয়।

শিশুদের ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ কী?

১) শিশুর শরীরে জলের ঘাটতি হলে ঠোঁট ও মুখের চারপাশ শুকিয়ে যায়। সে দিকে নজর রাখুন।

২) শিশুর কান্নার সময়ে চোখ দিয়ে বেশি জল পড়ছে না? এ কিন্তু ডিহাইড্রেশনের একটা বড় চিহ্ন।

৩) শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দিলে তার প্রস্রাব হলুদ রঙের হবে। শিশু যদি দু’-তিন ঘণ্টা অন্তর প্রস্রাব না করে, তা হলেও বু‌ঝবেন তার শরীরে জলের ঘাটতি হয়েছে।

৪) ডিহাইড্রেশন হলে শিশুরা সারা ক্ষণ ঝিমিয়ে থাকে। খেলাধুলো না করে দিনের বেশির ভাগ সময়েই সে ঘুমিয়ে থাকতে চায়। এই প্রবণতা দেখা দিলে এখনই সাবধান হোন।

৫) শিশুর শরীরে জলের ঘাটতি হলে তার মেজাজ বিগড়ে যেতে পারে। শিশু সব সময়ে ঘ্যানঘ্যান করলে বা কান্নাকাটি করলে, হতে পারে তার ডিহাইড্রেশন হয়েছে।

এই গরমে কী ভাবে নেবেন শিশুদের যত্ন?

স্কুলে গরমের ছুটি পড়তে এখনও পনেরো দিন মতো বাকি। চিকিৎসকরা প্রবল গরমে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর নিয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকদের। শিশুর শরীরে উপরের লক্ষণগুলি দেখা গেলেই আপনাকে সতর্ক হতে হবে। শিশু যেন পর্যাপ্ত মাত্রায় জলপান করে, সে দিকে নজর দিন। এক বোতল জলে এক প্যাকেট ওআরএস গুলে শিশুদের ব্যাগে দিয়ে দিন। মাঝেমাঝেই সেই জল যেন সে পান করে, সেই বিষয় তাকে বার বার মনে করিয়ে দিন। টিফিনের সঙ্গে অবশ্যই মরসুমি ফল দিয়ে আরও একটা টিফিন দিন। টিফিনের সময় খুব বেশি ক্ষণ সে যেন মাঠে খেলা না করে সেই বিষয় তাকে সতর্ক করুন। স্কুল থেকে যদি সে দুপুরবেলা ফেরে, তা হলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করতে বলুন। রোদ থেকে বাড়ি ফিরলেই একদম ফ্রিজের জল দেবেন না। ঘরে ফেরার মিনিট পনেরো-কুড়ি পর দইয়ের ঘোল, ডাবের জল কিংবা নুন-চিনির জল দিতে পারেন। রোদ না পড়লে শিশুদের মাঠে খেলতে যেতে বারণ করুন।

যদি দেখেন, শিশু যে মাত্রায় জল খাচ্ছে, তার বেশি পরিমাণ জল শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, তা হলে কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধ খাওয়ার পরেও বমি বন্ধ হয় না, সে ক্ষেত্রে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হতে পারে ইনট্রাভেনাস ডিহাইড্রেশনের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.