উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পান্তাবুড়ির কথা মনে আছে তোমাদের?
এক যে ছিল পান্তা বুড়ী, সে পান্তাভাত খেতে বড্ড ভালোবাসত।
এক চোর এসে রোজ পান্তাবুড়ীর পান্তাভাত খেয়ে যায়, তাই বুড়ী লাঠি ভর দিয়ে রাজার কাছে নালিশ করল। কিন্তু কাজ হল না। তারপর সেই শিঙ্গিমাছ , গোবর দিয়ে কেমন চোরকে জব্দ করল। তারপর মনে আছে।সেই দুখু সুখুর গল্প ? দুখু চাঁদের বুড়ির বাড়ি গিয়ে কিন্তু পান্তা ভাত খেয়েছিল নুন লঙ্কা দিয়ে। তারপর পান্তাভূতের গল্প মনে আছে?
এই প্রচণ্ড গরমে পান্তাভাতের গল্প কি ভুলতে বসেছে বাঙালি?
‘পান্তাভাতে টাটকা বেগুন পোড়া’- গরম পড়লেই বাংলার মাঠে-ঘাটে-ঘরে এই গানটির গুনগুন প্রায়ই শোনা যায়। এককথায়, গরমের ঠান্ডা হওয়ার আদি প্রথা। রাতের গরম ভাতে জল ঢেলে মাটির হাঁড়িতে রাখা হয়। একে আবার ভাত সংরক্ষণের প্রাচীন পন্থাও বলা যেতে পারে। গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া মানুষদের কাছে এই ভাত গরমে যেমন তাদের শরীর ঠান্ডা রাখে, পাশাপাশি শক্তিও জোগায়। কেবলমাত্র বঙ্গ নয়, উড়িষ্যা, আসাম, বিহার অঞ্চলের পান্তা সমভাবে জনপ্রিয়। উড়িষ্যায় পাকাল, আসামে পয়তাভাত বলে ডাকা হয় পান্তা কে। দিনের প্রধান খাবার হিসাবে কৃষক , শ্রমজীবী মানুষ পান্তা খেয়ে থাকে। পান্তাভাতের সঙ্গে থাকে কাঁচালঙ্কা বা শুকনো লঙ্কা পোড়া, কাঁচা পেঁয়াজ, সরষের তেল ও নুন। আর সঙ্গে থাকে ডালের বড়া অথবা মাছ ভাজা বা তরকারি। এই পান্তাভাতের জল থেকে তৈরি করা হয় আমানি। এই আমানি একধরনের দেশি ঠান্ডা পানীয়। তবে এটি বেশি গেঁজিয়ে একধরনের সুরাও তৈরি করা হয়। গ্রামেগঞ্জে এর প্রচলন দেখা যায়। সেই যে চণ্ডীমঙ্গলে আছে –
—
“বাসি অন্ন আনে রামা দিআ তরাতরি।
জল সমে ঢালে অন্ন পাতে শীঘ্র করি ৷
আছে বা না আছে অন্ন পূর্ণ বাসি জলে।
স্থানীসঙ্গে আনি তাহা বীরের পাতে ঢালে।
“ফুলরা রন্ধন করে বীরে খাইতে ভাত।
তরাতরি আনিলেক মানকচুর পাত। “
বিভিন্ন মঙ্গল কাব্যে সাধারণ মানুষের জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে ফিরে ফিরে এসেছে পান্তার উল্লেখ। কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যে, চৈত্রের প্রচন্ড খরায়, অভাবে যখন পাথরবাটিও বাঁধা দিতে হয়, তখন মাটিতে আমানি খাবার গর্ত দেখিয়ে ফুল্লরা তার ১২ মাসের দুঃখের কাহিনি বলে। কখনও বা ব্যাধপত্নী নিদয়ার গর্ভবতী অবস্থার সব ছেড়ে পান্তা খাওয়ার কথা বলতে গিয়ে বলেন,
‘পাঁচ মাসে নিদায়ার না রোচে ওদন।
ছয় মাসে কাজী করঞ্জায় মন’।
১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে রচিত বিজয় গুপ্তের মঙ্গলকাব্যে পাই, ‘আনিয়া মানের পাত বাড়ি দিল পান্তা ভাত।’ কেতাকাদাস ক্ষেমানন্দ ‘মনসার ভাসানে’ মনসা ব্রত পালনের বিধিতেও পান্তা দিয়ে দেবীর পুজোর কথা বলেছেন
‘পান্তা ওদন দিয়া পুজিবেক তোমা
আশ্বিনে অনন্ত পূজা চিত্তে নাহি সীমা’।
আবার বাংলার কালো ইতিহাসে জ্বলজ্বল করে ১৯৭৬ আর ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরের কথা। যখন গরিবের খাবার এক মুঠো পান্তা ভাতও ছিল অতীব মহার্ঘ্য।
আবার একটু এগিয়ে যদি ঊনিশের দশকে দেখি, রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনস্মৃতিতে লিখছেন, ‘ইসকুল থেকে ফিরে এলেই রবির জন্য থাকে নতুন বউঠানের আপন হাতের প্রসাদ। আর যে দিন চিংড়ি মাছের চচ্চড়ির সঙ্গে নতুন বউঠান নিজে মেখে মেখে দেয় পান্তাভাত, অল্প একটু লঙ্কার আভাস দিয়ে সে দিন আর কথা থাকে না’।
