‘রাস্তাশ্রী’ প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের উদ্দেশে তোপ দাগলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, এই প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দের অধিকাংশই ব্যয় করা হচ্ছে কেবল প্রচারের জন্য।
অভিযোগের সপক্ষে রবিবার একটি টুইট করে পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দফতরের একটি নথি তুলে ধরেন শুভেন্দু। ওই নথিতে ‘রাস্তাশ্রী’ প্রকল্প নিয়ে কী ভাবে এলাকায় প্রচার করতে হবে, তার নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। এই নথি তুলে ধরেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করে তিনি লেখেন, “খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি।” প্রকল্পে শুধু বিজ্ঞাপনের জন্য কত খরচ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু। রাজ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই প্রকল্পকে প্রচারের হাতিয়ার করে তোলা হচ্ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। শুভেন্দুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “প্রতি বছরই কোনও না কোনও ভোট থাকে। তাই বলে কি সরকারি কাজ বন্ধ থাকবে? আসলে বিজেপি ভাল কিছু দেখতে পারে না।”
শুভেন্দু যে নথি প্রকাশ্যে এনে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন, সেই নথিতে বলা হয়েছে, রাস্তাশ্রী প্রকল্পে কতটা রাস্তা তৈরি হচ্ছে, তা মাইকিং করে, হোর্ডিং দিয়ে, এমনকি সমাজমাধ্যমে প্রচার করে জনতাকে জানানোর উদ্যোগী হতে হবে। তবে এই প্রচারের জন্য কতটা অর্থ ব্যয় হবে, তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু লিখেছেন, “একটা দেউলিয়া হয়ে যাওয়া সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে জনগণের টাকা নয়ছয় করছে।” অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ‘ব্যর্থতা’ এবং সরকারি কর্মচারীদের ‘প্রাপ্য’ ডিএ না দেওয়া নিয়েও তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।
ফেব্রুয়ারি মাসের বাজেট অধিবেশনে নতুন ‘রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সব ঠিকঠাক চললে মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হয়ে যেতে পারে মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত এই প্রকল্প। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ১৫ মার্চের সময় চাওয়া হয়েছে এই প্রকল্পের উদ্বোধনের জন্য। আগামী ১৩ মার্চ শেষ হয়ে যাবে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব। তার পরেই এই প্রকল্পের সূচনা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক মহলের খবর, ১৫ মার্চ ‘রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পের সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই দিনটিকেই কর্মসূচি সূচনার দিন ধরে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে সর্বস্তরে। রাজ্যের পূর্ত দফতর এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকবে।
বাজেট অধিবেশনে জানানো হয়েছিল নতুন রাস্তাশ্রী প্রকল্পের জন্য বারো হাজার কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেবে রাজ্য সরকার। রাস্তাশ্রী প্রকল্পের জন্য তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য। বাজেট পুস্তিকায় সে কথা উল্লেখ করেছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পে যেমন নতুন নতুন রাস্তা তৈরি হবে, তেমনই পুরনো রাস্তার সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। এই প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে গ্রামীণ রাস্তা। যে সব রাস্তা এখনও মোরাম দিয়ে তৈরি রয়েছে সেই সব রাস্তা পাকা করার কথা নতুন এই প্রকল্পে তৈরি করা হবে। তবে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, আগামী মে মাসের পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখেই নতুন এই প্রকল্প চালু করছে সরকার।