বিশ্বভারতীর ‘অবনমন’ হয়েই চলেছে! অন্যদের উপরে ফের দোষ চাপিয়ে বিবৃতি উপাচার্য বিদ্যুতের

বিশ্বভারতীর ‘অবনমনের’ জন্য ফের অন্যদের দায়ী করলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বুধবার একটি বিবৃতিতে তাঁর দাবি, বিদ্যাস্থান হিসেবে বিশ্বভারতীর ‘অধঃপতন অপ্রতিহত ভাবে’ ঘটেই চলেছে। এর জন্য ‘দায়ী’ বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্যেরা, ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী থেকে শুরু করে বিশ্বভারতীর অংশীদার সবাই। বিশ্বভারতীকে ফের ‘সোনার ডিম’ দেওয়া হাঁসের সঙ্গে তুলনার পাশাপাশি বিবৃতিতে তিনি আক্রমণ করেছেন ‘রাবীন্দ্রিক’ ও আশ্রমিকদেরও। সমালোচকদের দাবি, নিজে এতটুকুও দায়ভার নেবেন না বলেই বারবার এ ভাবে অন্যদের উপরে ‘দোষ’ চাপাচ্ছেন উপাচার্য।

শিক্ষায় বিশ্বভারতীর ক্রম-অবনমন নিয়ে বিভিন্ন মহলে যথেষ্ট সমালোচিত বর্তমান উপাচার্য। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের র‌্যাঙ্কিং (এনআইআরএফ) অনুযায়ী এক দশক আগে যে প্রতিষ্ঠান ১১ নম্বরে ছিল, গত কয়েক বছরে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শুধুই অবনমন ঘটেছে। ২০২০ সালে ৫০ নম্বরে ছিল বিশ্বভারতী। পরের বছর আরও নীচে নেমে হয় ৬৪। ২০২২-এ ৯৮ নম্বরে ঠাঁই হয়েছে বিশ্বভারতীর। ২০২০ সালে র‌্যাঙ্কিং কমে যাওয়ার পরেও খোলা চিঠিতে উপাচার্য দাবি করেছিলেন, ‘‘অবনমনের দায় শুধু কর্তৃপক্ষের নয়। মান ধরে রাখার দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার হেতু হল, বহির্বর্তীদের দৃষ্টিকোণে বিশ্বভারতীর ভাবমূর্তি, প্রাক্তনীদের সহযোগের কার্পণ্য এবং বিশ্বভারতীর গঠনমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের যথাযথ প্রতিবেদন অগোচরে থেকে যাওয়া।” বিশ্বভারতীতে দীর্ঘদিনের ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙতে গিয়ে ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোনিবেশ করতে পারেননি’ বলেও উপাচার্যের দাবি ছিল।

এ দিনের খোলা চিঠির পরে অনেকের প্রশ্ন, এই দু’বছরেও তা হলে ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙতে পারলেন না উপাচার্য! তা হলে তিনি কী করলেন?

এ দিন বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইটে উপাচার্যের এই বার্তালাপ রাখা হয়েছে। উপাচার্য অবশ্য এই বার্তালাপে স্বীকার করে নিয়েছেন যে বিশ্বভারতীর মান নামছে। তিনি লিখেছেন, ‘‘এ রকম একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে যে, অতীতের মতো আর নেই বিশ্বভারতী। ধারণাটা পুরো ভিত্তিহীন নয় কারণ এনআইআরএফ সূচক অনুযায়ী এর স্থান দিন দিন নীচে নেমে গিয়েছে। দু-একটি বিভাগ ছাড়া চাকরির দুনিয়ায় এখানকার ছাত্রদের কর্মসংস্থান বেশ কম হচ্ছে।’’

কেন এই অবস্থা, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ফের হাঁস-প্রসঙ্গ উঠে এসেছে উপাচার্যের কথায়। বিবৃতিতে তাঁর দাবি, “অনেকের কাছে বিশ্বভারতী হল গল্পের সেই সোনার ডিমপাড়া রাজহাঁসের মতো। তাঁরা লাভের কড়ির হিসাব নিয়ে মত্ত। কিন্তু দিন দিন ক্ষীয়মাণ সেই রাজহাঁসের যত্নআত্তি বা পরিচর্যার জন্য তাঁদের কোনও অবদানই পরিলক্ষিত হয় না।’’ আশ্রমিক ও ‘রাবীন্দ্রিকদের’ আক্রমণ করে উপাচার্য অভিযোগ করেছেন, ‘বিশ্বভারতী থেকে শেষ বিন্দু পর্যন্ত ফায়দা নিংড়ে নিয়েছেন অথচ প্রতিদানে প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছুই করেননি’। প্রাক্তন উপাচার্যদেরও দায়ী করেছেন বর্তমান।

এই প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, ‘‘ওঁর এই প্রলাপে আমার কোনও উৎসাহ নেই।’’ বিশ্বভারতীর শিক্ষক সংগঠন ভিবিইউএফএ-র সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘এই অবনমনের জন্য সম্পূর্ণ ভাবে বর্তমান উপাচার্য দায়ী। কারণ, এই একই শিক্ষক-শিক্ষিকা-কর্মী-প্রাক্তনী সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০১৬ সালে এনআইআরএফ র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বভারতী ১১ নম্বর স্থানে ছিল। স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে উনি আসার পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে বিশ্বভারতীর মান তলানিতে এসে ঠিকেছে। নিজের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য আজ উনি অন্যদের দায়ী করছেন।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.