গ্রীষ্মের দুপুরে লেবুর আভাস দেওয়া এক বাটি পান্তা সত্যি এনে দেয় প্রাণের আরাম। যে চাষিকে সাত সকালে উঠে গ্রীষ্মের ভরা রোদে মাঠে কাজ করতে হয় সে জানে লাল দেশি চালের পান্তা শরীর যেমন ঠান্ডা রাখবে, পেটেও থাকবে অনেক ক্ষণ। আর পান্তাপ্রেমী মাত্রে এ-ও জানেন যে আতপ চালের ভাতে ভাল পান্তা হয় না। সিদ্ধ বা দোসিদ্ধ দেশি একটু লাল চালের ভাতের পান্তা মজেও ভাল, আর স্বাদেও চমৎকার। এখনও কান পাতলে শোনা যায় কালোবকরি, ভুড়িশাল, কইঝুড়ি, ভুতমুড়ি , হিদি, বালাম, আদানছিল্পা ইত্যাদি ধানের কথা যা দিয়ে এক সময় তৈরি হত সুস্বাদু পান্তা। সে সব চালের বেশির ভাগই এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
পান্তাভাত সাধারণত খেটে খাওয়া মানুষের খাবার বলে পরিচিত হলেও হিন্দুশাস্ত্র ভগবানের ভোগ হিসাবে এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
রান্নাঘর ও ভাঁড়ার ঘরকে লক্ষ্মীর থান মনে করত আমাদের বাড়ির সবাই। তাই কেউ বাসি বা নোংরা কাপড়ে রান্না ঘরের দুয়ার মারাতো না। প্রতিদিন মা , পিসিরা ভোর বেলা স্নান করেকাচা কাপড় পড়ে শুদ্ধ ভাবে রান্নাঘরে ঢুকতেন।
রান্নাপুজোর দিন আজও আমরা বাঙ্গালীরা নিয়ম মেনে উনুনকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করি। রান্নাপুজোর দিন পান্তাভাত, ডালমাখা, কচু বাটা, আলুভাজা ইত্যাদি খাবার জন্য বাড়িতে বহু অতিথি সমাগম ঘটত। আগেরদিন সারারাত ধরে পিসি , মা , ঠাকুমা সব্বাই মিলে নানা পদ রান্না করতেন। ভোররাতে গোবর নিকিয়ে রান্নাঘর পরিষ্কার হত। কারন পরেরদিন দিন অরন্ধন, ওইদিন অগ্নি দেবতার পুজো, সবাই শীতল খাবেন। রান্নাপুজোর দিন সকালে উঠে সবাই স্নান করে নিতাম। তারপর ঠাকুমা কাশফুল দিয়ে উনুন পুজো করে, কলাপাতায় অগ্নি দেবতার উদ্দেশ্যে ও বাস্তুদেবতার উদ্দেশ্যে পান্তাভাত, পঞ্চ ব্যজন সাজিয়ে উৎসর্গ করতেন। তারপর রান্নাঘরের দোর বন্ধ করে দিতেন। আর এরম অরন্ধন পালন হত প্রতি বৈশাখ মাসের সংক্রান্তিতে, ঐদিন আমাদের পাড়ায় বাৎসরিক শীতলা পুজো হত। সারাপাড়া মা শীতলার নামে পান্তাভাত খেত।
গ্রীষ্মের রাতে টিমটিম করা লণ্ঠনের আলোয় মাটির দাওয়ায় বসে মাঝখানে মাটির হাঁড়িতে পান্তাভাত গ্রীষ্মকালে গ্রামবাংলার একটি পরিচিত দৃশ্য। কিছুটা এলিয়ে পড়া পান্তাভাত ও আমানি বাংলার (Bengal) এক নিজস্ব খাবারও বলা যেতে পারে। তবে নিছক রসনা তৃপ্তিই নয়। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত, গরম ভাতের তুলনায় পান্তার উপকারিতা বেশি। অনেক পুষ্টিবিদদের দাবি, পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে ১২ ঘণ্টার পর ৭৩.১১ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। এছাড়া ১০০ গ্রাম পান্তাভাতে ৩০৩ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৮৩১ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম এবং ৮৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। গরমে শরীরে জলের অভাব দূর করে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। দীর্ঘক্ষণ ভাত ভিজিয়ে রাখার ফলে সহজপাচ্য হয় এর ফলে পেটের রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
বাঙালির প্রিয় এই পান্তাভাতের সঙ্গে কী থাকবে, তা নিয়ে অঞ্চলভেদে পার্থক্য দেখা যায়। মাটির হাঁড়িতে রাখা পান্তাভাত পরিবেশন করা সময় জল ছেঁকে নেওয়া হয়। দরিদ্র মানুষের কাছে এর সঙ্গের উপাদানে বাহারি আইটেম সাধারণত দেখা যায় না। কাঁচালঙ্কা অথবা শুকনো লঙ্কা পোড়া, কাঁচা পেঁয়াজ, নুন আর সরষের তেল। কখনও শাকভাজা অথবা তেঁতুল। রাঢ়বঙ্গের মানুষ এর সঙ্গে খেতে ভালোবাসেন মাছের টক, পোস্তবাটা অথবা বড়া। কুড়তি কলাইবাটা, কলাইগুড়ো, শাকভাজা, গন্ধরাজলেবু এবং ডালের বড়া দিয়ে পান্তা ভাত খুব উপাদেয় লাগে খেতে। পূর্ববঙ্গে পান্তা ভাতের সঙ্গে শুঁটকি মাছের ভর্তা খাওয়ার প্রচলন আছে।
