দু’বছরের এক শিশুকন্যার মৃত্যুতে খুনের অভিযোগ দায়ের হল তার বাবার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে লালবাজার। শিশুটির দেহের ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও শ্বাসরোধ করে খুনের প্রমাণ মিলেছে বলে লালবাজারের দাবি। গত শনিবার ওই শিশুকন্যার মৃত্যুর পরে তার বাবার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন শিশুটির মা। ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত। তার খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সোমবার রাত পর্যন্ত তার কোনও সন্ধান মেলেনি বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এন্টালি থানা এলাকার কনভেন্ট রোডে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত শিশুকন্যাটি। দীর্ঘদিন ধরে সে জন্ডিসে ভুগছিল। পুলিশের কাছে অভিযোগে শিশুটির মা জানিয়েছেন, শনিবার বেলার দিকে অসুস্থ মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যদের কাছে রেখে কাজে বেরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ সময় পরেও তিনি বাড়ি না ফেরায় বাবার কাছে অসুস্থ শিশুটিকে রেখে বাড়ির বাকি সদস্যেরাও কাজে চলে যান। এ দিকে, কাজ শেষ করে দুপুরের দিকে বাড়ি ফেরেন শিশুটির মা। অভিযোগ, সেই সময়ে বাড়িতে কেউ ছিলেন না। ঘরে ঢুকে শিশুটিকে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। এর পরেই মহিলা দ্রুত প্রতিবেশীদের খবর দেন এবং স্থানীয়দের চেষ্টায় শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে জানান। এর পরে শিশুটিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে জানিয়ে দেন।
প্রাথমিক ভাবে জন্ডিসেই শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করেছিলেন স্থানীয়েরা। এমনকি, স্থানীয়দের প্রশ্ন করলে তাঁরা জানান, শিশুটির বাবা, বছর উনিশের ওই যুবক ঘরে তাকে একা রেখে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্বামীর দিকেই সন্দেহ যায় শিশুকন্যার মায়ের। শিশু সুরক্ষা কমিশনে খবর গেলে তাদের তরফে লালবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এর পরেই গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করার পাশাপাশি, দেহটি এন আর এসে এনে ময়না তদন্ত করা হয়। তার প্রাথমিক রিপোর্টেই শ্বাসরোধ করে খুনের প্রমাণ মেলে। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘শিশু সুরক্ষা কমিশনের তরফে প্রথমে ছ’মাস বয়সি একটি শিশুর মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, শিশুটির বয়স দু’বছর। পরে তদন্তে শ্বাসরোধ করে খুনের বিষয়টি সামনে আসে। খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।’’
অভিযুক্ত যুবক একটি জুতোর কারখানায় কাজ করে। একমাত্র শিশুকন্যা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় এ নিয়ে সংসারে অশান্তি হত বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। এর জেরেই খুন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। তবে অন্য কোনও কারণ আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে লালবাজার। ইতিমধ্যেই অভিযুক্তের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।