Carved idol of Lord Shiva, Sant Darshan Museum, Hadashi, Maharashtra, India

অ্যারিস্টটল জন্ম নেওয়ার কয়েক হাজার বছর আগেই, প্রায় খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকেই ভারতবর্ষে ‘সভা’, ‘সমিতি’, ‘বিধাতা’, ও ‘গণ’ নামের চারটি পরিষদ ছিল। আদি বৈদিক যুগের এই প্রশাসনিক পরিকাঠামোগুলির মাধ্যমে রাজা নির্বাচিত হত৷ ‘সমিতি’-তে সদস্যরা কর্ম অনুযায়ী সাধারণের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হতেন, আবার এই ‘সমিতি’ই রাজাকে নির্বাচিত করত (কিছুটা আমাদের আজকের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ব্যবস্থার ইলেক্টোরাল কলেজ সিস্টেমেরই আরও সহজ পদ্ধতি)। এই সভা, সমিতি ও বিধাতা এই তিনটিতেই মহিলাদের সদস্যপদ ছিল নির্দিষ্ট৷
অথচ আমরা নাকি গণতন্ত্রের ধারণা নিয়েছি ব্রিটেন সহ আরও বিভিন্ন দেশ থেকে!
১৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ব্রিটিশ সহ ইউরোপের বড় অংশ যখন প্রায় গাছ-মানব, তখন ভারতের ঋষিরা গণতন্ত্রের অত্যাধুনিক স্ট্রাকচার তৈরি করে তা সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন৷

এবার ইতিহাসের পাতায় এই ভারতকে জানুক ভারত শুরু থেকে।

(২)

ছোটবেলায় অঙ্ক শিখতে গিয়ে আমরা একটা মজার ছড়া কাটতাম
‘পাই’ -এর ভ্যালু কী করে পাই?
হ্যাঁ এক ভারতীয়ই প্রথম পেয়েছিলেন ‘পাই’ এর ভ্যালু। ৮০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে এই ভারতে জন্মানো এক প্রতিভাবান ঋষি বৌদ্ধায়ন প্রথম ‘পাই’ এর ধারণা, ভ্যালু ও ব্যবহার আবিস্কার করেছিলেন৷ তিনি তাঁর ‘শুল্ব সূত্র’ বইতে তা লিখেও রেখে গিয়েছেন৷

এবার ইতিহাসের পাতায় এই ভারতকে জানুক ভারত শুরু থেকে।

(৩)

‘কোন একটি সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ঐ ত্রিভুজের অপর দুই বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রদ্বয়ের ক্ষেত্রফলের সমষ্টির সমান।’ উপপাদ্য কিংবা হাইট অ্যান্ড ডিস্টেন্সের অঙ্ক করতে গিয়ে শেখা এই বিখ্যাত সূত্রটি মনে আছে নিশ্চয়? কি নামে শিখেছিলেন যেন?
‘পিথাগোরাস থিয়োরাম’ তাইতো? এটিও ৮০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে এই ভারতে জন্মানো বৌদ্ধায়নের আবিস্কৃত সূত্র, যা তাঁর ‘শুল্ব সূত্র’ বইতে তিনি লিখে রেখে গিয়েছেন৷

এবার ইতিহাসের পাতায় এই ভারতকে জানুক ভারত শুরু থেকে।

(৪)

‘আর্যভট্ট শূন্য আবিস্কার করেছিলেন’ এই একটি লাইনের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর না পড়ে সারা ভারত শুরু থেকে জানুক, ভদ্রলোক ডেসিমল পদ্ধতি, নাম্বার সিস্টেম, জিওম্যাট্রি, ত্রিকোণমিতি ও বীজগণিত নিয়ে গবেষণা করে একাধিক নতুন সূত্র আবিষ্কার করে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন৷

এবার ইতিহাসের পাতায় এই ভারতকে জানুক ভারত শুরু থেকে।

(৫)

৪২০ সাল ও সমসাময়িক ভারতবর্ষে ভাস্করাচার্য নামের এক প্রতিভাবান ভারতীয় গণিতজ্ঞ ছিলেন যিনি ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’ নামে একটি বই লিখেছিলেন যার চারটি খণ্ড রয়েছে লীলাবতি- পাটিগণিত, বীজগণিত, গোলাধ্যায়, গৃহগণিত। ভাস্করাচার্যের প্রয়াণের অনেক পরে নয়ের দশকে জেমস টেলর এই লীলাবতী অংশটির ইংরাজি অনুবাদ করেন, এবং এই অনুবাদের বড় অংশ আমরা অ্যারথমেটিক হিসেবে আজ পড়ি৷ ৪২০ সালেই বীজগণিতের অঙ্কের সমাধান খুঁজতে ভাস্করাচার্য ‘সাইকেলিক’ পদ্ধতি তৈরি করেন, যেটাকেই পুরো কপি পেস্ট করে ইউরোপিয়ানরা আজকের ‘ইনভার্স সাইকেলিক মেথড’ তৈরি করে মার্কেটে ছেড়েছে৷

এবার ইতিহাসের পাতায় এই ভারতকে জানুক ভারত শুরু থেকে।

(৬)

‘L C M’ নির্ণয়ের গাণিতিক নিয়ম বের করার পিছনে জন নেপিয়ারের পরিচিতি রয়েছে৷ কিন্তু ৮৫০ সালে ভারতে জন্মানো এক জৈন ঋষি মহাবীরাচার্য তাঁর ‘গণিত সারসংগ্রহ’-গ্রন্থে লসাগু সিস্টেম পুরোপুরি বর্ণনা করে গিয়েছেন৷