পান্তা ভাতের আরেক নাম কাঞ্জী। বৈষ্ণবরা রাধাকৃষ্ণকে এবং জগন্নাথ মন্দিরে পান্তা ভোগ দেন জ্যৈষ্ঠ মাসে। এর নাম পাকাল ভোগ। এতে থাকে পান্তাভাত, দই, চিনি, কলমি শাক ভাজা এবং দুই একরকমের নিরামিষ তরকারি। মা দুর্গাকেও দশমীতে পান্তা ভোগ দেওয়া হয়। কথিত আছে গ্রামের মেয়ে উমা অনেক দূর পেরিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাবেন। তাই সহজপাচ্য ও শরীর ঠান্ডা করার জন্য এই ভোগ দেওয়া হয়। মেয়ে চলে যাচ্ছে। এই দুঃখে মা-বাবা আগের দিনের রান্না করা খাবার খায়। অনেক বনেদি বাড়িতে এখনও এই রীতি মানা হয়। একই ভোগে থাকে পান্তাভাত, ইলিশ মাছ, কচুরলতি বাসি তেঁতুল অথবা আমসির চাটনি এবং মাছের মাথা দিয়ে অম্বল।
পান্তা ভাতের ওপরেই গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীদের একটি দল।
ভারতের আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়, যাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কৃষি জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মধুমিতা বড়ুয়া।
এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল পান্তা ভাতে কী আছে এবং এসব উপাদান শরীরের জন্য কতোটা উপকারী বা অপকারী সেগুলো খুঁজে বের করা। এই গবেষণার ফলাফল পরে এশিয়ান জার্নাল অব কেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত হয়েছে।
পান্তা ভাত নিয়ে সম্ভবত এটাই একমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণা। তবে মধুমিতা বড়ুয়া জানিয়েছেন, তাদের এই গবেষণা এখনও চলছে। তারা এখন জানার চেষ্টা করছেন পান্তা ভাত ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ভাল না খারাপ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যেসব অঞ্চলে প্রচুর ধান উৎপন্ন হয় এবং যেসব দেশে ভাত প্রধান খাবার, মূলত সেসব দেশে ভাত জলে ভিজিয়ে খাওয়ার সংস্কৃতি চালু আছে।
এসব এলাকায় আবহাওয়া অত্যন্ত গরম এবং আর্দ্র হওয়ার কারণে খুব সহজেই ভাত নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু জলে ভিজিয়ে রাখার কারণে এই খাবার দ্রুত নষ্ট হয় না।
মূলত সংরক্ষণের কথা বিবেচনা করেই এই পান্তা ভাতের চল শুরু হয়।
দশ বারো ঘণ্টা ধরে সারা রাত রেখে দেওয়ার ফলে জল ও ভাতের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। এসময় জলের নিচে থাকা ভাত বাতাসের অর্থাৎ অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসতে পারে না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলের কারণে ভাতের এই ফারমেন্টেশন বা গাজন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। এবং পাত্রের ভেতরে এনারোবিক ফারমেন্টেশনের ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞানী মধুমিতা বড়ুয়া বলছেন, “এই প্রক্রিয়ায় ভাতের মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট ভেঙে যায়।”
“এছাড়াও ভাতের মধ্যে ফাইটেটের মতো যেসব এন্টি-নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর থাকে সেগুলোরও ক্ষয় হয় এবং ভাতটাও হাইড্রেট হয়ে থাকে,” বলেন তিনি।
গবেষণায় দেখা গেছে পান্তা ভাতে নানা ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর খনিজ পদার্থ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিংক, ফসফরাস, ভিটামিন বি ইত্যাদি।
