আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার জন্য “নাটু-নাটু” নামের একটা থার্ডক্লাস গানকে অস্কার পুরস্কারে সম্মানিত করে দিলো।।
আপাতত “নাটু-নাটু” নাটক করে,, দুই বাহু প্রসারিত করে,, উরু দুলিয়ে নাচতে থাকুন।। এর অন্দরে লুকিয়ে থাকা গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বুঝতে কিছুদিন সময় লেগে যাবে।। আপাতত বুঝতে পারবেন না।।
জীবনের বেসিক শিক্ষা হলো — “যখনই কেউ তোমার প্রশংসা করবে,, আগে দেখে নিও প্রশংসাকারী মানুষটি কোন ক্যাটাগরিতে রয়েছে।। প্রশংসার পিছনে গোপন কোনো অভিসন্ধি লুকিয়ে রয়েছে কিনা !! নিঃস্বার্থ এবং নিঃশর্ত কোনো প্রসংশা হলে অবশ্যই গ্রহণ করে নিও।।।অন্যথায় প্রশংসাকারী হতে যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে চলবে।। সকলের প্রশংসায় গর্বিত হয়ে পড়লে চলবে না।।”
দ্বিতীয় বেসিক শিক্ষাটি হলো – “প্রশংসা পাওয়ার পর সর্বপ্রথম আত্ম-বিশ্লেষণ করে দেখে নিও,, সত্যিই তুমি প্রশংসার যোগ্য কিনা!! যদি দেখো প্রশংসনীয় কাজ না করেও কেউ তোমার প্রশংসা করছে,, তাহলে ভেবে নিও সেই প্রশংসার অন্দরে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে রয়েছে।। লুকিয়ে রয়েছে মারাত্মক কোনো চক্রান্ত,, যে চক্রান্ত কোনো এক সময় তোমাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।।”
মোদ্দা কথা হলে – উত্তম কার্য্য সর্বদা প্রশংসিত হবে,, অধম কার্য্য কখনো প্রশংসিত হতে পারে না।। যখন দেখবে তোমার মন্দ কাজগুলো কেউ সমর্থন করে প্রশংসার বন্যায় প্লাবিত করে দিচ্ছে– তৎক্ষণাৎ তাকে বন্ধু না ভেবে শত্রু ভেবে নিও।। সেই বাল্যকাল হতে এটাই বিশ্বাস করে এসেছি,, এখনো করি,, ভবিষ্যতে এটাই করে যাবো।।
কদিন আগে দেখলাম “সমাধি” নামক সাধারণ মানের একটি পুস্তক বুকার পেয়ে গেলো।। এই সমস্ত ঘটনাক্রমের মাধ্যমে অতীত দিনের একটা কথা মাথায় এলো – ভারতের মাটিতে কসমেটিক্সের বৃহত্তম বাজার ধরার অছিলায় কোনো এক সময় সুস্মিতা সেনকে মিস ইউনিভার্স হিসাবে চয়ন করা হয়েছিল।।
ঘটনা ছিলো নব্বইয়ের দশকের,, মনে করে দেখুন – সুস্মিতা খেতাব জয়ের পরে পরেই শহর হতে গ্রাম,, অলিতে-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো বিউটি পার্লার গজিয়ে উঠলো।। প্রত্যেকটি সুন্দরী ভারতীয় নারী,, নিজের সৌন্দর্য্যের ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়ে,, সৌন্দর্য্যের পরিভাষা একেবারে চেঞ্জ হয়ে গেলো।।
মুলতানি মাটি তথা দেশের আয়ুর্বেদিক উপাদান ব্যাবহারকারী ন্যাচারাল সুন্দরী কারো চোখে ভালো লাগতো না।। পছন্দের মোড় ঘুরে গেলো — সবাই ফেসিয়াল,, আই-ব্রো,, পেডিকিউর,, ম্যানিকিউর,, ওয়াক্সিং,, ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করে,, মুখে 500 হতে 700 গ্রাম ছাইপাশ মেখে নিজেকে সুন্দরী মনে করতে থাকে।। আমাদের সমাজে সুন্দরীর সংজ্ঞা আমুল বদলে গেলো।।
বিজ্ঞাপন আর পুঁজিবাদের প্রথম কাজ হলো — সুচতুর ভাবে আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া,, যে,, এতদিন পর্যন্ত আমরা যে ধরনের জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে এসেছি,, সেটা যথাযথ জীবন ছিলো না।। আমাদের মাথায় অত্যন্ত চালাকির সঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া যে – সরকারি স্কুল এবং হসপিটাল মানেই একেবারে থার্ডক্লাস পরিষেবা।। তুলনামূলক ভাবে প্রাইভেট সংস্থান গুলো অনেক বেটার।।
