ভাগ্যিস সুভাষ ভৌমিক, সুরজিত সেনগুপ্ত, পিকে ব্যানার্জি, অমল দত্তরা চিরঘুমে চলে গিয়েছেন। একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। বেঁচে থাকলে ফুটবল প্যাশনেট মানুষগুলোকে শনিবার এমন লজ্জার সন্ধের সাক্ষী থাকতে হত! এ কোন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন? এ কেমন ডার্বি? বড্ড অচেনা এই গ্যালারি! এমন এক নিরামিষ ডার্বিতে বড় জোর ৫০০০ হাজার লোক গ্যালারিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেন। আসলে টিকিট বণ্টন নিয়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চাপানউতোর এবং সর্বপোরি দুই দলের পারফরম্যান্সের জন্যই আইএসএল-এর ফিরতি ডার্বি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল অগনিত বঙ্গ ফুটবলপ্রেমী। যদিও এমন মরা ডার্বিতেও ২-০ গোলে জিতল এটিকে মোহনবাগান। আর এই হারের সঙ্গে লাগাতার আটটি ডার্বি হারের লজ্জার রেকর্ড গড়ল ইস্টবেঙ্গল।
এটিকে মোহনবাগান আগেই সুপার সিক্সের ছাড়পত্র জোগাড় করে ফেলেছিল। এদিন জেতার ফলে লিগ তালিকায় তিন নম্বরে উঠে এল জুয়ান ফেরান্দোর ছেলেরা। আইএসএলে ছ’টি ডার্বি ম্যাচই জিতে নিল মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা একবুক হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়লেন আরও একবার।
বাঙালির মর্যাদার ম্যাচের টিকিট বিক্রির এমন বেহাল দশা দেখে প্রশ্ন উঠতে পারে। বাঙালির কাছে কি এই মহা ম্যাচের গুরুত্ব কমে গেল? নাকি ফুটবল থেকেই মুখ ফেরাচ্ছে ক্রীড়াপ্রেমী বাঙালি? সবুজ-মেরুনের থেকে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারির টিকিট বিক্রির হাল বেশি খারাপ।
প্রথমত, এটিকে মোহনবাগান আইএসএলের দ্বিতীয় পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে আগেই। অন্য দিকে ইস্টবেঙ্গলের আর কোনও সম্ভাবনা নেই। তাই হয়তো দুই ক্লাবের নিয়মরক্ষার ম্যাচ আকর্ষণ হারিয়েছে। দ্বিতীয়ত, গত সাতটি বড় ম্যাচে জয় পায়নি লাল-হলুদ শিবির। বার বার হেরে বিরক্ত ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা মুখ ফিরিয়েছেন মাঠ থেকে। মোহনবাগান সমর্থকরাও হয়তো বড় ম্যাচের আগের সেই উন্মাদনা বোধ করতে পারছেন না।
অবশ্য গ্যালারি ফাঁকা থাকার আরও একটি কারণ আছে। সেই দ্বিতীয় কারণ হল, মোহনবাগান সমর্থকদের একাংশ ক্লাবের নাম নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, মোহনবাগানের সামনে থেকে এটিকে শব্দটি সরালে আবার মাঠ ভরাবেন তাঁরা। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের একাংশের ক্ষোভ ক্লাবের কর্তাদের বিরুদ্ধে। লাল-হলুদ সমর্থকদের দাবি, ক্লাব কর্তাদের জন্যই গত কয়েক বছর ধরে ইস্টবেঙ্গল সাফল্য পাচ্ছে না। তাই টিকিট বিক্রি না হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে দু’দলের সমর্থকদের একাংশের এই বিদ্রোহী মনোভাব।
ফাঁকা গ্যালারি ও হতাশ সমর্থকদের গ্লানি লাল-হলুদের খেলাতেও ধরা পড়ল। বোধহয় ম্যাচেও ধরা পড়ল। প্রথমার্ধে দুই দল কয়েকবার গোলের চেষ্টা করলেও, একটা সময় পর্যন্ত কেউই গোলের মুখ খুলতে পারছিল না। তবে ৬৮ মিনিটে এগিয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান। আবার সেই ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ভুল। বাঁকানো কর্নার করেছিলেন পেত্রাতোস। মনবীর সিং ব্যাক হিল গোলের দিকে পাঠান। স্লাভকোর হেড প্রথমে বারে লাগে। ফিরতি বল জালে জড়িয়ে দেন তিনিই। তবে লজ্জার এখানেই শেষ নয়। ৯০ মিনিটে দিমিত্রাসের গোল করে লাল-হলুদের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেন। ফলে এই ডার্বি হারের সঙ্গে টানা আটটি ডার্বি হারের লজ্জার রেকর্ড গড়ল লাল-হলুদ।