দেবী দুর্গার ললাট থেকে শুম্ভ-নিশুম্ভ বধকারী চামুণ্ডার আবির্ভাবের সন্ধিতে মহাযোগ

অষ্টমীর শেষ ও নবমীর শুরুর তিথিকে দুর্গাপুজোর মাহেন্দ্রক্ষণ ধরা হয়। ওই সময় ঘটা করে সন্ধিপুজোয় অংশ নেয় বিশ্ব সংসার। বলা হয়, যত্ন নিয়ে এই পুজোর উপাচার মানলে মহাফল লাভ হওয়া নাকি সময়ের অপেক্ষা।

পুরাণ মতে, সন্ধিপুজো দুর্গাপুজোর অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী শুরুর ২৪ মিনিট অর্থাৎ মোট ৪৮ মিনিট সময়কে সন্ধিক্ষণ বলা হয়। এই সময়ই নাকি চিন্ময়ী দুর্গা পূজিতা হন মুণ্ডমালিনী চতুর্ভূজা চামুণ্ডারূপে। কারণ ঠিক ওই সময় দেবী দুর্গার ললাট থেকে জন্ম নেওয়া চামুণ্ডা, অসূর শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেছিলেন বলে পুরাণে বর্ণিত আছে। এই মাহেন্দ্রক্ষণে সন্ধিপুজোর রীতি বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে।

আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে সন্ধি কথার অর্থ মিলন। সব দ্বন্দ্ব, দ্বেষ দূর করে সন্ধি ও ঐকান্তিকতার বাতাবরণ তৈরি করতে দুর্গা পুজোর মাহাত্ম্য বিশেষ। তাই এই পুজোর খ্যাতি সুদূর বিস্তৃত।

প্রধানত সন্ধিপুজো করতে হয় তন্ত্রমতে। এই আরাধনা সরাসরি দুর্গাপুজোর অঙ্গ না হলেও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। অষ্টমীর শেষ ও নবমী শুরুর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডার আরাধনা না হলে দুর্গাপুজো অসম্পূর্ণ বলে ধরা হয়। মনে করা হয়, এই সময় দেবী মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। তাই ১০৮টি পদ্ম ফুল ও সম সংখ্যক প্রদীপ জ্বালানো এ পুজোয় বাধ্যতামূলক। এই মাহেন্দ্রক্ষণে দেবীকে কোনও লাল রঙের গোটা ফল, লাল জবা, শাড়ি দেওয়ার রীতিও পালন করা হয়।

ক্রেতা যুগে ভগবান বিষ্ণু শ্রী রামচন্দ্র রূপে জন্ম নিয়েছিলেন বাসন্তী শুক্লা অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে। সেই রামচন্দ্রই যখম দুর্গার আরাধনা করেছিলেন, অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী নিজে আবির্ভূত হয়ে নাকি রাবণ বধের বর দিয়েছিলেন বলে পুরাণে কথিত। একই সন্ধিক্ষণে রাবণ বধও হয়েছিল বলে শোনা যায়। তাই এই মুহূর্তকে মাহেন্দ্রক্ষণ হিসেবে পূজিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.