স্বভাবতই আমরা সরকারের উপর ভরসা রাখতে পারি না,, আমরা ভীষণভাবে বেসরকারি শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি।। সরকার এভাবে নিজেকে দায়মুক্ত করে তোলে,, কেবলমাত্র একটা রাজ্যে 8 থেকে 9 হাজার স্কুল বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়ার পরেও,, আমরা প্রতিবাদ করতে পারি না।।
ফ্যাসিস্ট শক্তি সর্বপ্রথম মানুষকে প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ-বিমুখ করে গড়ে তুলতে চায়।। এই একটি কাজ যথাযথভাবে করতে পারলেই কেল্লা ফতে,, মানুষ ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে কোনো কথা বলার সাহস দেখাতে পারে না।।
বর্তমান সময়ে আমাদের সরকার সর্বপ্রথম নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে তুলে,, তারপর সামান্য দান-দক্ষিণার মাধ্যমে সমস্ত ক্রেডিট আদায় করে নেয়।। আর নিম্নবিত্ত মানুষগুলো সরকারের সামান্যতম সাহায্যকে নিজেদের সৌভাগ্য হিসাবে গ্রহণ করে নেয়।। তারা সরকার অথবা সিষ্টেমের বিরুদ্ধে মুখ খোলার কথা বেমালুম ভুলে যায়।।
অন্যদিকে,, মধ্যবিত্ত মানুষের অবস্থা আরো মারাত্মক।। তারা নিয়মিত বিউটি-পার্লার,, প্রসাধন,, সামান্য লাক্জরি জীবনযাপন আর হাউজিং কমপ্লেক্সে একটা 2-BHK ফ্ল্যাটের স্বপ্ন দেখে গোটা জীবন অতিবাহিত করে যায়।।
আনুসাঙ্গিক অনেক আলোচনা হলো,, এবার ফিরে আসা যাক -“নাটু-নাটু”-র কথায়।। নাটো নাটোকে অরিজিনালিটির জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে।। তবে,, গানটির মধ্যে কি ধরনের অরিজিনাল মেটিরিয়াল রয়েছে সেটা বুঝে উঠতে পারলাম না।। হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা আমাদের ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের মধ্যে অরিজিনাল কিছু খুঁজে পাওয়া গেলো না।। শত শত বছর ধরে বহুল প্রচলিত মিষ্টি-মধুর ভারতীয় সঙ্গীতের মধ্যে কোনো অরিজিনালিটির নামগন্ধ পাওয়া গেলো না।। আথচ,, অরিজিনালিটি খুঁজে পাওয়া গেলো “নাটো-নাটো”- মধ্যে।।
কারণ,, ওরা জানে রাষ্ট্রবাদের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা একদল মানুষকে মাতিয়ে রাখতে হবে।। ওরা সেটাই করে চলেছে।। আর একদল পাগলা গাধার নাচ,, গোটা পৃথিবীর মানুষ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে।।
শুনুন,, যে কোনো দেশ এবং সমাজের পতনের মুলে রয়েছে,, সে দেশের নাগরিক সমাজের চিন্তা এবং চেতনার পতন।। পুঁজিবাদী আমেরিকা সেটা দারুণ ভাবে করে চলেছে।।
তবে,, হাতি নিয়ে যে ডকুমেন্টারিত ফিল্মটি পুরস্কার পেয়েছে,, সেটা নিয়ে কোনোরকম প্রশ্নের অবকাশ থাকতে পারে না।। অত্যন্ত দারুণ এবং হাই-গ্রেডের একটি ডকুমেন্টারি,, যেটা সত্যিই অসাধারণ,, কখনো ভোলা যাবে না।।
কিন্তু,, “নাটু-নাটু” পুরস্কৃত করার মধ্য দিয়ে,, ভারতীয় সঙ্গীতের কফিনে যে পেরেকটি মেরে দেওয়া হলো,, সেটা থেকে সহজে বেরিয়ে আসা যাবে না।।
ঠিক,, যেভাবে সুস্মিতা সেনকে মিস ইউনিভার্স বানিয়ে প্রসাধনীর উপর আমাদের নির্ভরশীলতা অত্যাধিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে,, আমাদের ন্যাচারাল বিউটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে,, সেভাবেই আরো একটা নতুন পদক্ষেপ নিলো আমেরিকা।।
হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা উচ্চমানের ভারতীয় সঙ্গীত,, বিশ্ব দরবারে সমাদৃত হবে না।। সমাদৃত হবে – নাটো-নাটো।। সমগ্র বিশ্বের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মনে করবে – ভারতীয় সঙ্গীত মানেই – নাটু-নাটু!