বংশানুক্রমে শিব মন্দিরের তত্ত্বাবধান করছেন মতিবরের পরিবার

ধর্মীয় ইস্যুতে বেশ খানিকটা অশান্ত অবস্থা বিরাজ করছে ভারতে। কিন্তু সেখানে যে ধর্মীয় সম্প্রীতির নিদর্শন এখনো আছে, সেই চিত্রই ধরা পড়েছে আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে। গুয়াহাটির একটি গ্রামের নাম রংমহল। এই গ্রামে বসবাস মতিবর রহমানের। সেখানকার একটি শিবমন্দিরের দেখাশোনা করেন তিনি।

মতিবর মুসলমান। বার্তা সংস্থা এএফপি তাঁর একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারও প্রকাশ করেছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ২০০৬ সালে তিনি হজ করেছেন। এই সময় তাঁর ছেলে এই মন্দির দেখভাল করেছেন। হজ থেকে ফিরে তিনি আবারও এই মন্দিরের দায়িত্ব নিয়েছেন।
মতিবরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৫০০ বছর ধরে এই মন্দির দেখভাল করছে তাঁর পরিবার। ৭৩ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বিশ্বাস করেন, শিবের নির্দেশে বংশপরম্পরায় তাঁরা এই মন্দিরের দেখভাল করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার আগে বাবা এই মন্দির দেখভাল করতেন। তার আগে দাদা এই কাজ করতেন।’
দেবতা শিবের এই নির্দেশ কীভাবে এসেছিল, তারও একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন মতিবর। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের প্রথম মানুষটির নাম বোরহানসা। শিব তাঁকে বলেছিলেন, “আমি এখানে থাকতে চাই। এখন থেকে তোমার পরিবারের দায়িত্ব এই জায়গা সংরক্ষণ করা। আমি তোমার পরিবারের কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করব, অন্য কারও কাছ থেকে নয়।”’ এরপর থেকেই তাঁর পরিবার মন্দির সংরক্ষণ করছে বলে জানান তিনি।

মন্দিরটির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মতিবর প্রতিদিন নিয়ম করেবুরহা গোসাইর থান মন্দিরে দেবতা শিবের নামে মোমবাতি জ্বালেন। ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁর নির্দেশে কয়েকজন মন্দিরের উঠান পরিষ্কার করছেন।
জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) থেকে প্রায় ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে আসামে। ফলে একধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে সেখানে। কিন্তু এর মধ্যেও নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন মতিবর। তিনি বলেন, এনআরসিতে তাঁর নাম আছে।
আরেকটি অদ্ভুত তথ্য জানিয়েছেন মতিবর। তিনি বলেন, শুধু হিন্দুধর্মাবলম্বীরাই নন। অনেক মুসলমানও ওই মন্দিরে প্রার্থনা করতে আসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.