শক্তিগড়ে কয়লা কারবারি রাজু ঝাকে গুলি করে খুনের ঘটনায় শাসক এবং বিরোধী শিবিরের মধ্যে তরজা তুঙ্গে উঠেছে। বাদানুবাদে জড়িয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয় ও বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজুর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে দিলীপকে আক্রমণ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল। বিজেপিতে থাকার সময় বাবুলের সঙ্গে দিলীপের প্রকাশ্যে মতানৈক্য বার বার দেখেছে রাজ্য-রাজনীতি। রাজুর মৃত্যুতে সেই লড়াই আবার ফিরে এল। শাসক শিবিরের আক্রমণের মুখে এ বার আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ। তুললেন গুরুতর অভিযোগও।
রাজু খুনের পরেই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বাবুল। রাজুর মতো বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে কেন ইডি-সিবিআই তদন্ত হবে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন। এই পরিস্থিতিতে দিলীপ দাবি করলেন, মুখ বন্ধ করতেই কয়লা ব্যবসায়ীকে খুন করা হয়েছে! কয়লাকাণ্ডে সিবিআইয়ের দফতরে হাজিরা দিয়ে রাজু হয়তো ‘বড়’ নাম বলে এসেছিলেন। তাই তাঁর মুখ বন্ধ করা হয়েছে বলে দাবি বিজেপি নেতার।
রবিবার হুগলির রিষড়ায় রামনবমীর মিছিলে এসে রাজুর বিজেপিতে যোগদান-বিতর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন দিলীপ। দাবি করেন, রাজুকে হয়তো সিবিআই ডেকেছিল। এ বারও হয়তো ‘বড়’ নাম দেবেন, সেই ভয়েই তাঁকে খুন করা হয়েছে। দিলীপের কথায়, ‘‘রাজু ঝা গতকাল খুন হয়েছেন। সিবিআই তাঁকে ডেকেছিল। আগেও ডেকেছিল। নিশ্চয়ই বড় লোকেদের নাম বলে এসেছিলেন। আবারও হয়তো ডেকেছিল। আবারও বড় নাম বলে দেবেন, তাই মুখ বন্ধ করা হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, রাজু যখন বিজেপিতে যোগ দেন, বাবুল তখন আসানসোলের সাংসদ। এই যোগদানে তিনি রাজি ছিলেন না দাবি করে শনিবার সন্ধ্যাতেই টুইট করেন বাবুল। লেখেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। আইন ভাঙলে আদালতেই তার বিচার হওয়া উচিত। এটা লিখছি কারণ, এই রাজু ঝাকে নিয়েই আমার সঙ্গে রাজ্য বিজেপির যারা আজ বড় বড় কথা বলছে, তাদের চূড়ান্ত মতবিরোধ হয়। রাজুকে ঘটা করে বিজেপিতে যোগদান করায় দিলীপ ঘোষ এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়। এ বার এরা বলবে ‘চিনি না’!’’
রবিবার বাবুলের ওই মন্তব্য নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে মুখ খুলেছিলেন দিলীপ। বলেছিলেন, ‘‘চিনি না বলছি না তো! উনি (বাবুল) আগে থেকেই আমি কী বলব ভেবে নিচ্ছেন কেন? সেই সময়ে অনেকেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে রাজুও ছিলেন। কে চোর, কে ডাকাত সব সময়ে তার খোঁজ রাখা যায় না। অপরাধ করার জন্য কাউকে বিজেপিতে আশ্রয় দেওয়া হয়নি।’’ বিজেপি নেতা আরও বলেন, ‘‘উনি যখন আমাদের দলে ছিলেন, মন্ত্রীও ছিলেন তখন ওঁর আপ্তসহায়ককে কেন ডেকেছিল সিবিআই? উনি কি সেই কারণেই বিজেপি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন? আর এখন যে দলে গিয়েছেন তারও নেতা, মন্ত্রীদের বার বার ডাকছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। অনেকে জেলেও রয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে, কে কেমন সঙ্গ পছন্দ করেন।’’ এ বার কারও নাম না করলেও রাজুকাণ্ডে প্রকাশ্যে বিস্ফোরক দাবি করলেন দিলীপ।