সেনা জওয়ানদের নিরাপত্তা কোথায়? কী ভাবেই বা বহিরাগত দু’জন সেনা ছাউনিতে ঢুকে গুলি চালিয়ে পালালেন? পঞ্জাবের ভাটিন্ডার সেনা ছাউনিতে গুলি চালানোর ঘটনায় উঠে আসছে এই সব প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠছে সেনা ছাউনির নিরাপত্তা নিয়েও।
বুধবার ভোরে ভাটিন্ডা সেনা ছাউনিতে ঘুমন্ত জওয়ানদের উপর গুলি চালানো হয়। ওই ঘটনায় ৪ সেনা জওয়ান নিহত হন। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, যদি দেশের জওয়ানরাই সুরক্ষিত না থাকেন, তা হলে সাধারণ মানুষ কী ভাবে সুরক্ষিত থাকবে!
ঘটনার তদন্ত করতে ভারতীয় সেনার তরফে ভাটিন্ডা সেনা ছাউনিতে একটি নিরাপত্তা অডিট করা হয়েছে। সেনা সূত্রে খবর, অডিট শেষে জেনারেল মনোজ পাণ্ডে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছেন।
অনুমান করা হচ্ছে, সাধারণ পোশাক পরেই আততায়ীরা সেনা ছাউনিতে ঢুকেছিলেন। একটি ইনসাস রাইফেল থেকে গুলি চালানোর পর তাঁরা ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান। দৌড়ে চলে যান পাশের একটি জঙ্গলের দিকে।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তদন্তকারী সেনা আধিকারিক বলেন, ‘‘যদি বহিরাগতরা জড়িত থাকেন, তা হলে তাঁরা কী ভাবে ছাউনির কড়া নিরাপত্তা লঙ্ঘন করে ভিতরে ঢুকলেন? ছাউনিতে সব সময় জওয়ানরা টহল দিচ্ছেন। এমনকি দ্রুত পদক্ষেপ করার জন্য পুরো ছাউনি জুড়ে বিশেষ ভাবে দক্ষ সেনা জওয়ানের দল রয়েছে।’’
ভাটিন্ডার এই সেনা ছাউনিতে পঞ্জাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেনাছাউনি হিসাবে গণ্য করা হয়। ওই সেনা আধিকারিক বলেন, ‘‘এটি একটি ফ্রন্টলাইন স্টেশন যা পাকিস্তান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। তাই এই সেনা ছাউনির নিরাপত্তা আরও কড়া হওয়া উচিত ছিল।’’
সূত্রের খবর, গুলিকাণ্ডের পর পুলিশের কাছে যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল, তার মধ্যেও অনেক অসঙ্গতি দেখা দিচ্ছে। এখনও উত্তর মেলেনি অনেক প্রশ্নের।
এফআইআর অনুযায়ী, যে ইনসাস রাইফেল থেকে গুলি চালানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেটি সপ্তাহ দুয়েক আগেই ল্যান্স নায়েক মুপদি হরিশকে দেওয়া হয়েছিল এবং ৯ এপ্রিল সেটি খোয়া যায়। খোয়া যায় ২৮ রাউন্ড গুলিও। যেখানে জওয়ানদের দেহগুলি পাওয়া গিয়েছে, সেখান থেকে অনেক খালি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছিল। সেগুলি ওই খোয়া যাওয়া রাইফেলের বলে এফআইআর-এ উল্লেখ রয়েছে। শুধু খালি কার্তুজ দেখে কী ভাবে ওই খোয়া যাওয়া অস্ত্র দিয়েই গুলি চালানো হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হল, তা নিয়ে তদন্তকারী আধিকারিকরা প্রশ্ন তুলছেন বলে সেনা সূত্রে খবর।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার এফআইআর নিয়ে আরও একটি বড় প্রশ্ন উঠছে। এফআইআর বলছে গুলি চালানোর ঘটনাটি ঘটেছে ভোর সাড়ে ৪টা নাগাদ। কিন্তু সেনা ছাউনি থেকে থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পুলিশ স্টেশনে ১০ ঘণ্টা পেরনোর পর দুপুর ৩টে নাগাদ অভিযোগ জানানো হয়েছিল। কেন এত দেরি, তা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানা গিয়েছে।