কিডনি বেচবেন?
দরদাম করে আপনার কিডনির দাম উঠতে পারে ৬-৭ কোটি টাকা। অথবা তারও বেশি।
কিডনি বেচতে (kidney trafficking) হলে কোথায় যোগাযোগ করতে হবে তাও লেখা আছে স্পষ্ট করে। আর যে সে জায়গা নয়। একটু সার্চ করলেই দেখবেন, হয় ভারতেরই নামীদামি কোনও হাসপাতালের নাম অথবা ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপানের কোনও কিডনি সেলিং অর্গানাইজেশনের নাম আপনাকে অবিশ্বাস করতেই দেবে না।
সেই ফাঁদে যদি পা দেন একবার, তাহলেই বিপদ। কখন যে সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন, তা ধরতেই পারবেন না। ইন্টারনেট জুড়ে এখন এইসব ভুয়ো চক্রের হাতছানি। অঙ্গ পাচারের (Organ Trafficking) মতো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা প্রলোভনের ফাঁদ পেতে বসেছে। তারা জাল বিছিয়েছে এ দেশেও। কখনও গ্রাহককে কোটি কোটি টাকার লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে টাকা লুঠছে, আবার কখনও অসহায়তার সুযোগ নিয়ে অঙ্গ পাচারের চেষ্টা করছে।
অর্গ্যান ট্রাফিকিং (organ traffickingI) খুব বড় অপরাধ। দেশের নানা জায়গায় বহুবার কিডনি পাচার চক্রের পর্দা ফাঁস করেছেন তদন্তকারীরা। আমাদের রাজ্যে এমনকি কলকাতাতেও এর আগে এমন পাচারচক্রের খোঁজ মিলেছিল। অঙ্গ পাচারকে কেন্দ্র করে কীভাবে বিভিন্ন প্রতারণা চক্র মাথা তুলছে এবং কীভাবে তা সাইবার অপরাধের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে সে নিয়ে সতর্ক করছেন সায়নী বসু। সায়নী ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্ট করেছেন এই বিষয়টা নিয়ে। সেখানে তিনি বলেছেন, কীভাবে অঙ্গ বিক্রির (Organ Selling) নাম করে লোক ঠকানো হচ্ছে। সায়নী বলছেন, ইন্টারনেটে যদি সার্চ করেন ‘How to sell my kidney?’ তাহলেই একাধিক সংস্থার নাম, বিজ্ঞাপন খুলে যাবে। সেখানে আপনাকে কোটি কোটি টাকার লোভ দেখানো হবে। কীভাবে আপনি কিডনি বেচবেন, কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, আপনার লাভ কতটা সেসব এমনভাবে লেখা থাকবে যা আপনাকে ফাঁদে ফেলতে বাধ্য।
এইসব বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়বেন না
বিষয়টা নিজে থেকে যাচাই করার জন্য সায়নী এমন সার্চ করেন এবং ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন সংস্থার নাম ও নম্বর জোগাড় করে নিজেই যোগাযোগ করেন। সায়নী বলছেন, কিছু নম্বর আছে যার অস্তিত্ব নেই, বাকিগুলোতে হোয়াটসঅ্যাপ করলে সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর পাওয়া যাচ্ছে। সায়নী এমন একটি নম্বরে যোগাযোগ করেন যারা নিজেদের আমেরিকার ‘ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন’ (NKF) -এর অধীনস্থ বলে দাবি করেছে। যিনি মেসেজের উত্তর দিয়েছেন তিনি আবার নিজেকে চেন্নাইয়ের ‘Kidney donor specialist Apollo hospital’ এর কোনও অধিকর্তা বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, কিডনি বেচতে হলে এনকেএফ-এ রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। সেখানে নাম নথিভুক্ত করার সময় টাকা দিতে হবে। একটি ইমেল আইডিও দেওয়া হয় সায়নীকে বলা হয়, ওই আইডিতে মেল করে নাম রেজিস্ট্রেশন করালে ডোনার কার্ড দেওয়া হবে। তখন কিডনি দান করতে পারবেন সায়নী। এই জবাব পেয়ে সায়নী নিজে এনকেএফের সাইটে গিয়ে সার্চ করেন। দেখেন যে, ওই ব্যক্তির দেওয়া ইমেল আইডির সঙ্গে এনকেএফের অফিসিয়াল ইমেল আইডির কোনও মিল নেই। সবটাই ভুয়ো।
আসল কথাটা হল জীবিত দাতা কখনও কিডনি বিক্রি করতে পারেন না। আর কিডনি বিক্রি করা আইনত অপরাধ। সেখানে খুল্লমখুল্লা কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে আছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। গুগল সার্চ করলেই সেইসব বিজ্ঞাপন খুলে যাবে। গত বছরেরই কথা, কিডনি বিক্রি করতে গিয়ে সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন এক নার্সিং পড়ুয়া। কিডনি বিক্রি করে তিন কোটি টাকা পাওয়ার আশায় ছিলেন ওই তরুণী। কিন্তু প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে ১৬ লক্ষ টাকা খুইয়েছিলেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছিল হায়দরাবাদে। পুলিশকে তরুণী বলেছিলেন, কিডনি বিক্রির বিনিময়ে ওই তরুণীকে ৩ কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। তাঁকে জানানো হয় অস্ত্রোপচারের আগে তাঁকে পুরো টাকার ৫০ শতাংশ দেওয়া হবে। বাকি টাকা দেওয়া হবে অস্ত্রোপচারের পর। কিডনি বিক্রির জন্য কর ও পুলিশের যাচাই প্রক্রিয়ার খরচ বাবদ তাঁর কাছ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়। সেই টাকা পাঠিয়েই ফাঁদে পড়ে যান তরুণী।
শিশু ও নারীপাচার চক্র বিশ্ব জুড়ে সক্রিয়। ভারতের মতো উন্নয়নশীল কিন্তু আসলে দরিদ্রের দেশে এমন অনেক পাচারচক্র নিদারুণভাবে সাম্রাজ্য বিস্তার করছে। কিডনি-পাচার চক্র, এমনকী, মৃতদেহের বেআইনি ব্যবসাও প্রবল আকারে চলে। পুলিশ যতই দেশ জুড়ে অভিযান চালাক না কেন, ইন্টারনেট থেকে কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন সরেনি। সেখানে যে সব ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে, তার মালিকরাও সক্রিয়। ইন্টারনেটে ক্রেতারও ছড়াছড়ি। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনের মতো নানা দেশে তাঁরা ছড়িয়ে রয়েছেন। ‘রাতারাতি অর্থকষ্ট মিটিয়ে ফেলার জন্য কিডনি বিক্রির বিকল্প হয় না’— এমন কথা লিখে কিডনি বিক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টাও চলছে। তাতে সাড়া দিয়ে প্রতারিতও হচ্ছেন অনেকে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে বেআইনি ব্যবসা কবে বন্ধ হবে তার সদুত্তর নেই পুলিশ-প্রশাসনের কাছেও।