প্রায় ৭২ ঘণ্টা কেটে গেলেও কুড়মিদের রেল অবরোধ নিয়ে জট কাটল না। টানা অবরোধের জেরে চরমে উঠেছে যাত্রীদের দুর্ভোগ। নিজেদের অবস্থানে অনড় কুড়মিরা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি না মানা হলে তাঁরা আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়াবেন। যার জেরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে দু’শোর বেশি ট্রেন বাতিল হয়েছে। শুক্রবার ৭১টি দূরপাল্লা ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল হয়েছে। শনিবারও বাতিল করা হয়েছে ৯৫টি ট্রেন। খড়্গপুর ডিভিশনের হাওড়া, শালিমার বা খড়্গপুর থেকে টাটানগর, বিলাসপুর, মুম্বইগামী সরাসরি ট্রেন বাতিল হয়েছে। তবে কিছু ট্রেন ঘুরপথে চান্ডিল হয়ে যাতায়াত করছিল। এই রুটেও কোটশিলায় অবরোধের ডাক দিয়েছেন কুড়মিরা। ফলে, টাটানগর, বিলাসপুর, মুম্বই রুটে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ।
ট্রেন বন্ধ থাকার জেরে দূরদূরান্তের যাত্রীরা খড়্গপুরে পৌঁছে বিপাকে পড়েন। স্ত্রী সুমন ও পাঁচ বছরের সন্তানকে নিয়ে আসা বিকাশ কুমার বলছিলেন, “চাকরিসূত্রে হায়দরাবাদে থাকি। টাটানগরে বাড়ি যাচ্ছিলাম। খড়্গপুর থেকে ট্রেন পাচ্ছি না। পরিবার নিয়ে খুব বিপদে পড়লাম।” জামশেদপুরের ট্রাকচালক সাধু ভকত বলেন, “জলপাইগুড়িতে ট্রাক পৌঁছে দিয়ে ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলাম। শুক্রবার দুপুরে খড়্গপুর পর্যন্ত এসে আর ট্রেন পাইনি। স্টেশনেই পড়ে রয়েছি।” রবিবারও ৯৩টি ট্রেন বাতিলের কথা ঘোষণা করেছে রেল।
‘রেল টেকা, ডহর ছেঁকা’ কর্মসূচিতে বুধবার থেকে খেমাশুলিতে শুরু হয়েছে জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধ। মঙ্গলবার থেকে খেমাশুলিতে ‘ঘাঘর ঘেরা’ কর্মসূচিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করছে কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)। কর্মসূচির গোড়া থেকেই খেমাশুলিতে রয়েছেন কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যনেতা রাজেশ মাহাতো। পৃথক ভাবে আন্দোলন শুরু হলেও দাবি একই— তফসিলি উপজাতি ও সারনা ধর্মের স্বীকৃতি। এই দাবিতেই গত সেপ্টেম্বরে টানা ৬ দিন এই খেমাশুলিতেই চলেছিল জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধ। এ বারের অবরোধে সরাসরি মহারাষ্ট্র-পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জট কাটাতে বুধবার খেমাশুলির অদূরে কলাইকুন্ডায় কুড়মি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। তবে রফাসূত্র বেরোয়নি।