অমিত সাহারও চাকরি গেল, তৃণমূলের এই কাউন্সিলর মাত্র ৭ প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন

গ্রুপ সি (Group C case) নিয়োগে বড়সড় দুর্নীতির কথা আদালতে আগেই জানিয়েছিল সিবিআই। তদন্তে উঠে এসেছিল উত্তরপত্র বা ওএমআর শিটে কারচুপি কেলেঙ্কারি। স্কুল সার্ভিস কমিশনও আদালতে স্বীকার করে নেয় এই গরমিলের অভিযোগ। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta high court) বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, গ্রুপ সি-র ৮৪২ জনের চাকরি বাতিল করতে হবে।

এঁদের সবারই ওএমআর শিটে গন্ডগোল ছিল। নম্বর বাড়িয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ ছিল। সেই তালিকা কমিশন অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। সেখানেই অন্যান্যদের নামের সঙ্গে জ্বলজ্বল অমিত সাহার (Amit Saha) নাম! সেই নাম সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গেছে রাজ্য রাজনীতিকে।

কে এই অমিত কুমার সাহা?

কমিশন যে ৭৮৫ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে তার ৩৭ নম্বরে রয়েছে এই নাম। তার পাশে লেখা রোল নম্বরও। তালিকাতেই উল্লেখ রয়েছে যে তিনি হটুগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে চাকরি করেন। কিন্তু এই অমিতের অন্য একটি পরিচয়ও আছে। তিনি হলেন ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর (TMC Councilor)!

চমক এখানেই শেষ নয়, বৃহস্পতিবার কমিশন গ্রুপ সি কর্মীদের ওএমআর শিট প্রকাশ করেছিল সেখানে দেখা যাচ্ছে অমিত সাহা উত্তর দিয়েছিল মাত্র ৭টি প্রশ্নের। সেগুলোও ঠিক কী ভুল ছিল তা জানা যায়নি। তবে অমিতের ওএমআর শিট থেকে স্পষ্ট ছিল এই উত্তরপত্রে কারচুপি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার এই খবর চাউর হতেই উত্‍সাহী কিছু মানুষ অমিতের বাড়ির সামনে ভিড় করেন। সাংবাদিকরাও খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। কিন্তু পাওয়া যায়নি ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে। শুক্রবার এই মামলার শুনানি ছিল দুপুরে, কিন্তু সকাল থেকেই অমিতের বাড়ির বাইরে ঝুলছিল বড় তালা। কোথায় গেছেন তিনি? কেউই এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি।

২০১৬ সালের গ্রুপ সি পদে নিয়োগ মামলায় ৩৪৭৭ জনের ওমআরশিট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে ৩১১৫ জনের ওএমআর শিটই বিকৃত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫৭ জনকে কোনও সুপারিশ পত্র ছাড়াই নিয়োগ করা হয়েছে। সেই ৩১১৫ জনের তালিকায় নাম ছিল অমিতের।

চাকরি পেয়েছিলেন হটুগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। এতদিন সেখানেই কাজ করছিলেন অমিত। শুক্রবার সেই স্কুলে দেখা যায় সেখানেও অনুপস্থিত তিনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আশাপূর্ণা হালদারকে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘গতকাল এসেছিল আজ কেন আসেনি জানি না।’ তবে ওএমআর শিট কারচুপি করে অমিতের এই চাকরি প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে তিনি ‘বিচারাধীন’ বিষয় বলে এড়িয়ে গেছেন।

হাইকোর্ট কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে শনিবার বেলা বারোটার মধ্যে ৮৪২ জন গ্রুপ সি কর্মীর সুপারিশপত্র বাতিল করতে। পাশাপাশি দুপুর তিনটের মধ্যে মধ্যশিক্ষা পর্ষদও যেন নিয়োগপত্র বাতিল করে সেই নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। যা দাঁড়াল, শনিবার থেকে আর অমিতকে দেখা যাবে না হাটুগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.