মিউচুয়াল ফান্ডে যাঁরা অর্থ বিনিয়োগ করেন তাঁরা এখনকার মতো সুবিধা পাবেন না আগামী অর্থবর্ষ থেকে। শুক্রবার লোকসভায় যে অর্থ বিল নরেন্দ্র মোদী সরকার পাশ করিয়েছে তাতে ১ এপ্রিল থেকেই মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। তাতে যে সব ঋণ তহবিলের (ডেট ফান্ড) ৩৫ শতাংশ বা তার বেশি অংশ ইকুইটি শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছে সেগুলিতে আয়করে বদল এল। এ ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের মতো নিজের স্ল্যাবে আয়কর দিতে হবে করদাতাকে। মুদ্রাস্ফীতির জন্য মেলা সূচকের (ইনডেক্সেশন) সুবিধাও পাওয়া যাবে না। এই সুবিধার মাধ্যমে করের হার কমানো যেত।
এখন ঋণ তহবিলে বিনিয়োগকারীরা তাঁদের স্ল্যাব অনুযায়ী মূলধনী লাভ (ক্যাপিটাল গেইনস)-এর উপর কর দেন। বিনিয়োগ ধরে রাখার সময়কাল ৩ বছরের কম হলে এটি প্রযোজ্য হয়। তিন বছরের বেশি সময় ধরে বিনিয়োগ থাকলে সূচক সুবিধা ‘ইনডেক্সেশন’ ছাড়া ২০ শতাংশ কর দিতে হয়। আর সূচক সুবিধা নিলে ১০ শতাংশ কর আরোপ হয়। কিন্তু নতুন অর্থ বিল অনুযায়ী, ঋণ তহবিলে বিনিয়োগ, এখন থেকে সরাসরি স্বল্পমেয়াদি মূলধনী লাভ হিসাবে বিবেচিত হবে। এ ছাড়াও, প্রস্তাব অনুযায়ী ৩ বছরের বেশি সময় ধরে রাখা ঋণ তহবিলে আর সূচক সুবিধা পাওয়া যাবে না। ফলে চাইলেও করের হার কমানো যাবে না।
প্রসঙ্গত, কোনও সংস্থা বা ব্যাঙ্কের মিউচুয়াল ফান্ড কেনা হলে সেই টাকা সংস্থা সরকারি, বেসরকারি ক্ষেত্রে শেয়ারে বিনিয়োগ করে। তা থেকে যে মুনাফা আসে তার লভ্যাংশ গ্রাহকদের দেয়। চার রকমের মিউচুয়াল ফান্ড হয়। ইকুইটি ফান্ড, ডেট ফান্ড, হাইব্রিড ইক্যুইটি ফান্ড এবং হাইব্রিড ডেট ফান্ড। এখন বদল আসছে ঋণ তহবিলে (ডেট ফান্ড)। এই ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগ করলে এখনকার মতো দীর্ঘমেয়াদি করছাড়ের সুবিধা পাওয়া যাবে না। এখন তা সাধারণ ব্যাঙ্কে টাকা গচ্ছিত রাখার সমান হয়ে যাবে আগামী ১ এপ্রিল থেকে।
শেয়ারের দামের ওঠানামার উপরে নির্ভরশীল মিউচুয়াল ফান্ডের থেকে ডেট ফান্ডকেই বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করেন অনেকে। কারণ, আয়করের সুবিধা ছাড়াও এই ধরনের ফান্ডে নিরাপত্তাও তুলনায় বেশি। লোকসানের ভয় থাকেই না। এখন এই ধরনের ফান্ডে কেউ তিন বছরের বেশি সময়ের জন্য বিনিয়োগ করলে দীর্ঘমেয়াদি কর ছাড়ার সুবিধা মেলে। যদি কেউ দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি ফান্ড রাখার পরে তা বিক্রি করেন তবে বিনিয়োগ থেকে পাওয়া মুনাফার উপরে ২০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। তবে ফান্ড যদি অল্প সময়ের জন্য হয় সে ক্ষেত্রে গ্রাহক কর কাঠামোর যে স্তরে রয়েছেন সেই হারেই আয়কর দিতে হয়। তবে মুদ্রাস্ফীতির হিসাব কার্যকর হলে করের পরিমাণ কমে ১০ শতাংশ হতে পারে। সেটাকেই সূচক সুবিধা বলে।
এখন মধ্যবিত্তরাও অনেকেই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ পছন্দ করেন। নতুন প্রজন্ম ইকুইটি ফান্ডের উপরে বেশি নির্ভরশীল হলেও একটা বড় অংশের বিনিয়োগকারী ডেট ফান্ড কেনেন। প্রথমত, এতে আর্থিক ঝুঁকি কম। অনেকেই তাই একে ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানতের (ফিক্সড ডিপোজিট) মতো মনে করেন। দ্বিতীয়ত, কম হোক বা বেশি, এই ফান্ড থেকে মুনাফা মিলবেই। ইকুইটি বন্ডের ক্ষেত্রে যেমন বিনিয়োগের মোট টাকা মেলার কোনও নিশ্চয়তা থাকে না। তৃতীয়ত, ডেট ফান্ড থেকে আয়করে বড় সুবিধা মেলে। স্বল্পমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে আয়করে কোনও রকম সুবিধাই মেলে না।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এখন যে বদল আনলেন তাতে কর বাবদ সরকারের আয় যেমন বাড়তে পারে তেমনই কর ছাড়ও কমবে। সেই সঙ্গে, ইকুইটি বন্ডের উপরে নির্ভরতা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। অনেকে এমনটাও ভাবছেন যে, এর ফলে ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানতের দিকে আরও বেশি করে সেই সব মানুষেরা ঝুঁকবেন যাঁরা খুব বেশি ঝুঁকি না নিয়ে নিশ্চিত মুনাফা পছন্দ করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই যাঁরা ডেট ফান্ডে বিনিয়োগ করে রেখেছেন তাঁদের কোনও চিন্তার কারণ নেই। কারণ, কেন্দ্র যে সংশোধনী এনেছে তাতে ২০২৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে যাঁরা বিনিয়োগ করবেন তাঁরাই কেবল নতুন নিয়মের আওতায় আসবেন।