স্বামীজী কি ভাবে, মূর্তি পুজো নিয়ে বিদ্রুপ করায় আলোয়ারের মহারাজ, মঙ্গল সিং কে শিক্ষা দিয়েছিলেন, এ বিষয়ে মনে হয় প্রত্যেকেই অবগত। তবে সেই ঘটনা যদিও কারও স্মরণে না থাকে তাহলে ওটি তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। মহারাজ মঙ্গল সিং যখন স্বামীজী কে বললেন যে মাটি, পাথর বাঁ ধাতুর তৈরী মূর্তি পুজো তার কাছে অর্থহীন তখন স্বামীজী তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ওঁর ঘরের দেয়ালে তাকানো ওনার স্বর্গীয় বাবার ছবিতে ওঁর দেওয়ানজি কে থুতু দিতে বলেন। এতে মহারাজ বেজায় রেগে যান। তখন স্বামীজী তাকে ঠান্ডা করে বলেন যে দেয়ালে যেটি টাঙানো আছে সেটি তো আসলে ওঁর বাবা নন, তার ছবি মাত্র।। তাহলে ওটি নিয়ে তিনি এতো স্পর্শকাতর কেন? তার একটাই কারন হলো যে ওই ছবিটি তার স্বর্গীয় বাবার প্রতিভূ, তাই তার সম্মান তার বাবার মতোই।ঠিক একই ভাবে আমরা ঈশ্বরের মূর্তির মধ্যেই ঈশ্বর কে খুঁজে পাই কারন আমরা মানস চক্ষে ঈশ্বরের দর্শন পাইনা। তাই আমরা ঈশ্বর/ঈশ্বরীর আরাধনার সময় মৃন্ময়/মৃন্ময়ী রূপের মধ্যে চিন্ময়/চিন্ময়ী কে প্রতিষ্ঠা করে তার আরাধনা করি, ঈশ্বরের প্রতিভূ হিসেবে। মহারাজ তার ভুল বুঝতে পেড়ে স্বামীজীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিলেন।
আমাদের হিন্দুদের মূল সমস্যা হলো যে আমরা স্বামীজীর জন্মবার্ষিকী ধুমধাম করে পালন করি ঠিকই কিন্তু আমাদের সম্প্রদায়ের সিংহভাগ মানুষ না স্বামীজীর জীবন দর্শনের ব্যাপারে অবগত না তার বাণী বা লেখা কেউ পড়েছে। স্বামীজী কে জানলে, তার কর্মযোগ এবং অন্যান্য লেখনী পড়লে আমাদের সনাতন ধর্ম, আমাদের দর্শন সম্পর্কে প্রভুত জ্ঞান লাভ করা যাবে এবং সে ক্ষেত্রে সনাতন ধর্ম সম্পর্কে ভুল ধারণাগুলো হবার সম্ভাবনা কম।
তাছাড়া সনাতন ধর্মালম্বীরা পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে এতটাই অভিভূত যে তাদের কাছে সনাতন ধর্মের রীতি নীতি গুলো সেকেলে, গ্রাম্য বা অশিক্ষার প্রতীক বলে মনে হয়। তাই তারা তাদের সন্তানাদি কে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন পুজা ও রীতি নীতির তারপর্য সম্পর্কে অবগত করায় না। ওই গতানুগতিক ভাবে পুজো করতে হয় বলে করে। কাজেই তাদের শিশু পুত্র বা কন্যা পুজো নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলে তার উত্তর ও দিতে পারে না, ফলে সেই শিশুটির মনে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে অনীহা ও তাচ্ছিল্লপূর্ণ মনোভাব জন্মায় এবং তারা স্বাভাবিক ভাবে ভিন ধর্ম অথবা বামপন্থার প্রতি আকৃষ্ট হয়। এরম আচরণ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একেবারেই দেখা যায় না। তারা কিন্তু তাদের ধর্ম নিয়ে খুব ই সচেতন এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কেও এ বিষয়ে অবগত করে রাখে। আমরা যদি আমাদের ধর্মীয় শেকড়টিকে জোরে আঁকড়ে ধরে থাকি তাহলে কোনো ভিন ধর্মী বা বামপন্থী বাস্তুতন্ত্র তাকে টলাতে পারবে না। এটা যেদিন আমরা বুঝতে শিখবো সেদিন আমাদের মধ্যে এই ব্যক্তির মতো কোনো ভুও ধর্মনিরপেক্ষ জন্মাবে না।
এই লোকটি যেহেতু নিজের পরিচয় দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আমলা হিসেবে, তাই এই লেখাটা সে তার মালপক্ষ কে খুশি করার জন্য ই লিখেছে, সেটাও হতে পারে।। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় এই লোকটি ভুলে যাচ্ছে – তা হলো ঈশ্বর কে উপাসনা করার জন্য, তাঁর ধ্যান করার জন্য, তাঁকে একটি অবয়ব প্রদান করা আশু প্রয়োজন। তাই হিন্দু ধর্ম ছাড়া বাকি ধর্মগুলিতেও কিন্তু ঐশ্বরিক অবয়বর প্রচলন আছে। তা না হলে গির্জা ও খ্রিস্টান বাড়িতে এতো ক্রুশ, যীশু ও তাঁর মাতা মেরির এতো ছবি কেন আছে। ‘শান্তিদূত’রাও তাদের পবিত্র কা বা র দিকে ফিরে নামাজ পড়ে কেন এবং তাদের বাড়িতেও কা বা র ছবি কেন থাকে। এর কিছুই ব্যাখ্যা হয়তো ওই ধৰ্মবলম্বী মানুষগুলো দেবার চেষ্টা করবে ঠিক ই, কিন্তু আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পাড়ি তা সঠিক ব্যাখ্যা হবে না।
মূর্তি পুজো নিয়ে এর পর কোনো বামপন্থী বা শান্তিদূত কোনো বিরূপ মন্তব্য করলেই উপরোক্ত কথাগুলি তাদের অবশ্যই বলবেন।
Hindus #Idolatry #Iconoclasts
রনিতা