তার তো এখন আনন্দ করার বয়স। বন্ধুবান্ধব, ঘোরাফেরা, সাজগোজ করার বয়স। নিজেকে নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকার বয়স। তার বয়সি আর পাঁচটা ছেলেমেয়ে বেশিরভাগই এমনই করে বলেই দেখে সকলে। কিন্তু সে আলাদ। অনেকটা আলাদা। মাত্র আট বছর বয়স থেকে সে দূষণ জর্জরিত পৃথিবীর কথা ভেবে অবসন্ন। পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়া রুখতে কেন কেউ কিছু করছে না, এই প্রশ্ন নিয়ে সে ১২ বছর বয়সেই পৌঁছে গিয়েছিল পার্লামেন্টে। সে ১৬ বছর বয়সে তাবড় রাষ্ট্রনেতাদের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে “আমাদের শৈশব ধ্বংস করার আস্পর্ধা তোমাদের কী করে হয়?”
এ হেন অন্য রকম মেয়ের কীর্তিকলাপ যে সকলের চোখে দৃষ্টিনন্দন ঠেকবে না, তা বলাই বাহুল্য। মাত্র ১৬ বছর বয়সের এই সচেতনতার সঙ্গে বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষই তো পরিচিত নন।
পরিবেশ বাঁচানো, জলবায়ু পরিবর্তন রোখার বার্তা নিয়ে বিশ্বের আনাচকানাচে পৌঁছে যাচ্ছে সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ। তার অনুপ্রেরণায় বিশ্ব জুড়ে কয়েকশো শহরে পথে নামছে লক্ষাধিক কিশোর-কিশোরী। নানা স্তরে দাবি উঠেছে জলবায়ু পরিবর্তন রোখার। তাই এ সবের জেরে বিশ্বখ্যাত হয়ে গেলেও গ্রেটা থুনবার্গকে আক্রমণ করার মানুষেরও অভাব নেই। আর তাদের নিরন্তর আক্রমণ নিয়েই ভারী বিরক্ত গ্রেটা।
গ্রেটার অভিযোগ, তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি চর্চা হচ্ছে। তাতেই রেগে গিয়েছে সে। এবং এই রাগের জেরে টুইট করে সে উগরে দিয়েছে ক্ষোভ।
১৬ বছরের মেয়েটি টুইটারে লিখেছে, “নিন্দুকেরা ইদানিং খুবই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আমার পিছনে লেগে পড়েছে। আমার কাজ নিয়ে নয়, আমার চেহারা, আমার জামাকাপড়, আমার আচার-আচরণ এ সব নিয়েই আলোচনা চলছে বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ নিয়ে কোনও কথা নেই।”
গ্রেটার মতে, আসল বিষয়টি থেকে নজর ঘোরাতেই গ্রেটাকে নিয়ে এমন ঠাট্টা, বিদ্রূপ চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে এ সবে তার কিছু যায়-আসে না বলেই দাবি তার। ষোড়শী কিশোরী পৃথিবীর জন্য লড়াই জারি রেখেছে। গত শুক্রবারই সে কানাডার মন্ট্রিল শহরে কার্বন ব্যবহার কমানোর দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়েছিল। ওই দিনই কলকাতাতেও নেমেছিল জলবায়ু ধর্মঘটের মিছিল।
তবে সচেতন নেটিজেনরা বলেন, কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে এসব অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা খুব অস্বাভাবিক নয়। কোথাও কেউ ছক ভেঙে অন্য রকম কিছু করতে চাইলেই তাকে নানা সময়ে ব্যক্তিগত আক্রমণের মুখে পড়তে হয়, এ ধারা চিরন্তন। তার ওপরে গ্রেটা নাবালিকা। অপ্রাপ্তবয়স্কা। তার কর্মকাণ্ড অনেকের চোখেই ভুয়ো ঠেকতে পারে অনভ্যাসের কারণে।
এ সবের মধ্যেও পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিয়ে সে ইতিমধ্যেই বড়দের বেশ চাপে ফেলে দিয়েছে। এমনকী নোবেল শান্তি পুরস্কারের দৌড়েও অনেকটা এগিয়ে। এই বয়সেই এমন প্রভাব, অনেককেই বিস্মিত করেছে তাই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাঁকে কটাক্ষ করেছেন অনলাইনে। রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে সামনাসামনি হলেও অবশ্য গ্রেটার সঙ্গে বাক্যবিনিময় করেননি তিনি। তার পরেও তাকে নিয়ে অত বড় রাষ্ট্রনেতার ট্রোলিং শুনে কিশোরী গ্রেটা শুধুই হেসেছে আর বলেছে, “জানতাম, উনি আমাকে নিয়ে কিছু বলবেন।”
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্রে দারুণ সব ইতিবাচক প্রতিবেদন লেখা হচ্ছে পরিবেশ সচেতনের লড়াইয়ে সামিল সুইডিশ কিশোরীকে নিয়ে। সে সব অবশ্য জানে গ্রেটা নিজেও। কিন্তু তার পরেও তার দাবি, পরিবেশ ও জলবায়ু সংক্রান্ত তার আসল যে সচেতনতার বার্তা, সে দিকে ফোকাস কমে যাচ্ছে মানুষের। তার ব্যক্তিজীবন নিয়ে মানুষ বেশি উৎসাহী হয়ে পড়ছে।
রাগের পাশাপাশি হতাশার স্বরও উঠে এসেছে গ্রেটার টুইটে। তার মনে হচ্ছে, তার সচেতনতার বার্তা সর্বত্র ঠিক ভাবে পৌঁছচ্ছে না, সে জন্যই মানুষ এত উদাসীন। নেট-দুনিয়া বলছে, যদি সত্যিই এমনটা হয়, কিশোরী গ্রেটার এত লড়াই, এত কঠিন পদক্ষেপ– সবই জলে যায়, তবে তা শুধু গ্রেটার পক্ষে নয়, সারা বিশ্বের পক্ষেই হতাশাজনক।