এক একটি ভারতীয় উদ্ভিদ এমন, যার তলায় সিদ্ধিলাভ করেছেন ভারতীয় সাধুসন্ত। এখনও যদি সেই গাছ বেঁচে থাকে, তার তলায় সমবেত হন ভক্তবৃন্দ। পঞ্চবটির তলায় কত সাধু সন্ন্যাসী পরমানন্দের সন্ধান পেয়েছেন। ফরিদপুরের শ্রীঅঙ্গনে ‘হরিপুরুষ’ শ্রীজগদ্বন্ধু সুন্দর (১৮৭১-১৯২১) চালতা গাছকে মহীয়ান করে গেছেন। মহানাম অঙ্গন ও সম্প্রদায়ের কাছে চালতা তাই একটি পবিত্র উদ্ভিদ, যার তলায় পরম শ্রীহরি কৃষ্ণ বিরাজ করেন বলে বিশ্বাস। তার শ্বেতশুভ্র ফুলের প্রস্ফুটনে পরম রাধারাণী হাজির হন। ধর্মের আবহে চালতা গাছকে ঐশী মর্যাদায় সংরক্ষণ করে রাখার এ এক অপূর্ব ভাব-মাহাত্ম্য।
চালতা ফুলের কী অসাধারণ সৌন্দর্য! যিনি বর্ষণ মুখরিত মেঘলা দিনে বড় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে অজস্র সাদা বড় ফুল ফুটে থাকতে দেখেন নি, তার প্রকৃতি পাঠ অসমাপ্তই হয়তো থেকে যাবে। আবাস থেকে দূরে, নিরালা-নির্জনে বন্ধ্যা চালতা গাছের ঘন পাতার ছায়ায় গা -ছমছমে ভাবও যেন রয়ে যায়। ‘আকাশ-প্রদীপ’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, “পানা পুকুর, ভাঙনধরা ঘাট,/অফলা এক চালতা গাছের চলে ছায়ার নাট।”
এর ফলগুলিও বড়, প্রায় গোলাকার, শক্তপোক্ত, ওজনে কখনও চার/পাঁচশ গ্রাম। ছুঁড়ে মারলে মাথা ফাটার উপক্রম হবে। গাঁ-গঞ্জে দুষ্ট ছেলেরা প্রতিপক্ষকে চালতার গোলায় ধরাশায়ী করে। ‘ঝিনেদার জমিদার’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ দাঙ্গার অবতারণা করে লিখছেন, “ঝুড়ি থেকে ছুঁড়ে ছু্ড়ে মেরেছিল চালতা,/যশোরের কাগজেতে বেরিয়েছে কাল তা।” কথায় বলে দাঙ্গাবাজেরা নিয়োজিত হয়, প্রতিপক্ষের সভা-সমিতি ভাঙ্গার কাজে, চলতি ভাষায় একে ‘চালতার দল’ বলে। টাকা আর ক্ষমতা দিয়ে এদের কিনে নেয় শাসকশ্রেণী। সে ইঙ্গিত রবীন্দ্রনাথও দিয়েছেন ১৯৪০ সালে লেখা কবিতায়, “চালতার দল থাকে উভয়ের মাঝেতে,/তারা লাগে দু দলের সভা-ভাঙা কাজেতে।”
তবে চালতার সবচাইতে বড় ব্যবহার তা থেকে আচার তৈরি করতে।
@কচ