এবার ইতিহাসের পাতায় এই ভারতকে জানুক ভারত শুরু থেকে।

(৭)

৬০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে অলৌক্য নামের একজন গুণী এই ভারতে জন্মেছিলেন, প্রত্যেক বস্তু কেন ভিন্ন ধরণের? কী এমন রয়েছে তাদের মধ্যে যার কারণে তাদের ধর্ম আলাদা? কী দিয়েই বা তারা তৈরি? এই প্রশ্নের খোঁজ শুরু করেছিলেন ভারতীয় ভদ্রলোক, এবং ডালটনের থেকে প্রায় ২৬০০ বছর আগেই উনি অ্যাটমিক থিওরি লিখে গিয়েছেন৷ কর্ণ ( বস্তুর ছোট ক্ষুদ্র কণা) -র গবেষণায় তিনি এতটাই ডুবে ছিলেন যে তাঁর নামই হয়ে যায় অলৌক্য থেকে কণাদ৷

এবার ইতিহাসের পাতায় এই ভারতকে জানুক ভারত শুরু থেকে।

(৮)

দশম শ্রেণি বা দাদশ শ্রেনি পাশ করা একজন ভারতীয়কে জিজ্ঞেস করুন, বরাহমিহির কে ছিলেন? সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পাবেন, ‘নবরত্নের’ একজন। কেন তিনি নবরত্নের একজন? উত্তর নেই! উত্তর আছে, উত্তর বরাহমিহির নিজেই লিখে রেখে গিয়েছেন তাঁর রচিত একাধিক বইতে। তাঁর রচিত ‘বৃহদসংহিতা’য় উল্লেখ রয়েছে সে সময় কিভাবে তিনি ভূমিকম্প আসা সম্পর্কে আগাম বার্তা দিতে পারতেন, কী ছিল তাঁর পদ্ধতি৷

এবার ইতিহাসের পাতায় এই ভারতকে জানুক ভারত শুরু থেকে।

(৯)

দিল্লিতে গুপ্ত যুগের একটি লৌভস্তম্ভ রয়েছে যা হাজার হাজার বছর ধরে বাইরে রোদে জলে পড়ে থাকলেও এখনও তাতে মর্চে ধরেনি। ব্যস এখানেই শেষ, এতটুকুতেই ‘বুড়িছোঁয়া’ করে সমাপ্ত! কিন্তু শুধু দিল্লির ওই পিলার নয় ভারতে এরকম কয়েকশ পিলার ও লৌহ নির্মিত অতি প্রাচীন জিনিসের সন্ধান মিলেছে সেগুলিতে কিভাবে কেন আজও মর্চে ধরেনি কতটাই বা উন্নত ছিল সে সময়ের মেটলজি সে নিয়ে কোনও অধ্যায় ভারতের ইতিহাস বইয়ে পাঠ্য নয়, স্বাধীনতার এত বছর পরেও!

এবার ইতিহাসের পাতায় এই ভারতকে জানুক ভারত শুরু থেকে।

(১০)

চোখের ছানি অপারেশন, যা আজকে অনেকের কাছেই গালভরা ‘ক্যাটেরাক্ট অপারেশন’ এই ছানি অপারেশন এমনকি ‘রাইনোপ্লাস্টির’ মতো সার্জারিও ৮০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে এই ভারতের ‘কাশী’তে বসেই এক ভারতীয় সাফল্যের সঙ্গে করতেন, ভদ্রলোকের নাম? সশ্রুত৷

তা এসব না পড়িয়ে আমাদের নাকি শেখানো জরুরি কোন শাসকের কটা হারাম ছিল, সেখানে কোন কোন রাজ্য থেকে নারীদের লুঠ করে নিয়ে আসা হত, মেয়েদের দাস হিসেবে কিনে নিয়ে এসে এক শাসক থেকে অন্য শাসক হাত বদল হয়ে কিভাবে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হত, কিভাবে ক্ষমতার জন্য নিজের বাবাকে জেলে বন্দী করে ভাইয়ের মাথা কে টে ফেলতে হয়! সম্পূর্ণভাবে অবৈজ্ঞানিক, কুসংস্কার চরম পর্যায়ে যাওয়া ভারতের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায় নিয়ে পাতার পর পাতা পড়ার কী আছে বুঝি না বাপু! এবং এগুলো সরিয়ে দিলে আমাদের ইতিহাসের নাকি ক্ষতি হয়ে যাবে! বাচ্চাদের নাকি ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবে!
হুররর, হ্যাট, ধুসসসস, বেশ করেছে বাদ দিয়েছে৷

ভারতের শিশুরা স্কুলে গিয়ে প্রাচীন ভারতকে জানুক, ভালো কিছু জানুক, ইতিহাস বই থেকেই বিজ্ঞানমনস্ক হোক, গণিতের প্রতি আগ্রহ জন্মাক, চিকিৎসা বিজ্ঞানে আগ্রহ জন্মাক, এটাই কাম্য এবং এটাই হতে চলেছে৷ ধন্যবাদ কেন্দ্রীয় সরকার৷

পুনশ্চঃ

যদিও ‘অন্ধকার যুগের ভারত’ বলে আলাদা একটি অধ্যায় বানিয়ে ছোটো থেকে স্কুলে স্কুলে শেখানো উচিত যে এগুলো কখনও কোরো না। এটা করতে পারলে দেশে ক্রাইম রেট কমবে।

শে খ র ভা র তী য়।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.