প্রায় শেষ মুহূর্তে বাতিল বিএড পরীক্ষা, ফাঁপড়ে পরীক্ষার্থীরা

অসম থেকে পরীক্ষা দিতে এসে শেষ মুহূর্তে শুনলেন পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছে। রাগে, ক্ষোভে সামাজিক মাধ্যমেই লাল প্রেক্ষাপটে বড় হরফে বৈশালি সেন ফুটিয়ে তুললেন তাঁর তীব্র বিরক্তি।

বৃহস্পতিবার থেকে বিএড পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। মঙ্গলবারও এই পরীক্ষার নিয়ন্ত্রক বাবা সাহেব আম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটির তরফে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল পরীক্ষার সূচি। দূরের কিছু পরীক্ষার্থী আগের দিনই পৌঁছে যান নিজের পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছাকাছি। কিন্তু বুধবার দুম করে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ।

এই অবস্থায় চরম অনিশ্চয়তায় বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী। এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গে বিএড পরীক্ষা এবং এসএসসি-তে নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। মামলা মোকদ্দমা নিয়মিত হয়ে উঠেছে প্রাত্যহিক গুরুত্বপূর্ণ খবর। অনিশ্চয়তায় বিএড, এম এড পড়ুয়া ও পরীক্ষার্থীরা। তার মধ্যে এই পরীক্ষা বাতিল।

বৈশালির ফেসবুক পোস্টে সহমর্মিতা জানিয়েছেন অনেকেই। একই প্রশ্ন তুলেছেন ত্রিপুরার পৌলমী নাথ। তিনি লিখেছেন, “এখন আমি কী করব?” সূরয দেব লিখেছেন, “সবার উচিত এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বয়কট কর।“ অপর মন্তব্যে লিখেছেন, “অন্য রাজ্যে চলে যাও। এখানে অ্যাডমিশন নিও না।“ “পুরোপুরি ভাঁওতাবাজ।“

জুলফিকার আলি আহমেদ লিখেছেন, “ফালতু বিশ্ববিদ্যালয়।“ দেবস্মিতা রায় লিখেছেন, “সত্যি তাই! সব কিছুর একটা সীমা থাকে!” রাজ রায় লিখেছেন, “২ মে থেকে গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হচ্ছে। তখন পরীক্ষা নিতে পারবে? না তারও ঠিক নেই? পারভেজ মোশারফ লিখেছেন, “পোস্টটা কি এত ভদ্রভাবে লেখার দরকার ছিল? একটু বেশি সম্মান (গালিগালাজ) দিয়ে বলতে হত।“

সেলিম আখতার পৃথক পোষ্টে লিখেছেন, “পরীক্ষার তারিখ বারবার বাতিল করার কী দরকার ছিল বুঝলাম না। আমাদের পরীক্ষা হবে কি?“ কেয়া বিশ্বাস লিখেছেন, “জুন জুলাইয়ের আগে পরীক্ষা নেওয়া অসম্ভব।“ অপর পরীক্ষার্থী ভাস্বতী মুখার্জির মতে, “আর পরীক্ষার দিন বদল হবে না। কারণ, বদল করলেও কর্তৃপক্ষ গালি খাচ্ছে। না করলেও গালি খাচ্ছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মে-তেই পরীক্ষা করিয়ে দেবে।“

কুহু কুহেলি দাঁ-র কথায়, “জুন মাসে যতদূর সম্ভব পঞ্চায়েত ভোট। কেয়া বিশ্বাসের জবাব, “তার পর হবে।“ কুসুর পাল্টা দুশ্চিন্তা, “তার পর ফল প্রকাশ আছে। দেখুন কী হয়?“ কেয়া লিখছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ আছে কিছু।” ভাস্বতীর প্রশ্ন, “কিসের চাপ? তোমার এম এড পরীক্ষার আগে বলেছিলাম?“ কেয়ার উত্তর, “রাজনৈতিক!“ ক্ষোভ উজার করে পরীক্ষার্থী সুদীপ্ত হালদার লিখেছেন, “আগামী দিনে শিক্ষকতার জন্যে প্রয়োজন ধৈর্য্যের পরীক্ষা হচ্ছে এটা।”

প্রায় ১২০টি বিএড পাঠ্যক্রমের কলেজের ভর্তি, পঠনপাঠন এবং পরীক্ষার নিয়ন্ত্রক বাবা সাহেব আম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটি। এর উপাচার্য ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পড়ুয়া ও পরীক্ষার্থীদের এই দুশ্চিন্তা ও অসহায়তার যুক্তি আছে। ওঁদের কাছে আমাদের সীমাবদ্ধতার কথা জানানোর উপায় নেই। প্রকাশ্যে অনেক কিছু বলা যায় না। আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পরীক্ষা পিছোইনি। বিভিন্ন তরফ থেকে সত্যিই চাপ আসছিল। বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা পিছিয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসমূহের নিয়ামক অভিজিৎ বিশ্বাসের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, “পবিত্র রমজান মাসে পরীক্ষার সময়সূচি বাতিল করে যখন একটি সম্প্রদায়ের লোকেরা উপবাসে থাকেন। রাজ্যে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি অব্যাহত। এই অবস্থায় বিভিন্ন কলেজের বিএডের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অধ্যক্ষদের কাছ থেকে আবেদন এসেছে।

একই আবেদনের সাথে বুধবার প্রায় ১০০টি কলেজ থেকে স্মারকলিপি এসেছে। এই বাস্তবতা বিবেচনা করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ভোগান্তি লাঘবের জন্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ২০২৩ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষার সময়সূচি যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.