মধুমিতা বড়ুয়া বলেন, তারা দেখেছেন সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তা ভাতে এসব পুষ্টিদায়ক পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।
একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে আয়রনের পরিমাণ থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে তৈরি পান্তা ভাতে এর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হয় ৭৩.৯ মিলিগ্রাম।
একইভাবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়। ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে যেখানে ক্যালসিয়াম থাকে ২১ মিলিগ্রাম, সেখানে পান্তা ভাতে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৫০ মিলিগ্রাম।
গবেষণায় দেখা গেছে, পান্তা ভাতে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংকের উপস্থিতিও অনেক বেড়ে যায়।
“ভাতের মধ্যে ফাইটেটের মতো যে এন্টি-নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর আছে সেটা আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংকের মতো পুষ্টিকর পদার্থকে বেঁধে রাখে।
ফলে ভাত খাওয়ার পরেও মানুষের শরীর এসব গ্রহণ করতে পারে না।
কিন্তু ফারমেন্টেশনের কারণে পান্তা ভাতের ফাইটেট দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তখন পুষ্টিকর পদার্থগুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়লে আমাদের শরীর সেগুলো গ্রহণ করতে পারে,” বলেন মধুমিতা বড়ুয়া।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পান্তা ভাতে থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করে।
মধুমিতা বড়ুয়া বলেন, দেহের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে আয়রন যেটা পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
শরীরে হাড়গুলোকে শক্ত রাখে ক্যালসিয়াম। শরীরে নিঃসৃত এনজাইমকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম।
মধুমিতা বড়ুয়া বলেন, এছাড়াও তারা গবেষণায় দেখেছেন যে পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মতো মেটাবলাইটস রয়েছে যা শরীরকে প্রদাহ বা যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে। এসব কোলেস্টোরেল কমাতেও এসব সাহায্য করে।
“এছাড়াও পান্তা ভাতে রয়েছে আইসোরহ্যামনেটিন-সেভেন-গ্লুকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো মেটাবলাইটস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।”
তিনি জানান, গবেষণায় তারা দেখেছেন যে পান্তা ভাতে ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাধারণত দই-এর মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।
কবিগুরু বলেছেন –
গদ্য জাতীয় ভোজ্যও কিছু দিয়ো,
পদ্যে তাদের মিল খুঁজে পাওয়া দায়।
তা হোক, তবুও লেখকের তারা প্রিয়;
জেনো, বাসনার সেরা বাসা রসনায়।
আবার ইংরেজিতে প্রবাদ আছে –
The way to a man’s heart is through his stomach…. said to mean that a woman can make a man love her by cooking him good meals.
উক্ত সকল কারণেই বঙ্গ তথা ভারতীয় নারী এতই রন্ধন নিবেদিত প্রাণ। শুধুই কি তাই ? তাঁরাই পাকশালায় হয়ে ওঠেন সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা। তাঁদের ভান্ডারে কোনো দিন অভাব হয় না। প্রয়োজনে নিজেরা না খেয়েও পরিবারের সকল সদস্যের মুখে অন্ন তুলে দেন।
ওঁ অন্নপূর্ণে স্বাগতং তে সুস্বাগতমিদন্তব।
আসনঞ্চেদমপ্যস্মিন্ আস্যতাং পরমেশ্বরি॥
©দুর্গেশনন্দিনী