নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত অয়ন শীলের বাড়ি এবং সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে ওএমআর শিট এবং অ্যাডমিট কার্ড-সহ যে একাধিক নথি উদ্ধার হয়েছিল তার মধ্যে রয়েছে আদালতের স্কুল-সহ বিভিন্ন মামলা সংক্রান্ত একাধিক নথিও। যার মধ্যে রয়েছে ২০২১ সালে কলকাতা হাই কোর্টের কিছু মামলার নথিও। তার মধ্যে কিছু নথিতে লেখা ‘ডব্লুপিএ’ অর্থাৎ, রিট পিটিশন। তার মধ্যে কোনওটি ৭৬ পাতার, তো কোনওটি আবার ১৪৩ পাতার। এমনটাই জানা গিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রে। সেই নথিগুলি কোন মামলার, তা ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন ইডি আধিকারিকরা। যদিও এই নথিগুলি কোন মামলার, তা নিয়ে ইডির তরফে কিছু জানানো হয়নি।
সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তে নেমে বলাগড়ের বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। এর পর গ্রেফতার করা হয় শান্তনুর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অয়নকেও। গত রবিবার প্রায় ৩৭ ঘণ্টা অয়নের চুঁচুড়ার বাড়ি এবং সল্টলেকের অফিসে টানা তল্লাশির পর তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকে চাকরির পরীক্ষার একাধিক উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট এবং তার প্রতিলিপি পাওয়া গিয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু অ্যাডমিট কার্ড এবং অন্যান্য নথিও। ইডি সূত্রে খবর, অয়নের সল্টলেকের অফিস থেকে পাওয়া নথিগুলির মধ্যেই এই মামলা সংক্রান্ত নথিগুলি ছিল। এই নথি কোনও সাধারণ মানুষের কাছে থাকতে পারে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
অয়নের নাম সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জড়িয়েছে। তাই তাঁর কাছে এই নথি উদ্ধার বিশেষ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, এই নথি কি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনও মামলার নথি?
নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে ইডি অভিযোগ তুলেছিল, তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুব নেতা শিক্ষকের চাকরি দেবেন বলে চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা নিয়েছিলেন। আবার মামলা করে সেই চাকরি বাঁচানোর জন্যও টাকা নিয়েছিলেন। ইডি আদালতকে জানিয়েছিল, অন্তত ১২০০ প্রার্থী কুন্তলের শরণাপন্ন হয়েছিলেন নিজেদের চাকরি বাঁচানোর জন্য। আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছিল, নিয়োগ দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর স্কুলের চাকরির পরীক্ষার্থীদের হয়ে মামলা রুজু করার জন্যও প্রায় আড়াই কোটি টাকা তুলেছিলেন কুন্তল।
ঘটনাচক্রে, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত শান্তনু এবং কুন্তল একে অপরের পরিচিত। ইডি সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের সময় শান্তনু জানিয়েছেন যে, নিয়োগ সংক্রান্ত সব কিছু সামলাতেন কুন্তল। পাশাপাশি, ইডির হাতে সদ্য গ্রেফতার হওয়া অয়নের সঙ্গেও শান্তনুর ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল বলে ইডি দাবি করেছে। সে ক্ষেত্রে অয়ন এবং কুন্তলের মধ্যে কোনও যোগ ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সে ক্ষেত্রে চাকরি বাঁচানোর নাম করে টাকা নিয়ে কুন্তল যে মামলা করবেন বলে চাকরিচ্যুতদের কাছে দাবি করেছিলেন, অয়নের কাছ থেকে পাওয়া মামলার নথির সঙ্গে কি তার কোনও যোগ রয়েছে? উঠছে সে প্রশ্নও।